:::: MENU ::::
  • slider image 1

    Take my hand, take my whole life too.

  • slider image 2

    I never want to live without you

  • slider image 3

    I am who I am because of you.

বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৬

  • ১১:২৫:০০ AM
ওসব মিথ্যে কথা,
কুকুর বেড়াল মূতলেই(প্রস্রাব)  যে হয়
ব্যাঙের ছাতা!
আরে, ইদানীং ঘরের ভিতর
কোন কুকুরে মূতে দিলো কোন সে ক্ষণে!
ন্যাড়া কুকুর কুকুর হলেও মূতে ঘরের কোণে।
কে রাখে তার খবর!
স্যুট বুট পড়ে থাকা কুকুরগুলো
মূতে ঘরের ভিতর!
দেশে আবার এদের বড়ই কদর,
ব্যাঙের ছাতা তৈরি করে
পায় জামাই আদর।
মিছিল মিটিং সভা গমগম
ব্যাঙাচিদের হয় সেথায় আগমন,
কুকুর গুলো মূতলেও পড়ে কোথা
ব্যাঙাচিদের লম্ফ চলে সেথা।
ভাই-ভাই কুকুর বেড়াল গুলো
বানায় ছাতা ব্যাঙাচিদের জন্য।
কুকুর বেড়াল প্রশস্তিও গায়,
মূতেও হয় ধন্য।
বাঙাচিরা বাহবা দেয় ব্যাঙের ছাতার জন্য
মাশরুমের পুষ্টি শুনে বোকা আমরা হই ধন্য!
ওরে,আমরা যে সব ভূদাই জনগণ
মার খাবো,কর দেব, লাথি গুতা সব খাবো
তবুও বাড়াবো ভূরির ওজন।।
#নীলকান্ত

বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৬

  • ১২:১৭:০০ AM


একটা যান্ত্রিক শরীর চাই আমার।কামহীন,কামনা হীন,বাসনাহীন,
আশাহীন, স্বপ্নবিহীন একটা যান্ত্রিক শরীর ।
যেন,
সিএফসি বাড়লেও শরীরের বরফ না গলে যায়, হিমালয় কিংবা এন্টার্কটিকার জমানো বরফের মত।
কিংবা বরফ গলা কামনার সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে
আঁধারের বুকে জেগে না উঠে শরীরের
ভয়ানক পিপাসু সে দানব।
আমি তেমন একটা যান্ত্রিক শরীর চাই।
আমি একটা যান্ত্রিক শরীর চাই,
যার হৃদয়ে ভালবাসার কোন ঠাই হবেনা।
কোন উষ্ণ কমল স্পর্শেও যার আগ্নেয়গিরি আর
কখনো ভিসুভিয়াস হবেনা।
আমি তেমন একটা যান্ত্রিক শরীর চাই আমার।
আমি রাতের আঁধারকে জড়িয়ে ঘুমোতে চাই,
পৃথিবীর মত।
শরীরের দানবটাকে ভুলিয়ে রাখতে চাই
মাংসের ঊষ্ণতা থেকে।
আমি বাঁচতে চাই মাহাশূন্য হয়ে।।
#নীলকান্ত©

বুধবার, ২০ জুলাই, ২০১৬

  • ১:০১:০০ PM
মেয়েটির নাম "নিশা।"(গল্পঃপার্ট-১)


মেয়েটির সাথে প্রথম পরিচয় ২০০৮/০৯ সালে।তখন ফেসবুক এতটা জনপ্রিয় ছিল না অথবা ফেসবুক সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষই ছিল অজ্ঞ। আমার মত কিছু ইন্টারনেট পাগল ছেলে মেয়েরা ছাড়া নেট কি তা অনেকেই জানত না।আর আমরা যারা নেটে যেতাম তারা স্বাভাবিকভাবেই অপরিচিত মানুষের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করার প্রতি বেশ আগ্রহী ছিলাম।
তার উপর চিঠিতে পত্র মিতালী করার এইজটাও গেল গেল প্রায় অবস্থা। সুতরাং প্রযুক্তির ছোয়া বলতে গেলে নেশার মত ছিল আমাদের কাছে। নেশা ছিল নতুন কিছু জানার,নতুন কাউকে জানার,নতুন কিছু করার। তবে আমাদের বয়সী ছেলে মেয়েদের সবচেয়ে আকর্ষনের জায়গা ছিল ফোরাম সাইট গুলো।
আজকে যেমন স্মার্ট ফোনের টাচ প্যাডে ছেলে মেয়েরা সারাক্ষন টুকাটুকি,ঠুকা ঠুকি করে, মেসেঞ্জার,ইমো,হোয়াটস এপ ইত্যাদিতে চ্যাটিং করে,ফ্লাটিং করে,তখন তো আর এগুলো ছিল না তাই মোবাইলের বাটন টিপে মিগ এ কিংবা দেশি কিছু ফোরাম সাইটে আড্ডা মারা,চ্যাট করা ছিল সবচেয়ে বড় নেশা।অনেক সময় দেখা গেছে,টয়লেটের কমোডে বসেও চ্যাটিং করতাম । যাই হোক,তখন যে কটা চ্যাটিং প্লাটফর্ম ছিল তার মধ্যে একটা ওয়েব সাইট ছিল সুমন সেলিম ভাইয়ের ফ্রেন্ডস বিডি.নেট।আরো দু একটার মধ্যে ছিল ফ্রেন্ডস দুনিয়া,আড্ডা খানা ইত্যাদি। এসব সাইটে আমি সাধারত "স্বপ্নবাজ" নামে আইডি ইউজ করতাম। মূলত তখন নতুন নতুন ইন্টারনেট ইউজার আমি।অতএব সাধারণ কৌতুহল বশত কিংবা আর সবার চেয়ে নিজেকে আপডেট রাখার জন্য নেট ছিল আমার অত্যন্ত প্রিয় একটা বিচরণ ক্ষেত্র।
যাই হোক,
যে মেয়েটির কথা আমি এখন বলতে যাচ্ছি তার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিল ফ্রেন্ডস বিডি.নেট এ।তারপর বন্ধুত্ব এবং গভীর বন্ধুত্ব।যা আজো কম বেশি টিকে আছে। ফ্রেন্ডস বিডিতে লিংক কিংবা ফোন নাম্বার শেয়ার করা ছিল অপরাধ এবং কেউ ফোন নাম্বার কিংবা ইমেল কিংবা অন্য সাইট লিংক শেয়ার করলে তা স্পাম হিসেবে পরিগনিত হত,কখনো সখনো আইডি সাময়িক বা স্থায়ীভাবে ব্যান করা হত।তাই প্রাইভেট কিংবা পাবলিক যাই হোক না কেন চ্যাটরুমে শুধু চ্যাটিং করা যেত, নাম্বার লেনদেন করতে পারতাম না।বা করার অনুমতি ছিল না।
কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বকে স্থায়ী এবং সুন্দর করার জন্য নাম্বারটা আদান প্রদান ছিল প্রচন্ড রকম জরুরী। আমাদের বন্ধুত্ব গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছিল দিনদিন। আর যত গাঢ় হচ্ছিল ঠিক ততটাই দুজন দুজনার সাথে কথা বলার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়লাম। তাই যেকোন ভাবেই হোক না কেন ফোন নাম্বার আদান প্রদান করতেই হবে।
তারপর একদিন।
একদিন আমি ওকে কৌশলে আমার নাম্বারটা দিলাম।কৌশল তেমন কিছু না জাষ্ট একটা সংকেত। এই যেমন ধরুন সংকেতটা ছিল এরকমঃ ০agfh fgbffg। ও বেশ বুদ্ধিমতী মেয়ে ছিল।খুব দ্রুত সংকেতের মিনিং করে ফেলেছিল। আমার বিশ্বাস ছিল ও আমাকে ফোন দেবে।কিন্তু কখন আর কোনদিন দেবে তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। নাম্বার দেয়ার পর থেকে একটা অস্থিরতা কাজ করছিল আমার মধ্যে। সারাক্ষণ শুধু এটাই ভাবছিলাম,"কখন সে ফোন দেবে? আর কখন কথা বলব? "
নিজে নিজেই অস্থির হচ্ছিলাম আবার নিজের এই অযাচিত অস্থিরতার জন্য নিজেকেই গাল দিচ্ছিলাম। "আশ্চর্য! আমি কেন এত অস্থির হচ্ছি? ও তো জাস্ট আমার বন্ধু।তাছাড়া তো আর কিছু না! তবে কেন আমি এমন করছি!!! হ্যাভ আই ফলেন ইন লাভ? অর এম আই গোয়িং টু ফল ইন লাভ?"
যাই হোক,এক পর্যায়ে নিজেকে বোঝাতে সক্ষম হলাম, "ও শুধুই আমার বন্ধু।আর কিছু না।"
নিজের মনকে বোকা বানিয়ে রাখালাম।কিংবা বোকা বানানোর আপ্রাণ চেষ্টায় সম্ভবত সফলই হলাম।কিন্তু তবুও হৃদয়ের কোন এক কোণে ভালবাসার প্রদীপের মিটিমিটি আলো জ্বলে রইলো।কিন্তু পাত্তা দিলাম না।ভয় হলো,যদি ভালবাসাটা আমাদের বন্ধুত্বকে নষ্ট করে দেয়! তাহলে??
এরপর সারাদিন গেল।গোধূলির লাল পশ্চিমের দিগন্তে মিশে আধারের চাদরে পৃথিবী ঢাকলো।কিন্তু ও ফোন করল না। অনলাইনে বার কয়েক গিয়েও দেখা পেলাম না। নিজের মনে নিজেকে বলে উঠলাম,"তবে কি আমি ভুল করলাম? ওকে নাম্বারটা দেয়া কি আমার উচিত হয়েছিল?"
মন একই সাথে ইতিবাচক আর নেতিবাচক উত্তর দিলো।দ্বিধান্বিত মনে নিজের ভুলের জন্য নিজেকে দোষারোপ করলাম।বারবার মনে হতে লাগলো,
"একি করলাম আমি?"
আর যতবার এ কথা মনে হচ্ছিল ঠিক ততটাই চাপা কষ্ট বুকে এসে জমা হলো। ভীত হয়ে গেলাম হারানোর ভয়ে।ওর বন্ধুত্ব হারানোর ভয়ে কিংবা হৃদয়ের কোনে মিটিমিটি ভালবাসার যে প্রদীপ জ্বলছিল তা নিভে যাবার ভয়ে।
এদিকে রাত ক্রমেই গভীর হতে শুরু করেছে।আর সেই সাথে পূর্ব দিগন্তে ছোপ ছোপ মেঘের আড়াল থেকে চাঁদ উঁকি দিতে শুরু করল যেন।যখনই মেঘের আড়াল থেকে চাঁদ বেড়িয়ে আসে তখনই তার রুপোলী জোসনা ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে।তারই কিছু কিছু জানালার পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা নাড়িকেল গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে এসে পড়ে আমার লজ্জাবনত, অপরাধী মুখের উপর।
তারপর রাত ১২ টা নাগাদ একটা অপরিচিত জিপি নাম্বার থেকে ফোন এলো। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মেয়েলি কণ্ঠস্বর, "স্বপ্নবাজ? "
আমি বললাম,"হুম।কে বলছেন প্লিজ? "
-"বল,তো কে আমি? "
যদিও আমার মন বলছিল,"এ তো সে! ,যার জন্য তোর মন আজ এতোটা ব্যাকুল।" মনের কথা মনে রেখে বললাম,
-"সরি,আমি আপনাকে চিনতে পারলাম না"।
-"এই,আমি "নিশা "।
-নিশা!
নিশা নামটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে যেন বুকের মধ্যে একটা ভূকম্পন শুরু হলো। এতক্ষন যতটা অস্থির ছিলাম ওর ফোন পাওয়ার জন্য, ঠিক ততটাই নার্ভাস হয়ে গেলাম ফোন পাওয়ার পরে।কি বলব আর কিভাবে বলব, কিছুই যেন মাথায় আসছিল না।এমনকি অনেক গুছিয়ে রাখা কথাগুলোও অগোছালো হয়ে গেল এক নিমেষে। বলতে গেলে আমি বাকশূন্য হয়ে গেছি তখন।
লক্ষ্য করলাম কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে,কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসছে,হার্ট বিট দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে।
তারপরেও যতটা সম্ভব নিজেকে স্থির করে বললাম,"নিশা! তুমি? "
মিষ্টি হেসে নিশা বলল,"কেন মিস্টার,অন্য কাউকে এক্সপেক্ট করেছিলে নাকি?"
-"আরে না না।ওরকম কিছু না।এই এমনিতেই..."আমি কিছুটা নার্ভাস হয়েই উত্তর দিলাম।
নিশা একটু থেমে মুচকি হেসে বলল,"আরে বাবা বুঝি বুঝি! এক্সপেক্ট করাটা কিন্তু অস্বাভাবিকও না! এত রাত যখন,এক্সপেক্ট করতেই পারো! কর কর,অসুবিধা নেই! "
তারপর একটা অট্টোহাসি , "হা হা হা :)"
নিশার ইঙ্গিত বুঝতে আমার বাকি রইলো না।ওর সাবলীল কথা বলা, মজা করা আর প্রাণ খোলা হাসিতে আমিও হেসে ফেললাম।
আর এই কিছুক্ষণ আগে যতটা নার্ভাস ছিলাম ওর এই একটি কথা আর প্রাণ মাতানো,মন ভুলানো হাসি যেন এক নিমিষে তা মহাজগতের বাহিরে ছুড়ে ফেলল। মনে মনে ভাবলাম,"কারো হাসি এতটা মিষ্টি,এতটা মধুর হতে পারে! আরে ইয়ে তো মুঝে মার ডালা রে,মার ডালা! "
সেদিন পরিচয় পর্ব যেন আবার নতুন করে শুরু হলো।কথায় কথায় ফ্রেন্ডস বিডি থেকে ফ্যামিলি এন্ড ফ্রেন্ডস সব কিছু নিয়ে গল্প করলাম ভোর রাত পর্যন্ত।
আর এই তো ছিল শুরু।
তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিন আমাদের দুরালাপনিতে রাত্রি দিন এক হত।ধীরে ধীরে আমাদের বন্ধুত্ব আরো গভীর হলো। যদিও আমার মধ্যে ওর প্রতি একটা সুক্ষ্ণ দূর্বলতা ছিল কিন্তু বন্ধুত্বকে অমরত্ব দিতে সেই সুক্ষ্ণ দূর্বলতাকে ভুলে গেলাম।কিন্তু বিশ্বাস করেন,আমাদের বন্ধুত্বের মধ্যে যত আলাপ হত,আমরা একে অপরের যতটা কেয়ার নিতাম আমি হলফ করে বলতে পারি,"কোন প্রেমিক জুটিও পরস্পরের প্রতি এতটা কেয়ারী ছিল না।"
আর এই কেয়ার,ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলা,রাতের পর রাত জেগে গল্প করা,জোসনার আলোয় ভিজে ভিজে স্বপ্ন দেখা, কিংবা অমাবস্যার মনখারাপ করা অন্ধকারে হৃদয়ে জমে থাকা মেঘের বৃষ্টি আমাদের দুজন কে অনেক কাছাকাছি এনে দাড় করিয়ে দিল।দুজনার হাজারো সুখ দুঃখকে ভাগাভাগি করে নিলাম দুজন। রাতের পর রাত সুখ গুলো ভাগ করে নিলাম,হাসি ঠাট্টায় মন খারাপের রাত্রিগুলোও মাঝে মাঝে হেসে উঠত আমাদের বন্ধুত্ব দেখে কিংবা বন্ধুত্বের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ভালবাসা দেখে।
কিন্তু সে ভালবাসার কথা বলা যেত না।কিংবা বুঝেও অবুঝ হয়ে থাকতে হত শুধু এটা ভেবে যে,যদি আমার কোন আচরণ আমাদের বন্ধুত্বকে নষ্ট করে দেয়!তাহলে??
তাহলে তো ভালবাসার মানুষটার মুখের কথাটা শুনতে পাব না।হয়ত আর কখনোই না। সুতরাং বন্ধুত্বের আড়ালেই না হয় আমার ভালবাসা লুকিয়ে থাক সারাজীবন!
#
এভাবে প্রায় এক বছর কেটে গেল।দেখতে দেখতে সময়টা যে কিভাবে পার হয়ে যায় আসলে বুঝাই যায় না। কিন্তু ফেলে আসা সময়ের দিকে তাকালে আন্দাজ করা যায়,ঠিক কতটা অনুভূতি,কতটা সময় স্মৃতি হয়ে জমা হয়ে গেছে জীবনের খাতায়।বর্তমানে যা ছুয়ে দেখা যায়,সেটাই যখন অতীত তখন স্মৃতি হাতড়ে হয়ত খুঁজে পাওয়া যায় কিন্তু ছুঁয়ে দেখা যায় না। সেটা যে সেখানেই স্থির হয়ে থাকে যেখানে ফেলে আসা হয়।শুধু তার কিছু স্মৃতি অনুভূতিকে টেনে বেড়ায় মস্তিস্কের মেমরি স্লটে।।
আমারো ঠিক একই অবস্থা হয়েছিলো যেদিন নিশা আমাকে তার গল্প বলেছিল। ভয়ংকর, নির্মম,নিষ্ঠুর, লজ্জার সেই গল্প।যা আমার মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা ভালবাসাকে চিরদিনের জন্য বন্ধুত্বের আড়ালে আবদ্ধ করতে বাধ্য করেছিল। শুধু আবদ্ধ করতে পারিনি,যে স্মৃতিগুলো বন্ধুত্বের আড়ালে ভালবাসা হয়ে জমা হয়েছিল দুজনার হৃদয়ে।।
সেদিন ছিলো আষাঢ়ের বৃষ্টিস্নাত এক ঘুটঘুটে আধারের রাত। বাহিরে মষুলধারে বৃষ্টি পরছে।আর এমন এক বৃষ্টি স্নাত রাতে মনটা ভীষণ ভাবে কারো মিষ্টি কথা শোনার জন্য ব্যকুল ছিল।ইতোমধ্যে এতদিনের হাজারো কথা আর অকথার ভীরে নিশার মনে যে আমার প্রতি কি ফিলিংস তা বুঝতে বাকি নেই। আমি জানি সেও আমার মত দ্বিধান্বিত। নানা ছলে সেও অনেক চেষ্টা করেছে তার মনের কথা আমাকে বলতে।কিন্তু আমিই বুঝেও অবুঝ ছিলাম।ভাবছিলাম,কথাটা ওর মুখ থেকেই আগে শুনি না কেন!
কিন্তু তা আর হয়নি।
তাই আজ এরকম এক রাতে আমি পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়েছিলাম নিশাকে লুকিয়ে রাখা মনের কথাটা বলেই ফেলব।আমি জানি,নিশাও আমাকে মনে মনে ভালবাসে। আর সে হয়ত আমার মুখ থেকেই প্রথম কথাটা শুনতে চায়।তাই অনেক ভেবে চিনতে ওকে আজ মনের কথাটা বলবই বলব।এরকমই পণ করেছিলাম। তারপর বেশ রাতে কিছুটা নার্ভাসনেস আর বেশ খানিকটা আশা নিয়ে নিশাকে ফোন দিলাম।
ফোন রিসিভ করেই মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল,"হাই,কেমন আছো? বৃষ্টি হচ্ছে?? "
-"হুম। অনেক বৃষ্টি।" বেশ খানিকটা উৎফুল্লতা নিয়ে ওকে উত্তর দিলাম।
-"বৃষ্টি আমার ভীষন ভাল লাগে।"
-হ্যা,জানি তো।আর সেই সাথে প্রিয় মানুষ যদি পাশে থাকে ত কথাই নেই! হা হা হা।
-"তা যা বলেছ। আরে এই জন্যেই তো জসীম উদ্দিন লিখেছিলেন,
"আজিকে বাহিরে শুধু ক্রন্দন ছলছল জলধারে,
বেণু বনে বায়ু নাড়ে এলো কেশ,মন যেন চায় কারে! " হা হা হা।
আমি ওর কথায় একটু খোঁচা দিয়ে বললাম,
"তা ম্যাডাম,আপনার কার কথা মনে হচ্ছে, শুনি? "

(চলবে....ফেসবুক পোষ্টঃ ২০ জুলাই ২০১৬)
কপিরাইটঃ নীলকান্ত

সোমবার, ২০ জুন, ২০১৬

  • ৪:০০:০০ PM


তোমাকে নিয়ে লেখা কবিতার দিকে তাকালে
আজ ঘেন্না হয়।
বড্ড বেমানান তোমার সাথে।
এক একটি কবিতা যেন,
ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা এক একটি পতিতা।
আর সেই-
পতিতা কবিতাগুলোর প্রতিটি পঙক্তি যেন আজ
সেঁজে গুঁজে খদ্দর খুঁজে বেড়ায় রাতে,
আঁধারে।
বড্ড বেমানান সেই সব উপমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে রাতের ল্যাম্পপোস্ট গুলো।
আমায় অন্ধ বলে।
বলে, আমি নাকি রাতকানা। তাই-
পতিতার হৃদয় খুঁজে ভুল করেছি!
যে হাসনাহেনার সাথে কবিতা জুরে ছিল,
সেও আজ প্রশ্ন তোলে।
মানহানির মামলা ঠুকে দেবে বলে ভয় দেখায়!
বলে-
আমি নাকি গন্ধ বুঝি না।তাই-
কবিতার শরীরের পঁচা গন্ধকে
আমি নাকি ভেবেছিলাম হাসনাহেনা!
সত্যিই কি তবে আমি ভুল করেছিলাম-
আঁধার কে আলো ভেবে?
মাংস পঁচা গন্ধকে হাসনাহেনার গন্ধ ভেবে?
হ্যা,হয়ত আমারই ভুল ছিল।
ভুল ছিল,পতিতা কবিতার সঙ্গ চেয়ে।।
#নীলকান্ত
#ঘৃণা #সেই #সব #তাদের #প্রতি
  • ৩:৫৫:০০ PM
অবশেষে মা'কে বললাম,"মা,তোমার পুত্র বধু খোঁজ।"
মা আমার কথা বিশ্বাস করতে পারছিল না। অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল,"কেন? ওর সাথে কি রাগারাগি হয়েছে?"
মাকে বললাম, "না মা, রাগারাগি হয়নি।"
মা তবুও যেন বিশ্বাস করতে পারল না। আর কিভাবেই বা করবে! যে মেয়েটার জন্য এত কিছু সহ্য করলাম,যার জন্য জীবনটাকে ট্রেজেডি সিনেমা বানালাম, সেই মেয়েকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করব সেটা অবিশ্বাস্যই বটে!
মা তাই সত্য উদঘাটনের জন্য ওর নাম্বারে ফোন দিল।ফোন বন্ধ।
শেষ পর্যন্ত ঘুরে ফিরে ফোন টা আমার কাছেই এলো।
"হ্যালো মা,আসসালামু অলাইকুম। বল মা।" আমি ফোন রিসিভ করেই বললাম।
মা একটু অবাক হয়ে বলল,"এ নাম্বার তোর কাছে কেন? এটা তো আমার বৌমার কাছে থাকার কথা।"
মা'কে বললাম,"না মা,তুমি যে নাম্বারে ফোন দিয়েছ সেটা বোধহয় বন্ধ আছে।"
আমার মা খানিকটা চুপ থাকলেন।
তারপর বললেন,"সত্যিই কি ওর সাথে ব্রেক আপ হয়েছে?"
আমি আমার স্মার্ট মা'কে বুঝিয়ে বললাম,"মা,সব কিছু সব সময় সুখকর নাও হতে পারে। বিশেষ করে যদি তোমাদের পছন্দমত বিয়ে না করি তবে তো নয়ই।"
মা একটু দুঃখভরা হাসি হেসে বললেন,"কিন্তু তবুও।তোর পছন্দের ব্যাপারে তো আর না করিনি।"
মা'কে বললাম,"বাদ দাও তো মা। যে যাবে সে তার কপাল নিয়েই যাবে।কিন্তু এবার যে তোমাদের দায়িত্ব বেড়ে গেলো।এতদিন তো ফ্রি ছিলা।ছেলের বৌ খোঁজার টেনশন ছিলো না।
এবার সেই টেনশনটা তোমাদের উপরই ন্যস্ত করলাম!"
আমার হঠাৎ পরিবর্তন যে মা ভালভাবে নিতে পারছেন না তা বেশ বুঝতে পারছিলাম।তাই আরো ডিটেইলসে বললাম,
"মা,একটা মেয়ে দেখ।এতিম একটা মেয়ে।যার বাবা মা কেউ নেই।কোন ব্যাকগ্রাউন্ড নেই।কোন পিছুটান নেই।সেরকম একটা মেয়ে।"
"ও হ্যা,মেয়ে শ্যামলা হোক কিংবা ফর্সা হোক তাতে যায় আসেনা।মেয়ে অবশ্যই লম্বা, স্লিম এবং অশিক্ষিত কিংবা অল্প শিক্ষিত হতে হবে।"
মা আমার কথায় বাধা দিয়ে বললেন,"অল্প শিক্ষিত  কেন!"
আমি বললাম,"যেটুকু শিক্ষা বাকি থাকবে সেটুকু আমিই ওকে দিয়ে দেব।"
মা আমার কথার মানে বুঝলেন বলে মনে হয়না। তাই হুম বলে ফোনটা রেখে দিলেন।
তারপর দুদিন গেলো।মা হঠাৎ রাত দশটা নাগাদ ফোন দিলো।ফোন রিসিভ করে মাকে সালাম দিতেই মা উত্তর নিয়ে বলল,"একটা মেয়ে পাইছি।"
আমি তো অবাক! মা বলে কি এটা! দুই দিনেই মেয়ে জোগার করে ফেলল।তাও আবার বিয়ে করার জন্য!!!! কি করে সম্ভব।আমি তো এত তাড়াতাড়ি চাইনি। দু এক মাস দেরী হলেও কোন সমস্যা ছিল না। আর এত দিন জানতাম,প্রেম করার মেয়ে এভেইলেবল হলেও বিয়ের পাত্রী পাওয়া কঠিন।কিন্তু মা যে দু দিনেই পাত্রী যোগার করে ফেললেন!!
মা মেয়ের বর্ণনা করতে ব্যস্ত।মেয়ে প্রাইভেট মেডিক্যালে পড়ে,বাবা মা নেই,নানার বাড়িতে মানুষ, গায়ের রঙ ফর্সা, হাইট পাঁচ দুই,তোকে চেনে ইত্যাদি।তারপর যখন সারা গোষ্ঠীর পরিচয় বর্ণনা শেষ তখন আমাকে বলল,"কি রে, পছন্দ হইছে?"
আমি বললাম,হুম।খুব পছন্দ।কিন্তু আরো কিছুদিন দেরী করতে হবে যে!
মা আরো অবাক হয়ে বলল,"কেন?তুই তো বললি বিয়ে করবি।"
আমি বললাম,"করব।তবে এখনই যে করব তা তো বলিনি।আর দুই একটা মাস কি দেরী করা গেল না?"
মা আমার হাসতে হাসতে বলল,"ওই একই কথা।এখনই তো বিয়ে হচ্ছে না।"
আমি বললাম,"হবেও না।আর মেয়েটা তো বেশি শিক্ষিত!"
  • ৩:৪০:০০ PM
বাবা,
প্রথম যখন বুঝতে শিখলাম সম্পর্ক কি,তখন চার পাশে হাতড়ে তোমায় পাইনি।পরিবারে দাদা-দাদী,চাচা,ফুফুরা, মা সবাই ছিল শুধু তুমি ছিলে না।পরে জানলাম তুমি দেশের বাহিরে। চাকুরীর প্রয়োজনে হাজার হাজার মাইল দূরের অরন্য ঘেরা আফ্রিকায়। অবশ্য তখন ভূগোলের কোন ধারনা ছিল না আমার।না ছিল মাইল বা কিলোমিটারের ধারনা।শুধু জানতাম আফ্রিকা অনেক অনেক দূরে।  মাকে বলতাম,"মা,আফ্রিকা কত দূর?"
মা বলত, "অনেক অনেক দূরে। সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যেতে হয়।"
সমুদ্র বলতে এটা জানতাম যে এটা অনেক বড়।সমুদ্রের নাকি কোন শেষ নেই।তাই মনে মনে ভাবতাম,সমুদ্র পাড়ি দেবে কি করে? নিশ্চয়ই জাহাজে করে।জাহাজও নাকি অনেক বড়।সমুদ্রে চলে।
তাহলে তো জাহাজেই পাড়ি দেবে, তাই না মা?
মার কাছে অবাক হয়ে জানতে চাইতাম।
মা বলত, "না রে ব্যাটা, তোমার বাবা প্লেনে গেছে।"
প্লেন অবশ্য চিনতাম তখন।ওই যে মেঘের উপর দিয়ে শব্দ করে করে উড়ে যায় যে, সেটা। কিন্তু ছোট্ট প্লেনটা মাটিতে কি করে নামে জানা ছিল না। মাকে একদিন বললাম," মা,প্লেন কত বড়? মাটিতে নামে কি করে?"
আমার মা অর্ধশুক্ষিত হলেও ভূগোল আর আধুনিক দুনিয়ার অনেক কিছুই জানতেন। কিংবা তোমার চিঠি পড়ে পড়ে বর্ণনা করতেন প্লেন,প্লেনের ল্যান্ডিং কিভাবে হয়। মায়ের ভাষায় তখন প্লেন ছিল,"বড় বড় বাসের মত"।
কিংবা কখনো সখনো আমাদের চৌচালা ঘর দেখিয়ে বলতেন,"এই এত বড় তো বটেই।"
আমি প্লেন কে বাস কিংবা ঘরের মতই মনে করতাম।শুধু জানতাম,প্লেন বাসের মত সরক দিয়ে যায় না।যায় আকাশ দিয়ে উড়ে।
জানো বাবা,তারপর থেকে যখনি মাথার উপর দিয়ে প্লেন উড়ে যেত,কিংবা প্লেনের শব্দ পেতাম তখন দৌড়ে বাহিরে দাঁড়িয়ে হাত উচু করে ডাকতাম।
আর বলতাম,"ও প্লেনওয়ালা,আমার আব্বাকে নামায়া দিয়া যাও।"
কিন্তু প্লেনওয়ালারা আমার কথা শুনত না।আস্তে আস্তে মেঘের আড়ালে হারিয়ে যেত।আমি অপেক্ষায় থাকতাম,কবে আমার বাবা ফিরে আসবে!
এরপর যখন তুমি দেশে ফিরলে তখন আমি মহা খুশি। বিদেশ থেকে আনা টেন ব্যান্ডের রেডিও আর ইয়াশিকা ক্যামেরার ফ্লাশের সামনে সামনে থাকা যেন আমার নেশা হয়ে গেল।যেই ছবি উঠতে যাবে সেখানে রেডিও হাতে আমি আছিই। হা হা হা।
বাবা,মনে আছে এসব কথা?
যাই হোক,
তারপর ধীরে ধীরে বড় হলাম।স্কুলে গেলাম।লেখাপড়া শিখতে লাগলাম। তোমার সাথে ঘুরতে লাগলাম এক কর্মস্থল হতে অন্যথায়। এভাবেই বেশ যাচ্ছিল।এরপর একটা সময় এলো।তোমার দুষ্ট ছেলেটা তখন বেয়ারা প্রায়। আষ্টম শ্রেনী পাশ করলাম। সাথে সাথে যিদ আর রাগ যেন বেড়ে গেল।
বয়সের চেয়ে যেন সবকিছু বেশিই বুঝতে শিখলাম। তোমার কিংবা মায়ের অবাধ্য হতেও বাধল না। তোমার মনে একটার পর একটা কষ্ট দেয়া যেন নিয়মিত হয়ে গেল।শাসন করলে কিন্তু তা যেন আগুনে ঘি ছিটানোর মত ছিল তখন। তখন মনে হত,আমিই ঠিক বাকি সব ভুল।আর তাই একের পর এক কষ্ট দিতে এতটুকু দ্বিধা করিনি তোমাকে। তারপরেও তুমি সব ভুলে আমাকে বুকে টেনে নিয়েছ রক্তের কারনে।
বাবা,আজ আমি আমার পুরোনো ভুলের জন্য লজ্জিত। আজ বুঝি আমি কতটা ভুল ছিলাম। এখন বুঝি, তোমাকে কতটা কষ্ট দিয়েছি।
তখন যে ভুল করেছিলাম তা তো আর সুধরাতে পারব না কিন্তু নতুন করে যেন ভুল না করি আজ সেদিকে খেয়াল রাখতে শিখেছি।
বাবা,
সব কিছুর পরে একটা কথা তোমাকে বলতে খুব ইচ্ছে করে।যদিও সামনাসামনি কখনো বলতে পারিনি।পারবও না। আবার এখানে লিখলে তুমি দেখবেও না,তাই বলতে পারছি-
"বাবা,আই লাভ ইউ।"

বুধবার, ১৫ জুন, ২০১৬

  • ৪:৪৫:০০ AM
প্রিয়তমা,
বুকের মধ্যে চিনচিন করছে।একটা অস্ফুট হাহাকার বুকের ভেতরটা ফালাফালা করে দিচ্ছে অবিরত।  এ ব্যাথাটা যে কেমন ব্যাথা জানো তুমি?
জানো হয়ত কিন্তু বুঝ না। বুঝলেও অনুভব করতে পারবে না তুমি। এটা কষ্টের এমন এক মাঝামাঝি অবস্থা যেখানে অনুভূতি গুলো ভোঁতা হয়ে যায়,হৃৎপিন্ডের উঠানামা শিথিল হতে শিথিলতর হয়, কষ্টগুলো অশ্রু হয়ে বেড়িয়ে আসতে চায় কিন্তু পারেনা।
স্মৃতিগুলোর আর্তনাদে কেঁপে কেঁপে উঠে হারানোর ভয়ে ভীত স্বপ্নগুলো।তারপর ধীরে ধীরে চোখটা ছলছল করে উঠে কিন্তু লোনা জল লোক লজ্জার ভয়ে লুকিয়ে থাকে চক্ষু গহবরে।
প্রিয়তমা,
এ ব্যাথা যে কেমন ব্যাথা তা বুঝানো যায়না।বুকের পাঁজর দুপাশ থেকে চেপে ধরে হৃৎপিন্ডটাকে। ঘাড়ের রগ টেসে আসে,স্মৃতির পিছুটানে মস্তিস্কের নিউরন ছিড়ে যেতে চায়,যায় না।ভাবি, হয়ত ছিড়ে গেলেই ভাল হত।
মুছে যেত সব।ভুলে যেতাম সেই সব একশত বিশ শতাব্দীর স্মৃতিগুলো! আমাকে দেখানো তোমার সেই স্বপ্নগুলো।
প্রিয়তমা,
তুমি চলে গিয়ে সুখী হতে চাও।হও তুমি সুখী হও।কিন্তু শতাব্দীর স্মৃতিগুলো সঙ্গে নিয়ে যেও প্লিজ। আমি এ স্মৃতির ভার সইতে পারছিনা।
ভাল থেক প্রিয়তমা। দরজা খুলে রেখেছি।পারলে চুপিসারে চলে এসো কাছাকাছি। স্মৃতিগুলো নিয়ে যেও অথবা স্মৃতিগুলো বেঁধে রেখ তোমার আমার রাগ-অভিমানের, সুখ-দুঃখের সোনালি ফ্রেমে।
#নীলকান্ত

সোমবার, ১৩ জুন, ২০১৬

  • ৬:১৩:০০ PM

পাশাপাশি হেটে অনেকটা পথ দিয়েছি পাড়ি,
অনেকটা বন্ধুর পথ একসাথে।
কথা ছিলো, বন্ধুর পথ পেরুলেই পিচঢালা জীবন;
সুখ আর সুখের স্বপ্ন বুনবো তাতে।
কিন্তু-
এখন যখন পিচ ঢালা পথে এসে দাঁড়িয়েছি
তখন দুজনার দুটি পথ আলাদা হয়ে গেছে!
স্বপ্নের সুতো ছিড়ে গেছে স্বার্থের কড়িতে।
হয়ত এভাবেই ছিঁড়ে যায় সব,
ছিঁড়ে যায় সব বন্ধন এসে পিচঢালা এই পথে।।

বড়ই নিষ্ঠুর এ পথ ,নিষ্ঠুর এই পিচঢালা জনপদ।
স্বার্থের কাছে ভালবাসা হয় বধ,
সত্যিই, এ এক নিষ্ঠুর জনপদ।
দেখ,
নেই পথে যখন পথ খুঁজে নিয়েছিলাম, তখন
চলেছিস একসাথে।
আর এই পিচঢালা জনপদে হারালি তুই, চাকচিক্যের অন্ধ অলিগলিতে!
হায়রে প্রেম! হায়রে ভালবাসা!
দুঃসময়ে ভোল বদলাতে তোর জুড়ি মেলা ভার,
বলতে পারিস,এ তোর কেমন অহংকার?
ভিখারি বলেই কি তবে আজ তুই রুদ্ধ করলি দ্বার??
বুঝলাম, এটাই ছিল পরিহাস বিধাতার!
স্বেচ্ছায় যখন হারিয়েছিস তুই,
তখন ফিরিয়ে আনার সাধ্য আছে কার!!

#নীলকান্ত©

বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০১৬

  • ৮:৩৪:০০ PM
মেয়েরা সব সময় নিজেদের স্বার্থটাই বড় করে দেখে,এরকম কথা লোকে বলে।কিন্তু আসলেই কি তাই? লোকে বলে "স্বার্থের জন্য প্রয়োজনে সব কিছু করতে পারে। এমনকি বয় ফ্রেন্ডকেও ছেড়ে দিতে পারে যখন তখন।নিজের রাগ যিদ কে সফল করার জন্য তো বটেই।"
যাই হোক এর জন্য নারীকে দোষ দিচ্ছিনা। বিশেষ করে শুধুমাত্র এ যুগের নারীদের তো অবশ্যই না।কারন, নারী সন্দেহবাতিক, কৌতুহলপরায়ন,অস্থিরচিত্তের একদিনে হয়নি। তাদের এসব গুণের পেছনে রয়েছে বহু পুরোনো ইতিহাস ও ঐতিহ্য। ব্যাপারটা হলো,মানুষের সৃষ্টির আদিকাল থেকেই সে নিজ জায়গায় স্বার্থপর। কিভাবে?
তার জন্য আমাদের সৃষ্টির আদিতে যেতে হবে।স্রষ্টা যখন মানব জাতিকে সৃষ্টি করল তখন প্রথম সৃষ্টি করল আদমকে। যে আদম স্বর্গের আরাম আয়েশের মধ্যেও একাকীত্ব ফিল করা শুরু করে।তখন তার মধ্যে কারো সঙ্গ পাবার ইচ্ছে জাগে। মনে মনে ভাবেন,"ইস,এই স্বর্গে যদি কেউ থাকত যার সাথে কথা বলে সময় কাটানো যেত তবে কতই না ভাল হত! "
স্রষ্টা আদমের মনকষ্ট বুঝতে পারলেন।আর তাই আদমকে সঙ্গ দেয়ার জন্য আদমের বাম পাজরের হাড় থেকে হাওয়াকে সৃষ্টি করলেন।
আদম তার মত একজন মানুষ কে পেয়ে তো মহা খুশি।স্বর্গের বুকে দুজন ঘুরে ফেরে,খায় দায়, গল্প করে বেশ ভালই কেটে যাচ্ছিল সময়। এমন সময় আবির্ভাব হলো শয়তানের। শয়তান আদমকে নানাভাবে ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে পথচ্যুত করতে তৎপর হলো।কিন্তু স্রষ্টার প্রতি চির বাধ্য আদম কোনভাবেইই শয়তানের প্ররোচনায় ভুললো না। আদমকে প্ররোচিত করতে ব্যর্থ হয়ে ইবলিশ শয়তান নতুন ফন্দী আটলো।
সে অগোচরে হাওয়ার সাথে মিল দিয়ে হাওয়াকে ফুসলাতে চেষ্টা করল।এবং দেখল "আরে বাহ!  আদম কে ফুসলানোর চেয়ে হাওয়াকে ফুসলানো তো বেশ সহজ! "
সুতরাং সে সব সময় হাওয়াকে নানাভাবে প্ররোচিত করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকলো। হাওয়াকে বলল,"দেখেছ হাওয়া,ওই যে গাছটা দেখছো, ওই গাছটার ফল স্বর্গের সবচাইতে মিষ্টি এবং সুন্দর ফল। আর তা না হলে আল্লাহ তোমাদের ওই গাছের কাছে যেতে নিষেধ করবে কেন? নিশ্চয়ই আল্লাহ চায়না তোমরা ওই ফল খাও!অথবা নিশ্চয়ই আরো কোন রহস্য লুকিয়ে আছে ওখানে! "
এসব কথা শুনে হাওয়ার মনে কৌতুহল কিংবা সন্দেহ জন্মালো।যে কৌতুহল নারীর চিরন্তন বৈশিষ্ট্য। আর সেই কৌতুহলের বশবর্তী হয়ে সে প্রিয়তম আদমকে বলল,"দেখ আদম,আমি ওই গাছটার ফল চাই। অতএব আমাকে ফলটা পেরে দিতে হবে।"
আদম হাওয়াকে বহু চেষ্টা করল বুঝাতে।কিন্তু কিছুতেই হাওয়া বুঝতে রাজি হলো না। সে তার যিদে অটল। বরং আদমের সাথে অভিমান করে কথা বলাই বন্ধ করে দিলো।
এদিকে আদম পড়ে গেলো মহা বিপদে।একে তো আল্লাহ তাকে ওই গাছটার কাছে যেতে নিষেধ করেছে অন্যদিকে হাওয়া ওই গাছের ফল নেবেই নেবে।নচেৎ কথাটি নট।
আদম ঠিক কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। হাওয়াকে বুঝিয়েও লাভ হয়নি।বরং সে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে।অন্যদিকে স্বর্গের আরাম আয়েশ হাওয়ার সঙ্গ ছাড়া যেন পানসে হয়ে গেছে। কিছুই আর ভাল লাগছে না তার। কি করবে আর কি করবে না তাই ভেবে সে আকুল। এদিকে হাওয়ার এক কথা,"আমার ওই ফল চাইই চাই।"
আদম হাওয়ার মধ্যে যখন এরকম মনমালিন্য চলছে তখন দূরে থেকে শয়তান সব দেখে আর মিটিমিটি হাসে। আর মাঝে মাঝে হাওয়ার কাছে গিয়ে কানপড়া দেয়,"দেখেছ হাওয়া,আদম তোমাকে একদম ভালবাসে না। ভালবাসলে এতক্ষণে ওই ফলটা পেড়ে এনে দিত।"
শয়তানের কানপড়ায় হাওয়ার মনে আরো যিদ হয়, আরো রেগে যায় আদমের উপর।তারপর গাল ফুলিয়ে দূরে গিয়ে বসে থাকে।

আদম আড় চোখে হাওয়ার বিষাদময় চেহারার দিকে তাকায়।হাওয়ার ঠোট বাঁকিয়ে, গাল ফুলিয়ে বসে থাকাটা যেন আদমের হৃদয়টাকে ফালাফালা করে দেয়। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়,"যা হয় হবে।কিন্তু আমি আর হাওয়ার মন খারাপ দেখতে চাইনা।"
তাই সে ধীর পায়ে হাওয়ার কাছাকাছি এগিয়ে আসে।তারপর হাওয়ার কাঁধে হাত রেখে মৃদু চাপ দিয়ে বলে,"প্রিয়তমা, তুমি এভাবে মন খারাপ করে বসে আছো কেন? তোমার মন খারাপ থাকলে আমার যে ভাল লাগেনা প্রিয়তমা। "
আদমের কথায় হাওয়া ঝাকি দিয়ে উঠে। রেগে মেগে বলে,"হ্যা হ্যা জানি।কতটা ভালবাস তুমি আমাকে। আর আমার জন্য তোমার কতটা মন খারাপ হয়! হুম!"
তারপর একটু থেমে আবার বলতে থাকে,"যদি আমাকে ভালইবাসতে আর আমার মন খারাপ দেখে তোমার খারাপ লাগত তবে এতক্ষনে আমাকে ফলটা পেড়ে এনে দিতে!"
আদম হাওয়ার কথায় কষ্ট পায়।সে হাওয়ার হাত ধরে বলে,"চল প্রিয়তমা, তোমাকে ওই ফলটা পেড়ে এনে দেই।"
আদমের মুখে এ কথা শুনে হাওয়ার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। সেই সাথে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ইবলিশেরও। হাওয়া আদমের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,"সত্যিই বলছ তো? "
আদম স্রষ্টার নিষেধ অমান্য করার শাস্তির ভয়ে ভীত থাকলেও হাওয়ার সন্তুষ্টির জন্য হাসি হাসি মুখ করে বলে উঠে,"হ্যা প্রিয়তমা, সত্যিই।"
হাওয়ার আদন্দের বাঁধ ভেঙে যায়। অস্থির হয়ে উঠে সে। আদমকে বলে,"চল তবে এক্ষুনি যাই।"বলেই সে আদমকে টানাটানি করা শুরু করে। নারীর অস্থিরতা সেখান থেকেই।তারপর কোটি কোটি বছর কেটে গেছে কিন্তু নারীর মনের "কৌতুহল",সন্দেহ আর অস্থিরতা কাটেনি।
যাই হোক, আদম এবং হাওয়া নিষিদ্ধ গাছটার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলো।আর পেছন পেছন শয়তানও।শয়তান নিজের বুদ্ধির প্রশংসা করে বলল,"আরে আমি হলাম ইবলিশ শয়তান।আমি চাইলে কিই না করতে পারি! পুরুষকে প্ররোচিত করতে না পারি কিন্তু নারীর দ্বারা পুরুষকে তো প্রভাবিত করতেই পারি! হা হা হা। আমার কাজে নারীর ভূমিকা অপরিসীম। হা হা হা।"
শয়তান যখন এসব ভাবছিল ততক্ষণে আদম-হাওয়া নিষিদ্ধ গাছের নীচে এসে দাঁড়িয়েছে। হাওয়া তো খুশিতে বাকবাক। সে বারবার আদমকে ফলটা পারার জন্য আস্থির করে তুলতে শুরু করলো। এক পর্যায়ে আদম তার প্রিয়তমা হাওয়ার কথা শুনে ফলটা ছিঁড়েই ফেলল।
সঙ্গে সঙ্গে স্রষ্টা ক্ষুব্ধ হলেন।আদেশ অমান্যের অপরাধে দুজনকেই স্বর্গ থেকে বের করে দিলেন। আদম ও হাওয়া তাদের ভুল বুঝতে পেরে স্রষ্টার কাছে তাদের ভুলের জন্য বারবার ক্ষমা চাইতে লাগলো। বিশেষ করে হাওয়া তার কৌতুহল,সন্দেহ আর অস্থিরতার জন্য লজ্জিত ও দুঃখিত হলো।কিন্তু স্রষ্টা তার আদেশে অটল। তিনি আর তাদের স্বর্গে ফিরিয়ে নিলেন না।বরং মর্ত্যলোকে দুজনে দু প্রান্তে নির্বাসিত করলেন।
এসব দেখে শয়তান তার প্রথম সফলতার আনন্দে হেসে কুটিকুটি। আনন্দের অতিশয্যে গেয়ে উঠলেন, "আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!! "
(Don't take it religiously .)
#নীলকান্ত

সোমবার, ৬ জুন, ২০১৬

  • ১০:১০:০০ AM


সেই অপূর্ণ চাওয়াগুলো, একে একে সব
হতাশার চাদরে পড়েছে ঢাকা।
চলতে চলতে সোজা পথ গুলোও
হয়েছে বাঁকা, প্রাপ্তির প্রান্তে এসে।

কালো আধারের বুকে কষ্টের জোনাকিরা সব
নীল আলো জ্বেলে পাখা মেলে!
আর বুক ফাটা আত্মচিৎকারে
মাটির বুকে মাথা খুটে মরে,
স্বপ্নের ঝিঝি পোকাগুলো।

জ্বলন্ত সিগারেট শেষ হয়,নিভে যায়;
এক এক করে ধোয়ার কুন্ডলি গুলো
হারিয়ে যায়, কুয়াশার মত।
কিন্তু শেষ হয় না, কষ্টের ছুচো গুলোর
গা থেকে বিগলিত বিশ্রী গন্ধ।
নেভে না,
স্বপ্নের গায়ে লেগে থাকা আরডিএক্স,
বিস্ফোরিত হতাশার আগুন।

হৃদয় পোড়া তামাটে গন্ধে,
চারপাশের বাতাসে মৃদু কোলাহল জাগে,
আবার থেমে যায় সব, সভ্য জাতিদের
অসভ্য কার্যকলাপে!

আশার পেয়ালায় আরেকবার
স্বপ্নের হুইস্কি ঢেলে নেশা খুঁজি,
ঢুলু ঢুলু চোখে স্বপ্ন জুড়ি,
লাল,নীল,হলুদ, সবুজ, তামাটে স্বপ্ন।
তবুও আজ কেন যেন,
আশার পেয়ালাতে আর নেশা লাগে না!!

#নীলকান্ত
১৫/০৩/১৫ ১২:০৮

রবিবার, ৫ জুন, ২০১৬

  • ১০:২২:০০ AM

আজ নাকি কোন স্পেশাল দিন!!
ওহ!এখন তো রাত।
দিন তো সেই কখন রাতের
আধারে ঢেকেছে।
তাহলে আমিই বোধহয় এক্টু
দেরি করে ফেলেছি।
রাস্তার পাশের ওই দোতলার
জানালাটা খোলা ছিল,
এলোকেশী কোন রমণীর ধব
ধবে সাদা পিঠের
সকালের সুর্যস্নান দেখতে দেখতে দুপুর
গড়িয়েছে।
তারপর,
নিকশ কালো ভেজা চুল শুকাতে আসা
পাশের বাড়ির যুবতীর
দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে হয়েছে
আসব আসব করেও আসা হয়নি।
আচ্ছা,আজ না কি কোন স্পেশাল দিন?
সেও তো চলে গেছে আধারের
সাথে সাথে।
তবুও রাত এখনো কিছুটা বাকি!
কিন্তু,দোতলার বারান্দারর
এলোকেশী রমণী নেই,
নেই পাশের বাড়ির যুবতী।
হয়তবা আবারো একশ বছর
পরে ফিরে আসবে
ওরা দুজন, ফিরে আসব আমি।
ফিরে পাব আজকের এই স্পেশাল দিন।।

নীলকান্ত
  • ১০:১৯:০০ AM

একটা সকাল দিতে ইচ্ছে করে তোমায়,
এরকম এক বৃষ্টিস্নাত সকাল।
আকাশে কালো মেঘের ভেলা,
বিদ্যুতের ঝলকানি,
গুরুম গুরুম বজ্রপাত
আর মাথার উপর ঝুম বৃষ্টি।
আর সেই সকালে,
রাস্তা ফাকা,পাতি হাসগুলো খেলবে জলকেলি।
বজ্র মেঘের ঝলকানিতে চোখ বন্ধ করে-
দু কানে আঙ্গুল ঢুকাবে অশীতিপর বৃদ্ধা।
আর তোমার ভীত-সন্ত্রস্ত মুখটা
লুকোবে আমার বুকে।
শির শির করে কেঁপে উঠা তোমার ঠোট,
উষ্মতা খুজবে আমার ঠোঁটে।
এরকম এক সকাল দিতে ইচ্ছে করে খুব।
এমনই একটা বৃষ্টিস্নাত সকাল।।
  • ১০:১৭:০০ AM


এই যে,
এরা সব কাঠবিড়ালের দল,
লেজ উচিয়ে ঘোরে-ফিরে,
খায় গাছের পাকা ফল।।
এরা সব কাঠবিড়ালের দল।
রাজনীতির মাঠটা গরম,
আছে ক্ষমতা,শক্তি,বল;
এবার তোকে কে ঠেকাবে,
ইচ্ছা মত চল।
এরা সব কাঠবিড়ালের দল।।
অবশ্য জাত আছে দুটো,
কেউ কারো কাছে হবে না কো ছোট,
শুধু,
দ্বন্দ্ব তাদের কে খাবে কোন ফল!
কেউ পেড়ে খায় গাছ থেকে তো
কেউ কুড়ায় গাছের তল।
যত যাই বলো রে ভায়া,
এরা সব কাঠবিড়ালের দল।
আর আমরা??
আমরা মানুষ বড়ই খাস,
পদে পদে তাই খেয়ে যাই বাশ।।
মুখ ফুটে বললে কিছু,
এরা বলে," আরে শালা,তুই আবার কি চাস?? "
আমাদের নরম কমল দিল,
ভুলেও কভু মারি না এদের ঢিল,
কুকুরের সাথে কতই না তাই মিল,
ঠ্যাঙানি খেলেও পরের বার
মারব আবার একই জায়গায় সীল।।
তারপর,
আবার এরা লেজ উচিয়ে
খাবে গাছের ফল,
চেয়ে চেয়ে দেখব আমরা
ফেলব চোখের জল।
আরে শালা,
আগেই বলেছি, এরা কাঠবিড়ালের দল।।
  • ১০:১৩:০০ AM

যতবার এ হাতে ময়লা লেগেছে,ধুয়েছি।
খালি পানিতে ধুয়েও ময়লা পরিস্কার হয়েছে,
কিন্তু এবার??
এবার যে  লেগেছে-
চটের ব্যাগ হাতে গ্রাম্য হাটুরের রক্ত,
রাস্তায় পড়ে থাকা লুলা ভিখারি সাত্তারের রক্ত।
লেগেছে সারাদিন ঘামে ভেজা ভ্যানওয়ালা মন্টুর রক্ত,
রোদে পোড়া কৃষ্ণকায় বর্গাচাষী রবিউল মিয়ার রক্ত।
এ রক্ত সরাবো কিভাবে??
সাবান দিয়ে,হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে, ডেটল বা স্যাভলনের মত এন্টিসেপ্টিক দিয়ে কতবার ঘসেছি, যায়নি।
কাপড় কাচা ডিটারজেন্ট এর মধ্যে হাত ভিজিয়ে রেখেছি বহুবার,
তবুও যায়নি।
না রক্তের দাগ,না  গন্ধ, কোনটাই।
কি করেই বা যাবে -
এ রক্তের দাগ যে মিশে গেছে আমার রক্তে,
জিহ্বায়,প্রতিটি শিরা-উপশিরা,ধমনীতে।
কতভাবে চুষে খেয়েছি রক্ত ওদের....
হাটুরের ব্যাগে লালশাক আর কলমিলতা ছিলো,
একটা লাল পেড়ে শাড়িও কিনেছিল
মেয়ে তিথলীর জন্য।
আমি ওর নিওরোনে দুশ্চিন্তার বিষ ঢেলেছিলাম।
তারপর চুষে খেয়েছি ওর তাজা লাল রক্ত পিষাচের মত।।
লুলা ভিখারি ছাত্তারের ইনকাম ইদানীং বেড়ে গেছে বহুগুন..
রাস্তা দিয়ে যেই যায়, দিয়ে যেত দু পয়সা।
মোট দুইশ দশ টাকা ছিলো ওর ভাঙা থালাতে।
ভিখারির বাচ্চা! এত টাকা কামাইস চাদা দিবি না??
তাইতো, ওর ভাঙা প্লেট ভর্তি করে ওর রক্ত গিলেছি ছোট্ট ফুটা দিয়ে।
কেউ দেখেনি।
কেউ দেখেনি,ভ্যানওয়ালা মন্টুর গায়ের ঘাম কিভাবে রক্ত হয়েছিল!
রবিউল মিয়ার ধানী জমি কিভাবে
আমার পিপাসার মিটিয়েছিল।
কেউ দেখেনি।।
কিন্তু শালার সব গুলার রক্তে বিশ্রী গন্ধ,
এখনো যায়নি কিছুতেই।
না সাবান, না ডিটারজেন্টে।
মনে হচ্ছে,প্যারিসের সব পারফিউম গিলে খাই,
প্লাস্টিক সার্জারি করে বদলে ফেলি হাতের চামড়া।
এখনো যে অনেক রক্ত খাওয়া বাকি।।।

সোমবার, ৩০ মে, ২০১৬

বুধবার, ২৫ মে, ২০১৬

  • ৫:০৯:০০ PM
(মডেল ও অভিনেত্রী সাবিরা হোসাইনের আত্মহত্যা আমাকে ব্যথিত করেছে। তাই স্বর্গ কিংবা নরকের ঠিকানায় আমার এ চিঠি।)

সাবিরা,
তোমার ওখানে কি আমার এ চিঠি পৌছবে? তোমার ঠিকানা যে জানিনা। তবুও লিখছি।
সাবিরা,
কত সহজেই তুমি পৃথিবী ছাড়লে,মায়া কাটালে সব কিছুর!সত্যিই,তোমার সাহসের প্রশংসা না করে পারি না। কিন্তু দেখ, কি নির্লজ্জের মত আমি এখনো বেঁচে আছি! কি বেহায়ার মত!
যে বেদনা নিয়ে তুমি চলে গেলে তেমনি বেদনা নিয়ে আমি আজো বেঁচে আছি নির্লজ্জ বেহায়ার মত।
তোমার মত আমারো সেদিন উচিত ছিলো পৃথিবী কে গুডবাই জানানোর। কিন্তু পারিনি। কিভাবে পারব বল, তোমার মত ওত শত সাহস আমার ছিলো না। তবুও শক্ত হাতে ধরা ধারালো ছুরিটা বারবার পেট কিংবা গলার চামড়ায় ধরেছি।তারপর তোমার মত আমারো অবহেলা আর অপমানের অসহ্য যন্ত্রণায়  বুক ফেটে হুহু করে কান্না এসেছে। রাগে,ক্ষোভে অভিমানে তখনই পৃথিবী ছাড়ব বলে পণ করেছিলাম। কিন্তু ছুরির ডগায় নিজের মৃত্যু দেখার সাহসটা আর জুটাতে পারিনি।
চোখের সামনে বাবা-মায়ের অশ্রু ভেজা চোখ,দাদা-দাদীর অকৃত্রিম ভালবাসার হাজারো স্মৃতি, প্রিয় ঘর,প্রিয় বাঁশের বাঁশিটি বারবার ভেসে উঠেছে। জীবন আর মৃত্যুর টানা পোড়নে শেষ অবধি জীবনটাকে আর হারাতে পারিনি।
বুকে জমা অবহেলা আর অপমানের রাগ, ক্ষোভ, অভিমান শেষ পর্যন্ত নতুন এক আমিকে জন্ম দিয়েছে সেদিন। যার বুকে লালিত হচ্ছে প্রতিশোধের সুপ্ত আগ্নেয়গিরি । হয়ত একদিন আমারো সময় হবে যেদিন আমি সেই অবহেলা,অপবাদ আর অপমানের দাঁত ভাঙা জবাব দেব।
সাবিরা,
আমি আমার কষ্টকে বদলে ফেলেছি সাবিরা। তবে তুমি কেন পারলে না? কেন তুমি নিজে হেরে জিতিয়ে দিলে ভালবাসার দস্যুদের!!
সাবিরা,
তোমার জন্য কষ্ট হচ্ছে সাবিরা। কষ্ট হচ্ছে এই জন্যে যে,আমি তোমার সঙ্গী হতে পারলাম না। হয়ত সেদিন আমি হারিয়ে গেলে আজ তুমিই আমার সঙ্গী হতে! কিন্তু তা আর হলো না, সাবিরা।তা আর হয়না।
সাবিরা,
তোমার জন্য আমার কষ্ট হয়।কষ্ট হয় এ জন্যে যে,যাদের কারনে তুমি পৃথিবী ছাড়লে তারা এখনো ঘুরে বেড়ায় লোমশ বুক ফুলিয়ে। তাদের কাছে তুমি ...
থাক আর কিছু বলব না।
ভাল থেক সাবিরা।নরকে আছো নাকি স্বর্গে আছো সেটা জানিয়ে পত্র দিও।ওহ ! তা তো আর হয় না।হবে না। হওয়ার কথাও না। 
ভাল থাক সাবিরা। ভাল থাক তোমার মত আর সব সাবিরারা । ভাল থাক মৃত্যুঞ্জয়ীরা।

ইতি
মৃত্যুঞ্জয়_নীলকান্ত

মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০১৬

  • ১২:১৬:০০ AM
নায়িকা,
বৈশাখী মেলায় ঘুরবো বলে কত কিই না ভেবে রেখেছিলাম!ভেবেছিলাম,  তুমি পড়বে লাল পেড়ে বৈশাখী শাড়ি আর আমি সাদা পাঞ্জাবী। তোমার কপালে থাকবে লাল টিপ,ঠোটটা রাঙিয়ে নেবে হালকা গোলাপি লিপিষ্টিকে।
আর রেশমি লাল চুড়িতে ভর্তি থাকবে দুটি হাত। যদিও লাল জিনিসে রয়েছে আমার যথেষ্ট এলার্জি, তবুও একদিনের জন্য অন্তত সেভাবেই সাজিয়ে তোমার বৈশাখী সৌন্দর্য উপভোগে আমার বিন্দুমাত্র অনীহা ছিল না। বরং গোলাপী ঠোটটাকেও লাল করার জন্য মোক্ষম সময় বুঝে লিপিষ্টিকের পরিবর্তে ভালবাসার রংটা ছিটিয়ে দিতাম!!
যাই হোক,
বড্ড ইচ্ছে ছিলো সারা মেলা ঘুরে
যদুনাথের সস্তা চুড়িমালার দোকান থেকে তোমার জন্য নেব কানের দুল,নাকের নথ,চুলের খোপা আর তোমার মেঘকালো চুলগুলোকে পরিপাটি করে রাখতে দোকানের সবচেয়ে দামি চিরুনিটা কিনে নেব পাক্কা দশ টাকা দিয়ে। তারপর ঘুরতে ঘুরতে মেলার শেষ প্রান্তে বসে থাকা কুদ্দুস বাশিয়ালের কাছ থেকে বাঁশের বাঁশি হাতে নিয়ে হয়ে যাব আমি কৃষ্ণ,তুমি রাধা!
কিন্তু দেখ,
কিছুই হলো না তার।
কত কপোত কপোতি এলো-গেলো
যদুনাথের দোকানে!
কতজন নিয়ে গেল কত কিছু!
শুধু তোমার হাতটি ধরে যাওয়া হলো না আমার।
বাঁশিয়ালের বাঁশের বাঁশিতে কত সুর উঠলো,
কত শত তরঙ্গ ভেসে গেলো বাতাসে,
শুধু আমারই কৃষ্ণ হওয়া হলো না আর,
না তুমি হলে রাধা !!
দেখতে দেখতে বৈশাখী মেলা শেষ হলী।  মাসটাও কেটে গেলো চোখের পলকে। কিন্তু খেয়াল করেছ কি?
এবারের বৈশাখ টা যেন অপূর্ণ! ঠিক তোমার আমার অপূর্ণ চাওয়াগুলোর মত। ঝড় হীন,বৃষ্টিহীন। এ যেন হৃদয়ের এক  না পাওয়ার আর্তনাদ। খররোদ্রে জমিনের বুকে চির ধরে যেমন, কিংবা প্রচণ্ড খরায় একপশলা বৃষ্টির জন্য চাতক চেয়ে থাকে যেমন তেমনি।
তাই আজ আর কোন অজুহাত নয়,নয় কোন অপ্রয়োজনীয় বাক্যালাপ।আজ দুজনে হাটবো শুধু যেভাবে কথা ছিলো মনে মনে। তোমার পড়নে থাকবে লাল পেড়ে শাড়ি,হাতে রেশমি চুড়ি,কপালে লাল টিপ,ঠোঁট রাঙবে ঠোঁটের উষ্ণতায়। খালি পায়ের নিচে থাকবে সবুজের বিছানা আর আকাঁশে থাকবে রূপোলী চাঁদ!
নায়িকা,
আজ আমি তোমার স্বপ্ন হবো।হাজার বছর ধরে যে স্বপ্ন বুনেছি তুমি আর আমি।।।
#নীলকান্ত®

শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৬

  • ১২:৪৩:০০ PM






কর্ণেল মিথঃ শেষ রাতের খুন – ১


- এস এম হারুন অর রশিদ


হঠাৎ চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে গেলো।কত বাজে দেখতে দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকালাম। ঘরের মৃদু আলোয় দেয়াল ঘড়ির কাটাটা প্রায় তিনটা ছুই ছুই দেখতে পাচ্ছি।কিন্তু এত রাতে চেঁচামেচি করে কারা?না এখন ফজরের নামাজ শুরু হয়েছে যে লোকজন রাস্তা দিয়ে কথা বলতে বলতে যাবে,না এটা কোন বাজার এলাকা! বরং শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে একটা নির্জন পাঁচতালা বাসার চারতলায় থাকি আমি। আর শহর থেকে এই দূরে এসে থাকাটার একমাত্র কারন হলো , আমার সাধের ঘুমের যেন ব্যাঘাত না ঘটে।কিন্তু এই এত রাতে হঠাৎ চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙায় একটু রাগই হলো। চোখটা সামান্য ডলে বালিশের পাশে রাখা ফোনটা হাতে নিলাম। রাস্তার লোক গুলো কে আচ্ছা মত দু'টো কথা শোনানোর প্রবল ইচ্ছে নিয়ে বারান্দায় এসে হাজির হলাম। কিন্তু যা দেখলাম তাতে কথা শুনানো তো দূরে থাক চোখ চড়কগাছে!

বাসার সামনেই প্রায় গজ পঞ্চাশেক দূরে ডান দিকের ল্যাম্পপোস্টটার নীচে মানুষের জটলা। যেন কিছু একটা ঘিরে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু কি সেটা? দেখার কৌতুহল নিয়ে ছাদে গেলাম।যা দেখলাম তাতে স্বাভাবিক ভাবেই একটা শকড খেলাম বৈ কি।তড়িঘড়ি করে গায়ের জামাটা লাগিয়ে নীচে নেমে গেলাম দেখতে ।ভীরের কাছে যেতেই সবাই সামনে থেকে সরে জায়গা করে দিলো।
গত এগারো বছর ধরে আছি এখানে। এ এলাকায় যে ক'জন মানুষের বাস তারা সবাই আমাকে ভাল করে চিনে। ভীরের দিকে তাকিয়ে বললাম,
"কেউ পুলিশে খবর দিয়েছেন? "
কেউ কিছু বলল না।একজন সামনে এগিয়ে এসে বলল,"স্যার,দশ পনের মিনিট আগে আমি পানি ছাড়ার জন্যি বাহির হইছি। হয়া দেখি এই অবস্থা।
ভয়ে আমি চিৎকার মারলি ওরা সব বাড়ায়ে আসে।"
"এখনো কাউরে কিছু কই নাই স্যার। "

আমি পকেট থেকে সেল ফোনটা হাতে নিয়ে বগুড়া সদরের ওসি নাজমুল সাহেব কে ফোন দিলাম। ও পাশ থেকে ঘুম ঘুম কন্ঠে ফোন রিসিভ করেই সালাম দিলো।
"সালামু আলাইকুম স্যার, এত রাতে? কোন সমস্যা স্যার? "
আমি সংক্ষেপে ঘটনাটা খুলে বললাম। ও পাশ থেকে নাজমুল সাহেব ফোন রাখতে রাখতে বললেন, "স্যার, ১০ মিনিটের মধ্যে চলে আসছি স্যার। "
আমি যদিও জানি, বিশ মিনিটের মধ্যে উনি আসবেন না,তবুও বললাম, "ঠিক আছে চলে আসেন।"

ভীরের কাছে ফিরে সবাইকে কিছুটা দূরে সরে থাকতে বললাম।ইতোমধ্যে লোকজনের সংখ্যাও বেড়ে গেছে।এমতাবস্থায় এভিডেন্স নষ্ট হওয়ার একটা ভয় থাকেই। যেহেতু ওসি সাহেব আসতে খানিকটা দেরী হচ্ছে তাই নিজের মত কিছু তথ্য সংগ্রহ করার জন্য উপস্থিত সকলের একটা ফেস ভিডিও এবং কয়েকটা স্থির চিত্র নিলাম।আর সেই সাথে রাস্তায় পরে থাকা লাশের।এতে ঘটনাস্থলে কারা কারা তাৎক্ষনাত উপস্থিত ছিলো তার একটা বিশ্বস্ত রেকর্ড থাকলো এবং লাশের অবস্থার।

লাশটাকে ভাল ভাবে পর্যবেক্ষণ করলাম।যুবক ছেলে।বয়স কত আর হবে,এই ছাব্বিশ সাতাস । গায়ে হাফ হাতা ব্লু টি শার্ট,পরনে ব্লাক জিন্স প্যান্ট। তবে একটা আভিজাত্য আছে চেহারায় এবং পোশাকে, তা দেখলেই বুঝা যায়।হাতে চেনওয়ালা ঘড়ি,পায়ে এপেক্স এর কেডস।বাম পায়ের চেয়ে ডান পায়ের গোড়ালিতে জুতোর ক্ষয় বেশি। জুতোতে ঘাস ও কাদা লেগে আছে,আর একটা ধানের পাতা। বুঝাই যাচ্ছে মৃত্যুর আগে বেশ খানিকটা ধস্তাধস্তি চলেছে অপরাধীর সাথে।তবে অপরাধী একজন হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। সুপরিকল্পিত মার্ডার এটা। (লাশ খুনের স্পট থেকে দূরে ফেলা হয়েছে)

যাই হোক,বেশ কিছুক্ষণ সময় চলে গেছে।ওসি সাহেবের দশ মিনিট অতবাহিত হয়ে আধা ঘন্টা হলো প্রায়।এখনো তার দেখা নেই।এমনকি তার গাড়ির টিকিটিও দেখতে পাচ্ছি না।

আমি নিজের মত করে লাশের একটা সুরতহাল করলাম নিজের প্রয়োজনের জন্যই।এবার ভীরের দিকে লক্ষ্য করে বললাম,লাশটাকে কেউ চিনে কিনা?
সবাই অস্বীকার করলো। অর্থ্যাৎ কেউই চিনে না।এলাকার হলে অবশ্যই চিনতে পারত।কেননা এই আশে পাশের আধা কিলো মিটার এর মধ্যে মাত্র দু'টি বাড়ি আর একটি দোকান ঘর ছাড়া কিছু নেই।সব মিলিয়ে জনা পঞ্চাশেক লোক থাকে এখানে। তার মধ্যে আমার পাঁচ তলা বাসায় থাকেন ছেলে-বুড়ো-বুড়ি-বউ বাচ্চা সহ মোট জনা ত্রিশ লোক। রাস্তার অপজিটে আজাদ সাহেবের বাসায় জনা পনেরো ষোলজন । আর দু'জন তো সবসময় দোকানেই থাকে,রহমান আর ওর বউ। অতএব, এখানকার বা আশে পাশের কেউ হলে নিশ্চয়ই চিনতে পারত। আর ভীরের মধ্যে যারা আছেন তারা সবাই প্রায় এ পাড়ারই, চার পাঁচ জন ছাড়া।

যাই হোক,
দূরে পুলিশের ভ্যানের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।মানে ওসি সাহেব আসছেন। ইতোমধ্যে তার দশ মনিট,পাঁচ মনিট,আধা ঘন্টা কেটে গেছে।অবশেষে তিনি পৌছলেন।
ভীরের পাশে গাড়ি দাড় করিয়ে আমার সামনে এসে ছালাম
জানালো।
"স্যার,বলেন স্যার "
বললাম, "এখনই কিছু বলছি না,তুমি লাশটাকে আগে দেখো।তারপর যা করার করো ।
ও হ্যা শোন,একটা কথা বলে যাই,
মার্ডার টা কিন্তু অন্য কোথাও হয়েছে।পরে এখানে এসে ফেলে দেয়া হয়েছে। শক্ত খোঁজ খবর নিয়ে কি রিপোর্ট পাও তা কাল সকাল দশটায় আমাকে জানিয়ো।।আমার এখন ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমোতে গেলাম ।
"স্যার, স্যার, আপনি কি করে জানলেন যে অন্য কোথাও মার্ডার করে এখানে এনে ফেলা হয়েছে? "
আমি মৃদু হেসে বললাম কালকে সকালে বলবো। এখন তুমি তোমার কাজ কর।দেখ তোমার তদন্তে কি আশে? পারলে পাশের এলাকাটা একটা চেক করে এসো।"


আর কথা না বলে আমি বাসায় চলে এলাম।অপরাধী কে তা শনাক্ত করার আগে ভিকটিমের পরিচয় জানা আবশ্যক।দেখা যাক কি হয়?
রুমে এসেই সিগারেট টা জ্বালিয়ে যে চিন্তাগুলো মাথায় এলো, তা হল,১। ছেলেটা কে? ২। কেন মার্ডার হলো? ৩। কিভাবে হলো? ৪।কে করল?
থাক,এখন আর ভেবে কাজ নেই।সিগারেটের শেষাংসে আরেকটা টান দিয়ে ফেলে দিলাম।এখন দেয়াল ঘড়ি বলছে প্রায় সারে চারটা বেজে গেছে।তা মানে আমার ঘুম আড়াই ঘন্টা ইন্টারাপ্টেড।তাই বেশ বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়ে পুষিয়ে নিতে হবে।



 


শেষ রাতের খুন – ২







---------------------
শেষ রাতে ঘুমানোর পর যখন ঘুম ভাঙলো তখন ঘড়ির কাটায় ঠিক দশটা। জানালার পর্দা ফুরে সকালের সূর্যটা আমার ঘরের দেয়ালে লুকোচুরি খেলছে।এদিকে রাতের ঘটনা প্রায় ভুলেই গেছিলাম । কিন্তু বাহিরের শোরগোল শুনে মনে পড়ে গেলো।হাত বাড়িয়ে টেলিফোন টা হাতে নিয়ে নীচে দাড়োয়ান কে ফোন করলাম।নাজমুল এসেছিলো কিনা জিজ্ঞাসা করতেই দাড়োয়ান জানালো,"স্যার, ও সাহেব ত এক ঘন্টা আগে এসে বসে আছে। আপনে ঘুমায়া আছেন দেইখ্যা ডাকে নাই।"
মনে মনে বললাম, ভাল করেছে। তারপর ওসি কে ভিতরে পাঠাতে বলে আমি ফ্রেশ হতে গেলাম।

ড্রইং রুমে আসতেই দেখি নাজমুল সাহেব সোফায় বসে কি যেন ভাবছেন । এয়ার কন্ডিশনেও দরদর করে ঘাম ঝড়ছে কপাল বেয়ে ।এক হাতের আঙুলের মধ্যে আরেক হাতের আঙুল দিয়ে কচলাচ্ছেন।এটা নিশ্চিত টেনশনের লক্ষন অথবা প্রচন্ড উত্তেজনা প্রকাশ করছে। বুঝতে বাকি থাকলো না,কিছু একটা গরমিল হয়েছে।এবং প্রচন্ড প্রেশারে আছে সে।
আমি ওকে সম্বোধন করে বললাম, "কি খবর নাজমুল, তারপর সব ঠিক ঠাক আছে তো? "
আমাকে দেখেই দাড়িয়ে সালাম জানালেন।
"কর্ণেল মিথ, ঠিক ঠাক কিছুই নেই।একটু ঝামেলায় পরে গেছি। "
বললাম, "কিসের ঝামেলা? এসব খুন খারাবি তো অহরহ ঘটছে নতুন কি! কেস ফাইল করো তারপর তদন্ত করতে করতে অপরাধী খুঁজে না পেলে ফাইল বন্ধ করে দাও।এ আর এমন কি? "

ওকে বসতে বলে আমিও সামনের সোফায় বসলাম।আমার বাসার কাজের লোকটাকে দু কাপ চা আনতে বলে নিজের সিগারেট টা ধরিয়ে বললাম, "তা বল,কিসের ঝামেলা।"
নাজমুল একটু বিচলিত হয়ে বলল,"স্যার, যে ছেলেটা খুন হয়েছে সে বিখ্যাত ব্যবসায়ী রহমান ট্রেডার্সের মালিক আব্দুর রহমানের একমাত্র ছেলে। শহরের জলেশ্বরী তলাতেই বাসা। ঢাকায় একটা সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকুরী করে।গতকাল সে বিকেল আনুমানিক পাঁচটায় শেষ বারের মত বাসায় ফোন দেয়।যখন সে ফোন দিয়েছিলো তখন সে শেরপুর পার হয়েছে বলে জানায়।
স্বাভাবিক ভাবেই আধা ঘন্টা থেকে পৌনে এক ঘন্টার মধ্যে বাসায় ফেরার কথা।"
-হুম তারপর।
নাজমুল সাহেব বলতে শুরু করলেন, "কিন্তু সন্ধ্যা সাতটা বেজে গেলেও সে বাড়িতে না আসায় বাড়ির লোকজন চিন্তায় পড়ে যায়।
ওহ, তার আগে বলে নেই ছেলেটার নাম অয়ন।এক পা খানিকটা খোঁড়া। কিন্তু খুঁড়িয়ে হাটলেও বুঝার উপায় নেই"
আমি বললাম, "হুম ডান পা।"
নাজমুল বলে উঠলেন,"স্যার,আপনি কি করে জানলেন? আপনি তো ওকে চিনেনই না।"
এরই মধ্যে কুদ্দুস মিয়া(আমার কাজের লোক) চা নিয়ে হাজির। টেবিলের উপর দু কাপ চা রেখে চলে গেলো।
নাজমুলের হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়ে বললাম,"নাও চা খাও।
ও হ্যা,কি যেন বলছিলে? কি করে জানলাম সে খোঁড়া! হা হা হা।
শোন নাজমুল, সাতাশ বছরের সার্ভিস লাইফের অভিজ্ঞতা থেকে যেটা সবচেয়ে বেশি শিখেছি তা হলো "পর্যবেক্ষণ" করা। আমাদের আর্মিতে তোমাদের মত এসব কেস ফেস নাই বললেই চলে।অর্থ্যাৎ খুন খারাবির কেস আর্মি দেখে না।কিন্তু তবুও আমরা একজন মানুষের পায়ের নখ থেকে চুল পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে তার অতীত ভবিষ্যৎ বলতে পারি।
আর তাছাড়া জানোই তো,আমার রিটায়ারমেন্টের পর বেশ কিছু পুলিশ কেস সলভ করেছি।"
নাজমুল সাহেব কিছুটা নার্ভাসনেস কাটিয়ে উঠেছে ইতোমধ্যে। বলল,"হ্যা স্যার, আপনার কথা তো অনেক শুনেছি।পত্রিকায় আপনার নামও বেড়িয়েছে বহুবার। তবে প্রেসিডেন্ট রোহানীর স্ত্রী হত্যার কেসটা সমাধান করে সারা দেশ আপনাকে চিনে।"

-হা হা হা।আচ্ছা থাক সেসব।
"কথা হচ্ছিলো আমি কি করে জানলাম, ছেলেটা খোঁড়া, এই তো? "আমি প্রসঙ্গে ফিরে এলাম।
-হ্যা স্যার।
তাহলে শোন,"গতকাল ছেলে টার পায়ের জুতো দেখলাম ডান পায়ের গোড়ালিটা বাম পায়ের চেয়ে বেশি ক্ষয়ে গেছে।আর এপেক্স এর যে জুতো সে পড়ে ছিলো তার দাম বর্তমানে প্রায় আটহাজার টাকার চেয়ে একটু বেশি হবে হয়ত। এত দামি জুতো সাধারণ ঘরের ছেলেদের পড়বার কথা নয়।
আর তখনই বুঝেছি ছেলেটা খোঁড়া এবং কোন অভিজাত ঘরের ছেলে।"

নাজমুল সাহেব খানিকটা উৎফুল্ল হয়ে বলল,"রাইট স্যার।একদম ঠিক বলেছেন। "
আমি মুচকি হেসে বললাম,"তারপর বলো,সন্ধ্যার সময় অয়নের ফোনে কি বাড়ির লোকজন ফোন দিয়েছিলো? "
নাজমুল সাহেব ট্রেকে ফিরে গেলেন।"হ্যা স্যার।সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে অয়নের বাবা অয়নকে ফোন দেয়।প্রথমে একবার রিং হলেও পরের বার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।"
-হুম, তারপর?
-"তারপর স্যার, অয়ন সারা রাত বাসায় ফিরে না এলে আব্দুর রহমান সাহেব সকালে পুলিশ স্টেশনে এসে ডায়রী করে।আমি তখন থানায় ছিলাম না।
থানায় এসে ডায়রী করার কথা শুনেই রহমান সাহেব কে আমি ফোন দেই। তখন সকাল সোয়া আটটার কথা।
রহমান সাহেব দশ মিনিটে থানায় এসে হাজির হোন।তারপর আমি তাকে সাথে করে মর্গে নিয়ে গেলে উনি ছেলের লাশ দেখে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠেন। আমি কোন মত শান্তনা দিয়ে উনাকে দুজন কনষ্টবলের সাথে বাসায় পাঠিয়ে দেই।উনি এমনিতেই বয়স্ক লোক তার উপর হার্টের রোগী। ভাবছি,উনার না আবার কিছু হয়ে যায়!! "

নাজমুল সাহেবকে একটু থামিয়ে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, "লাশের সাথে কি কি পাওয়া গেছে?"
"স্যার, লাশের পকেটে মোবাইল ফোন,হাতে ব্র‍্যান্ডের হাত ঘড়ি,মানিব্যাগ, মানিব্যাগের মধ্যে দু'হাজারের মত টাকাও ছিল। তাছাড়া মানিব্যাগে একটা মেয়ের ছবি ছিলো যা ক্রেডিট কার্ডের পেছনে লুকোনো ছিলো।
মনে হচ্ছে না এটা ছিনতাই বা এ ধরনের কোন কেস।"

প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে মুখে নিয়ে ধরাতে ধরাতে বললাম,"সে আমি জানি।এটা ছিনতাই জাতীয় কেস না।সুপরিকল্পিত হত্যা।শুধু তাই নয়,এতে একাধিক ব্যক্তি জড়িত।"

নাজমুল সাহেব কিছুটা অপ্রতিভ হয়ে জিজ্ঞাসা করল,"কিন্তু স্যার,আপনি এতটা শিওর হচ্ছেন কিভাবে? হতে পারে তাকে হত্যা করে তার ল্যাপটপ টা ছিনিয়ে নিয়েছে।কিংবা নগদ আরো অর্থ ছিলো সেগুলো নিয়েছে।মানিব্যাগ টাতে হাত দেয়ার আগেই কোন সমস্যার কারনে পালিয়ে গেছে? কিংবা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে হত্যা করেছে। "
-"এক্সাকটলি তাই।পূর্ব শত্রুতার কারনে হত্যা করা হয়েছে তাকে।এবং সুপরিকল্পিত ভাবে।"আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম।
ও কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, "কিন্তু কিভাবে? "

আমি সিগারেট টাতে শেষ টান দিয়ে এশট্রে তে ফেলতে ফেলতে বললাম,"আচ্ছা, অয়নের পায়ে যে জুতো ছিলো তাতে সবুজ ঘাসের চিহ্ন ছিলো এবং গেঞ্জির ভেতরে যে ধানের পাতা ছিলো সেটা কি দেখেছো? "
নাজমুল মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো, "না।"
আমি বললাম, "ওর জুতোয় ঘাসের রং,কাদা আর বুকের উপর ধানের পাতা বলে দিচ্ছে ওকে এমন কোন জায়গায় খুন করা হয়েছে যেখানে ধান ক্ষেত আছে।এবং অপরাধীর সাথে বেশ কিছুটা ধস্তাধস্তিও হয়েছে।ফলে জুতোয় ঘাসের রং এবং গেঞ্জির সাথে ধানের পাতা আটকে রয়েছে।
যে রাস্তায় ওর লাশ পাওয়া গেছে তার আশে পাশে কি কোথাও ধানের ক্ষেত আছে? নাই।অতএব ওর খুনটা হয়েছে দূরে কোথাও।

এবার বলো, ২৫/২৬ বছরের স্বাস্থবান একটা যুবকের মৃত দেহ একজন মানুষের পক্ষে টেনে আনা এবং রাস্তার উপর ফেলে রাখা কতটুকু সম্ভব?

নাজমুল মাথা ঝাকিয়ে বলল,"নট পসিবল স্যার।আর তাছাড়া কিছু দুরেই মেইন রোড।সেখান দিয়ে সারা রাত অহরহ মানুষ চলে।মানুষের চোখের সামনে দিয়ে অপরাধী একটা মৃত দেহকে টেনে নিয়ে বোকামি করতে যাবে কেন? "

-"ঠিক ধরেছ।তাহলে নিশ্চয়ই খুনে অংশগ্রহণকারী একজন ছিলো না।অবশ্যই একাধিক ব্যক্তি যোগসাজশে খুনটা করেছে।আর যেহেতু একাধিক ব্যক্তির যোগসাজশ আছে এবং বিষয়টা ছিনতাই জনিত না অতএব এটি একটি প্লানড মার্ডার।
What do you think? "

-"You're absolutely right sir. Thank you sir , অন্তত কেসটার ব্যাপারে একটা তথ্য পাওয়া গেলো।কিন্তু খুনের মোটিভ টা কি হতে পারে তা কিছুতেই মাথায় আসছে না।
অয়নের বাবার সাথে কথা বলে যতটুকু জানলাম অয়ন খুব সাদাসিধে ছেলে ছিলো। কম্পিউটার ছাড়া ও কিছুই বুঝতো না। কোন বাজে ছেলেদের সাথে আড্ডাও দিত না। এবং ফ্রেন্ড বলতেও তেমন কেউ ছিলো না।সারা ক্ষন বাসাতেই থাকতো। "

-"খুনের মোটিভ সম্পর্কে পরে জানা যাবে।এত দ্রুত কেস সলভ করলে তো তোমাদের ডিপার্টমেন্ট এর বদনাম হবে! হা হা হা।একটু ধৈর্য্য ধরো।
আপাতত লাশের পোশমর্টেম টা হতে দাও।এবং ওর ফ্যামিলিতে জিজ্ঞাসাবাদ করো।
আর ও হ্যা,অয়নের মানিব্যাগের মধ্যে যে মেয়েটার ছবি ছিলো, সে মেয়ের সম্পর্কে খোঁজ নিতেও ভুলো না কিন্তু।"

দুপুর প্রায় সাড়ে বারোটা বেজে গেছে।সকালে খাওয়া হয়নি এতক্ষন মনেই ছিলো না।কুদ্দুস মিয়া দু তিনবার সামনে এসে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে আবার চলে গেছে।এতক্ষণে বুঝলাম ও হয়ত আমার খাবারের কথা বলতে এসেছিলো। কিন্তু কথা বলায় ব্যস্ত দেখে কিছু বলেনি।আসলে বয়স তো আর কম হলো না,প্রায় তেষট্টি চলছে।এ সময় একটু আধটু ভুলে থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না।কিন্তু আর্মিতে নিয়িমিত পিটি-প্যারেড,ড্রিল করতে করতে শরীর বুড়ো হয়নি এখনো,যতটা কুদ্দুস মিয়া পঁয়তাল্লিশ বছরে হয়েছে।
যাই হোক, আমি দুবার হাত ঘড়ির দিকে তাকাতেই নাজমুল সাহেব বললেন,"স্যার,এখন উঠি তাহলে।অন্য কোন প্রয়োজন হলে আবার আসবো কিন্তু। "
আমি ওর সেন্সে মুগ্ধ।খুব দ্রুত আমার মনের অভিব্যক্তি বুঝে নিয়েছে।এরকম জ্ঞানী লোকদের সবসময় কদর করি আমি।
হাত বাড়িয়ে বললাম,"বেষ্ট অব লাক। "







শেষ রাতের খুনঃ ৩

নাজমুল সাহেব চলে গেলেন।কিন্তু চলে যাবার পর নাজমুল সাহেবকে ব্রেকফাস্ট করতে বলার সৌজন্যতা টুকু না দেখানোয় নিজেই কিছুটা লজ্জিত হলাম।নিশ্চয়ই নাজমুল সাহেবেরও কিছু খাওয়া হয়নি! ধ্যাৎ!
দিনদিন এত বোকা হয়ে যাচ্ছি ভাবতেই পারিনা।
যাই হোক, কুদ্দুস মিয়া ততক্ষণে আবার সামনে চলে এসেছে।
"স্যার, আপনে তো এখনো কিছু খান নাই। ভাত আবার গরম করে টেবিলে দিছি।চলেন খাবেন। "
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, "কুদ্দুস মিয়া,তোমরা খাইছো তো? "
কুদ্দুস মিয়া এক গাল সরল হাসি মুখে নিয়ে বলল,"না স্যার।আপনে না খাইলে খাই ক্যামনে? আপনে যদি না খাইয়া থাকতে পারেন, আমরা পারবো না ক্যান! "
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, "আশ্চর্য! তাই বলে কি না খেয়ে থাকবা? প্রতিদিন এরকম করো নাকি!এত বেলা পর্যন্ত না খেয়ে থাকো? "

কুদ্দুস মিয়া তার সহজাত সরল হাসি মুখে টেনে বলল,"স্যার,আপনে তো প্রতিদিন সকাল সাতটার মধ্যে নাস্তা করেন। আমরাও তাই করি।আপনেক খাওয়াইয়া তারপর খাই। আমরা আপনার ভৃত্য তবুও আপনি যা খান আমরাও তাই খাই,এটা যে কতবড় মেহেরবান তা আপনেক বুঝাইবের পারবো না।"

আমি ওর কথা শুনে তাজ্জব হয়ে গেলাম । এরা কেউই আমি না খেলে খায় না।
আজ প্রায় ত্রিশ বছর ধরে কুদ্দুস মিয়া আমার বাসায় কাজ করে।আমি ওকে ছোট ভাইয়ের মতই দেখি।দেশে বিদেশে যেখানেই যাই এ বাড়ির সমস্ত দায়িত্ব ওর হাতে দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত থাকি। অনেক বেছে বেছে ওর জন্য পাত্রী দেখে বিয়েও দিয়েছিলাম।তাও প্রায় পচিশ বছর হলো। ওর বউও থাকে সাথে।বাচ্চা কাচ্চা নাই, দুজনের সংসার।বাচ্চা হয়না। অনেকবার বলেও ছিলাম, বাচ্চা কাচ্চা দত্তক নিতে।নেয় নাই।
দুজনের একই কথা,"স্যার, আমাদের ছেলে মেয়ে দিয়ে কি হবে! সৌমিক বাবাজীই আমার ছেলের মত । এ বাড়িতে ঢুকে সৌমিক বাবাজিকে দেড় বছরের পেয়েছিলাম। ও থাকতে আমার ছেলে মেয়ের কি দরকার! "

সত্যিই তাই।কুদ্দুস মিয়া আর ওর বউ মালতি সৌমিককে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে। সৌমিকের বয়স যখন কেবল আট তখন আমার স্ত্রী ইহলোক ত্যাগ করে।আমি তখন কেবল মেজর পদে। বিশেষ ক্ষমতায় ন্যাশনাল সিক্রেট সার্ভিসে বদলি হয়েছি । মিরার মৃত্যুর পর সৌমিকের ভবিষ্যৎ এর দিকে তাকিয়ে আমি আর বিয়ে করিনি ।কিন্তু কাজের চাপে বাহিরে বাহিরে থাকতে হত প্রায়শই । তখন কুদ্দুস আর মালতিই আমার সৌমিককে মানুষ করেছে। সৌমিকের স্কুল থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়া,আদব কায়দা সবকিছু শিখিয়েছে ওরা দুজন। আমি ওদের পূর্ণ ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছিলাম,যদি সৌমিক দুষ্টোমি করে তবে শাসন করার।প্রয়োজনে গায়ে হাত তোলার। কিন্তু কখনো তা প্রয়োজন হয়নি।মা হারা সৌমিক এত ভদ্র, নম্র এবং মেধাবী ছিলো যে যেখানেই যেত প্রশংসা কুড়িয়ে আনতো।নিজের ছেলেকে নিয়ে এত বড় গর্বের আর কি হতে পারে! আর সৌমিকও কুদ্দুস চাচা আর মালতি আন্টির জন্য পাগল।
বছর সাতেক আগে সৌমিক কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্কলার্শিপ নিয়ে যখন আমেরিকায় গেলো সেদিন যেন এ বাড়ি এক মৃত বাড়ির মাতম তুলেছিলো। সৌমিকও তার দায়িত্ব, কর্তব্য কখনো ভুলে নি। আমেরিকা গিয়ে ওখান থেকে প্রতি দুদিন অন্তর অন্তর ফোন করে সবার সাথে কথা বলত।আর চাচা-চাচীর সাথে তার কথা বলাই চাইই চাই । এখন পর্যন্ত সে নিয়মের এতটুকু ব্যত্যয় ঘটেনি। দেশে ফিরলে বাড়ির সবার জন্য এটা সেটা নিয়ে এসে ভর্তি করে।এমন ছেলেকে নিয়ে বাবা হিসেবে স্বাভাবিক ভাবেই আমি গর্বিত,শুধু গর্বিত বললে ভুল হবে,ভীষণ গর্বিত।

কিন্তু কুদ্দুস মিয়া যে আমি না খেলে খায় না এটা শুনে খুব খারাপ লাগতে শুরু করলো। ওকে ধোমক দিয়ে বললাম,"আমি খাই বা না খাই, তোমরা কখনো উপোস থাকবে না।
আর যাও,আমি আসিতেছি।"

#

বিকেল তখন পাচটা। নাজমুল সাহেব ফোন করলেন।আমি তখন বারান্দায় বসে চা খাচ্ছি।
ফোন ধরতেই নাজমুল সাহেব সালাম দিয়ে বললেন,
"স্যার, পোশমর্টেম রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। দুপুরেই অয়নের লাশ ওর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
রিপোর্ট বলছে,অয়নের মৃত্যু ছুড়িকাঘাতে হয়নি বরং তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।এবং খুনি পেশাদার বলে মনে হয় না ।পেটে এবং বুকে যে ছুড়ি মারা হয়েছে তাতে মৃত্যু হবার মত ক্ষত হয়নি।বরং মৃত্যু হবার পরে তাকে ছুড়িকাঘাত করা হয়েছে। কিন্তু কোন ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া যায়নি।গামছা জাতীয় কিছু দিয়ে শ্বাসরোধ করা হয়েছে।"
"আর, উপর থেকে প্রচন্ড প্রেশার আসছে স্যার।স্বয়ং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাহেব এ ব্যাপারে ফোন করেছিলেন।উপর মহল আমার উপরেই তদন্তের ভার দিয়েছে।"

আমি বললাম, "তো,পরিবারের সবাইকে জিজ্ঞাসা বাদ করেছো? তারা কি কাউকে সন্দেহ করে? "

নাজমুল সাহেব কিছুটা হতাশ হয়ে বললেন,"হ্যা স্যার,জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা কাউকেই সন্দেহ করে না।এমনকি অয়নের দু একজন যেসব বন্ধু ছিলো তাদের কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কিন্তু তারাও কিছু বলতে পারছে না । আর স্যার,অয়ন আসার দিন ল্যাপটপ নিয়ে আসেনি। ল্যাপটপ তার ঢাকাতেই আছে। এমতাবস্থায়, তদন্ত আগানো খুব মুশকিল। তারপরেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি খুনের মোটিভটা শনাক্ত করার জন্য।"

আমি চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে বললাম,"ওকে, ক্যারি অন। দেখো কি হয়! কোন প্রয়োজন হলে আমাকে বলো।"

নাজমুল সাহেব ধন্যবাদ দিয়ে ফোন টা রেখে দিলেন।
একটু অবাক হওয়ার মত বিষয়। যার কোন শত্রু নাই,তেমন কোন বন্ধুও নাই,যে সারাক্ষণ কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত থাকে তার আবার শত্রু কে হতে পারে! কোথায় যেন কিছু একটা মিসিং হচ্ছে । কিন্তু কি সেটা? গার্লফ্রেন্ড? পারিবারিক সম্পত্তি? নাকি অন্য কিছু?

গার্লফ্রেন্ড নিয়ে কিছু হলে তার বন্ধুদের কেউ না কেউ কিছু না কিছু জানার কথা।আর পত্রিকা পড়ে যতটুকু জানলাম এবং ব্যক্তিগত ভাবে আব্দুর রহমান সাহেব কে যতটা জানি,তাতে পারিবারিক সম্পত্তি তে তো আর কোন অংশীদার নেই। তার বাপ দাদার সকল সম্পদের একমাত্র ওয়ারিশ সে।
তাহলে? আচ্ছা দেখা যাক।পুলিশ কি তদন্ত করে!

 

সেদিনের পর নাজমুল সাহেবের আর কোন ফোন আসলো না। প্রায় তিন মাস পার হয়ে গেছে ইতোমধ্যে । আমিও দৈনন্দিন ব্যস্ততায় অয়নের ব্যাপারে সব ভুলেই গেছিলাম।তার উপর প্রায় মাস খানেক আমেরিকায় সৌমিকের কাছে ছিলাম। তাই সব কিছু প্রায় ভুলেই গেছি।

আমেরিকায় এবার যাবার একটা বিশেষ উদ্দেশ্যও ছিলো। আমার ছেলে এবং তার প্রকৌশলী বন্ধু জিমি ও ডাক্তার বন্ধু রিচার্ড মিলে এমন একটা নতুন প্রযুক্তি আবিস্কার করেছে যা মানুষের শরীরের যে কোন অংশ বা নমুনা থেকে তার ডিএনএ শনাক্ত করতে সক্ষম তাও মাত্র ৯০ সেকেন্ডে। সৌমিক সেই ডিভাইসে ব্যবহৃত সফটওয়্যার তৈরি করেছে।এতে ডিভাইসটিতে নমুনা রাখা মাত্র তা এর ডাটাবেজে সংরক্ষিত যে কোন ডিএনএ এর সাথে ম্যাচ করে কিনা,তাছাড়া ডিএনএর বয়স ইত্যাদি নির্ণয় করতে সক্ষম। এবং ১০০% সঠিক উত্তর প্রদান করতে পারে।
এই নতুন ডিভাইস আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে।ফলে ছেলের সংবর্ধনায় পিতার নিমন্ত্রণ ছিলো ওর্গানাইজারদের পক্ষ থেকে।
তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো বাংলাদেশকে সেখানে হাইলাইট করতে পারা । প্রথম দশজনের মধ্যে বাংলাদেশি আরেকটা ছেলে ছিলো ইমতিয়াজ। তার উপস্থাপিত সফটওয়্যার যে কোন ওয়েবসাইট এর সিকিউরিটি ভেঙে ফেলতে সক্ষম এবং শুধু তাই নয় এটি এমন একটা হ্যাকিং টুল যা যে কোন ওয়েব সাইটের এড্রেস দেয়ার সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয় ভাবে কাজ করতে পারে।

সফটওয়্যার এর নাম "কিংকোবরা"। আর যে ছেলেটা এটাকে প্রেজেন্ট করলো সে তৎক্ষনাৎ বিলগেটসের অনুমতিতে মাইক্রোসফটের ওয়েব সাইট হ্যাক করে ফেলে ভীষণ সারা ফেলে দিয়েছিলো ।
এটা খুবই উন্নতমানের কোডিং হলেও ঝুঁকি বিবেচনায় এবং সাম্ভাব্য অপব্যবহারের জন্য তাকে দশ নাম্বারে রাখা হয় এবং সফটওয়্যার দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলারে ইউএস গভঃমেন্ট সফটওয়্যার টি কিনে নেয় । এবং বলা হলো,যদিও ডেপেলপারের মেধা অসামান্য তাই তাকে সেরা দশে রাখা হয়েছিলো কিন্তু তার এই সফটওয়্যার আন্তর্জাতিক স্বার্থের জন্য হুমকিসরূপ বিবেচনা করে সফটওয়ার টি কিনে নেয়া হলো এবং এটি ব্যবহার করা হবে না বলে জানানো হয়।তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র তাকে চাকরিরও অফার করে ।

তবে যাই হোক তখন মনে হয়েছিলো বাংলাদেশি একটা ছেলে যে দুনিয়া কাঁপিয়ে দিতে পারে এটা বাংলাদেশের জন্য বড় পাওয়া।

কিন্তু অয়নের মার্ডার কেসের ব্যাপারে তিন মাসে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তা আমি কিছুই জানতাম না,এমনকি জানার চেষ্টাও করিনি।হঠাৎ তিন মাস পর বাংলাদেশ ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স থেকে আমার এক সহকর্মী যে কিনা বর্ত্তমান NSI চীপ, সে ফোন করলো ।

ফোন করেই বলল,"ইজ ইট কর্ণেল.মিথ?
আমি বললাম, ইয়েস। হু ইজ ইট?
ওপাশ থেকে প্রতিউত্তর এলো," আমি কারাগার থেকে পিজিওন(Pigeon) (এটা বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত নাম) বলছি । ওর এরকম ছদ্ম নাম ব্যবহার দেখেই সন্দেহ হলো ।
বললাম,"ইয়েস মি.পিজিওন। হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ? "
-"আই নিড টু মিট ইউ ইমেডিয়েটলি। Would you please give me some times? "
ওর গলার স্বরে নার্ভাসনেস কাজ করছে বুঝতে পারছি।
বললাম,"Its okey but When and how? "
মি.পিজিওন ও পাশ থেকে বলে উঠলেন,"I'm on the way to Bogra. রাত আটটা নাগাদ পৌঁছে যাবো।সমস্যা হবে কি? "
আমি বললাম, Its okey. No problem . I'll be very happy .যখন খুশি চলে আসুন।"
-"থ্যাংক ইউ কর্ণেল।"

ফোনটা রেখে দিলো সে।কিন্তু আমি একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম এটা ভেবে যে,হঠাৎ NSI এর আমাকে প্রয়োজন হলো কেন? আর কেনই বা মসিউর আমার সাথে ছদ্ম নামে কথা বলল? বড় কোন সমস্যা? কিন্তু এন এস আই এর প্রতিটি সদস্য এক একটা ট্যালেন্ট। এই অবসর প্রাপ্ত আর্মি অফিসার তাদের জন্য কি করতে পারে।আমি নিজেও সিক্রেট সার্ভিসে ছিলাম আর জানি কতটা চৌকশ অফিসার রা এখানে আসতে পারে!
যাই হোক,
মসিউর না আসা পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না আসলে ব্যাপারটা কি? আর আমাকেই বা প্রয়োজন কেন??





শেষ রাতের খুন ৪

মসিউর আসছে।যে কিনা আমার কলিগ এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলো একসময় । আর্মি থেকে রিটায়ারমেন্টের পর বেশ কয়বার ও আমার বাসায় এসেছে আড্ডা দেয়ার জন্য। আমিও গিয়েছি ওর ওখানে দশ-বারো বার।আমার ওয়াইফের মৃত্যুর পর মসিউরের ওয়াইফ সুস্মিতা আমাকে তার ছোট বোনের সাথে বিয়েও দিতে চেয়েছিলো, কিন্তু আমি করিনি।পরে শুনেছি সুস্মিতা ভাবীর ছোট বোন রিমির কোন এক পুলিশ অফিসারের সাথে বিয়ে হয়েছে। সেটা অনেক আগের কথা।

যাই হোক,
আজ মসিউর যে নেহায়েত আড্ডা মারার জন্য আসছে না তা বুঝতে পারছি।কোন গোপন বিষয়ে আলোচনা করার জন্যেই এবার তার আসা।কিন্তু কি জন্যে? কি সেই গোপন বিষয় হতে পারে?
সারা বিকেল অনেক চিন্তা ভাবনা করেও ঠিক আন্দাজ করে উঠতে পারলাম না।অবশেষে এ বিষয়ে চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে কুদ্দুস মিয়াকে বললাম,বাজার থেকে ভালো দেখে চিংড়ি মাছ নিয়ে আসতে।পেঁয়াজ দিয়ে চিংড়ি মাছের ভুনা মসিউরের খুব প্রিয়।আর আমার তো বটেই!তাই কথা যতই গোপন হোক চিংড়ি মাছের ভুনা খাবার টেবিলে থাকবে না, তা কি করে হয়!

 

কুদ্দুস মিয়াকে বাজারে পাঠিয়ে আমিও হাটাহাটি করার জন্য রাস্তায় বেরুলাম। সন্ধ্যে সাতটা বাজে কেবল কিন্তু রাস্তাঘাটে লোকজন নেই বললেই চলে।দু'একজন আমার মত পৌঢ় সন্ধ্যাকালীন হাটাহাটি করছে কিংবা পাশের চায়ের দোকানে বসে খোশগল্পে মেতে আছে দু একজন।।আমিও এদিক ওদিক ঘুরে চায়ের দোকানটাতে এলাম।যদিও বাহিরে আমি চা খুব কম খাই। কিন্তু আজ কেন জানি বাহিরেই চা খেতে ইচ্ছে হচ্ছে । দোকানের কাছে এগিয়ে যেতেই বেঞ্চে বসা মধ্য বয়সী দু'জন সালাম দিয়ে জায়গা ছেড়ে দিল। আমি মুচকি হেসে বললাম, "ঠিক আছে বসেন আপনারা।"
দোকানদার রহমান মিয়া আমাকে দেখেই বলল,"স্যার, চা দেব? "
আমি বললাম,"দাও দেখি।অনেকদিন তো বাহিরে চা খাওয়া হয়ই না।"
-ঠিক আছে স্যার। বসেন দিচ্ছি।
আমি পাশের ফাঁকা একটা বেঞ্চে বসে পড়লাম। মধ্যবয়সী যে দু'জন খোশগল্পে মেতে ছিল আমি আসায় তারা হঠাৎই তাদের গল্প থামিয়ে দিল।তাদের একজন অবশ্য এ এলাকারই বাসিন্দা।অন্যজন কে ঠিক চিনিনা।হয়ত বেড়াতে এসেছে,বন্ধু কিংবা আত্মীয় হবে আরকি।আমাকে দেখে পরিচিত জন বলল ,"স্যার,ভাল আছেন? "
-"হ্যা, ভাল আছি। আপনারা? "
-"জ্বি স্যার,ভাল আছি। বসেন স্যার।আমরা উঠি।"
-না না উঠবেন কেন! বসেন।
দুজনে আর কিছু না বলে বসে থাকল।
আমিও কিছু না বলে রহমান কে জিজ্ঞাসা বললাম, "কি খবর রহমান, তোমার ব্যবসা বানিজ্য কেমন? "
রহমান ঠোটটা ইষৎ কুঁচকিয়ে বলল,"আর বইলেন না স্যার,ওই মার্ডারডার পর লোকে কেউ এদিকে আসতেই চায় না।আর দেখতিছেন তো,সন্ধ্যা নাই হতিই রাস্তা শুশান হয়া গেছে! "
-হুম।
তারপর চায়ের কাপটা এগিয়ে দিতে দিতে বলল,"আচ্ছা স্যার,ওই ঘটনার কি হইলো? খুনি ধরা পড়িছে?দারোগা সাহেব তো তিন চারবার আইছিল আমার ইখেনে । আইস্যা এমন ভাবে জিজ্ঞাসা করে যেনি মার্ডারডা আমিই করিছি। বলেন তো স্যার,আমি কি করব! "
আমি হেসে বললাম, "তদন্তের প্রয়োজনে আসছিল হয়ত। টেনশন করো না।"
- না স্যার। আমার কিসের টেনশন। আমি তো দোকানদার মাত্র। আচ্ছা স্যার,শুনলেম গোয়েন্দা পুলিশ নাকি নামছে? "

আমি বললাম, " তা তো বলতে পারছি না। আমি তো আর পুলিশের কেউ না। "
-"আপনে পুলিশ না হইলে কি হবি,আপনে তো মিলিটারির লোক।আর পুলিশরা তো আপনেক দেখলিই স্যালুট দেয়।আপনে না জানলি আর কে জানবি?আর জানেন তো স্যার,পুলিশ তো খালি কাধে একটা বন্দুক লিয়ে যায় আর আসে। কাজের কাজ কিচ্ছু হয় না।সিনেমায় দেখেন না স্যার,মারামারি শেষ না হলি পুলিশ আসে না। যদি একটু আগেই আসে তালিই কিন্তু মারামারি হয় না,লাশও পড়ে না। কিন্তু ওরা তো তা করবি না। আসে মারামারির শেষে।"
আমি ওর কথায় না হেসে পারলাম না।হাসতে হাসতে বললাম, "সিনেমা আর বাস্তব একজিনিস না রহমান মিয়া।"
কিন্তু রহমান মিয়া বোধহয় আমার কথা মেনে নিতে পারল না। ভ্রু কুঁচকিয়ে বলল,"কি জানি স্যার! "

চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে কাপটা এগিয়ে দিলাম।পকেট থেকে টাকা বের করে দিতে দিতে বললাম, "রহমান, তোমার চা খেয়ে ভালই লাগলো। আজ উঠি।"
-"আচ্ছা স্যার।আইসেন। "
আমি হু বলে চলে আসলাম। আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম তেমন কেউ নেই।শুধু রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট গুলো ঠায় দাড়িয়ে আছে আর ল্যাম্পের আলোতে ছোট ছোট পোকাগুলো ছুটোছুটি করছে।এ যেন আলোক ছুয়ে মৃত্যুর প্রতিযোগিতা। কার আগে কে মরতে পারে তার প্রতিযোগিতা ।
#
আমি হাটতে হাটতে বাসার গেটের সামনে চলে এসেছি প্রায়। দাড়োয়ান এগিয়ে এসে গেট খুলে দিল।আমি জিজ্ঞাসা করলাম কেউ এসেছে কিনা।
দাড়োয়ান না সূচক মাথা নাড়িয়ে বলল, "না স্যার এখনো কেউ আসে নাই।"
বুঝলাম মসিউর এখনো পৌছে নি।অগত্যা বাসায় ঢুকে ওর পারসোনাল নাম্বারে একটা ফোন দেয়া সমীচীন মনে করে যেই না ভেতরের দিকে পা বাড়িয়েছি এমনি গেটে একটা গাড়ির হর্ণ বাজলো।পেছন ফিরে তাকাতেই দেখি কালো রঙের পাজারো দাড়িয়ে আছে গেটের বাহিরে। দাড়োয়ান গেট খুলে গাড়িটা ভেতরে আসতে দিলো।

হাতে একটা হ্যান্ড ব্যাগ, ফরমাল ড্রেস আপ গাড়ি থেকে নেমেই হাত বাড়িয়ে দিলো মসিউর ,"হ্যালো কর্ণেল,হাউ ডু ইউ ডু? "
আমি হেন্ডশেক করতে করতে বললাম, "হ্যালো, আরে আমি তোমাকেই এক্সপেক্ট করছিলাম । আমি ভাল আছি,তোমার কি অবস্থা? "
-"ইটস নট গুড কর্ণেল।" কিছুটা ফ্যাকাসে মুখ করে বলল।
-"ওকে,ওকে। লেটস হ্যাভ সাম রেষ্ট ফার্স্ট।উই হ্যাভ সো মাচ টাইম টু টক এবাউট দ্যাট। চল, আগে ভিতরে যাই।"
দাড়োয়ানকে বললাম,গাড়ি থেকে লাগেজ বের করতে। মসিউর আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,"আই ডোন্ট হ্যাভ এনি আদার লাগেজ। এটাই নিয়ে যাও।"
হাতের ব্যাগটা দাড়োয়ানকে এগিয়ে দিতে দিতে মসিউর বলল। দাড়োয়ান ওর হ্যান্ড ব্যাগটা নিয়ে আমাদের অনুসরণ করছে।

আমি মসিউরকে সাথে নিয়ে উপরে উঠে এলাম।ওর চেহারায় দীর্ঘ ভ্রমনের ক্লান্তির সুস্পষ্ট ছাপ আর কপালে চিন্তার ভাঁজ। ঘরে ঢুকেই ব্যস্ত তস্ত্র হয়ে মসিউর আমাকে বলল,"কর্ণেল,উই আর ইন ট্রাবল।আই নিড ইউর হেল্প । "
আমি ওকে বললাম, "রিল্যাক্স। কেবল তো এলে,আগে একটু রেস্ট নাও তারপর শুনছি সবকিছু। "
-"না ভাই,রেষ্ট নেয়ার মত অবস্থায় আমি নেই। ইটস আ ভেরী সিরিয়াস ম্যাটার টু ডিসকাস উইথ ইউ।"
আমি বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে।সব শুনছি।তার আগে তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো।ইউ নিড সাম রেষ্ট।
মসিউর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,"ওয়েল। পরেই আলাপ করছি কিন্তু রিমেম্বার ইটস আ ভেরী ইম্পর্টেন্ট ইস্যু। "
আমি মুচকি হেসে ওকে বললাম, "আই নো দ্যাট। ইম্পর্টেন্ট না হলে তুমি এভাবে আসতে না। গো এন্ড টেক আ বাথ দ্যান উই উইল হ্যাভ সাম ডিনার।তারপর তোমার সব কিছু শুনব। "
এতক্ষন মসিউর দাঁড়িয়েই ছিল।এরই মধ্যে কুদ্দুস মিয়া বাজার থেকে চলে এসেছে। আমি কুদ্দুস মিয়াকে ডেকে মসিউরের ঘর দেখিয়ে দিতে বললাম।
কুদ্দুস মসিউরকে সাথে নিয়ে উপরে গেল।।

#
বহুদিন পর মশিউরকে পেয়ে ভালই লাগছে। মিলিটারিতে থাকার সময়কার হাজারো স্মৃতি আছে দুজনের।সেই ট্রেইনিং এর সময় ওর সাথে প্রথম পরিচয়।তারপর দীর্ঘ ত্রিশ বছর বলতে গেলে একই সাথে চাকুরী করেছি।হেসেছি,খেলেছি,সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিয়েছি।সত্যি বলতে কি, মিলিটারি জীবনে আমার প্রকৃত বন্ধু বলি আর ভাই বলি সে একজনঈ ছিল,মশিউর।একবার তো একটা টিম অপারেশনে আমার জীবনও বাঁচিয়েছিল ও। হয়ত সেদিন মশিউর না থাকলে আমি পৃথিবীটা আর দেখতে পেতাম না।হয়ত সেদিনই আমার জীবন প্রদীপ নিভে যেত মাত্র একটা গুলিতে ! সত্যিই ওর কাছে আমি প্রচন্ড ঋণী।
যাই হোক, অত্যন্ত মেধাবী, বিচক্ষণ আর চৌকশ অফিসার হিসেবে সকল ডিপার্টমেন্ট এর কাছে ও সুপরিচিত ছিল ।আর ওর যোগ্যতা, মেধা আর দক্ষতার জন্যই আজ সে দেশের সবচেয়ে দায়িত্বশীল পজিশনে আছে। আর সেখানেও তার অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু হঠাৎঈ মশিউরের এমনকি হলো যে,আমার মত একজন রিটায়ার্ড শখের গোয়েন্দার শরনাপন্ন হতে হলো!!
যাই হোক,কিছুক্ষণ পর মসিউর ফ্রেশ হয়ে নীচে এলো।ওর চেহারায় সতেজতা ফিরে এলেও চোখে মুখে চিন্তার সুস্পষ্ট ছাপ এখনো আছে।
-এসো মশিউর, কেমন ফিল করছ?
-মাচ বেটার, কর্ণেল।
পাশের সোফায় বসতে বসতে মশিউর উত্তর দিলো।
-"তারপর, ভাবী কেমন আছেন? আর ছেলে মেয়ের কি খবর বল তো। কতদিন দেখিনা ওদের। " পরিবেশটাকে হালকা করে মশিউরের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মনটাকে ডাইভার্ট করার চেষ্টা করলাম।কিন্তু কোন লাভ হলো না বোধহয়।
-"হ্যা কর্ণেল সবাই ভাল আছে।কিন্তু আমিই চিন্তায় আছি।হয়ত তুমি আমার বিষয়টাকে সিরিয়াসলি নাও নি এখনো । কিন্তু আমি জানি, এটা তুমিই করতে পারবে।আর তুমি ছাড়া অন্য কাউকে ভরসা করতে আমি পারিনা। তাই তোমার সাথে ডিসকাস করতে ঢাকা থেকে এখানে ছুটে আসা।"
খানিকটা হতাশা আর খানিকটা আশা নিয়ে মশিউর বলে চলল।
-"ওকে,আই হ্যাভ টেকেন সিরিয়াসলি। এন্ড আই নো,ইউ হ্যাভ ভেরী সিরিয়াস সামথিং টু টক এবাউট। কিন্তু আমি কি তোমার কোন কাজে আসতে পারব! বুঝই তো,বয়স হয়ে গেছে।"
- কর্ণেল, ইটস আ টপ সিক্রেট । আর এটা শুধুমাত্র আমার ব্যক্তিগত কোন বিষয় না,ইটস এবাউট আওয়ার কান্ট্রি । এন্ড ইটস সো মাচ কনফিডেনসিয়াল । আমার মনে হয়, এ বিষয়ে এই মুহুর্তে আলোচনা আর না করি। খুব গোপনে এ বিষয়ে কথা বলা দরকার।"

-কি! দেশের বিষয়ে?
আমি আশ্চর্য না হয়ে পারলাম না। আমি জানতাম মশিউর কোন সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা বলতে আসছে কিন্তু সেটার সাথে যে দেশ জড়িত তা আন্দাজ করতে পারিনি।বিশেষ করে আমি

রাত প্রায় দশটা বাজে।
ডাইনিং টেবলে রাতের খাবার রেডি করে কুদ্দুস মিয়া আমাদের ডাকতে এলো।
-" স্যার, টেবিলে খাবার দিছি।"
-ও আচ্ছা যাও। আসছি।



(চলবে...)




বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬

  • ১১:২৭:০০ AM
একজনের মস্তিস্ক থেকে অন্যজনের মস্তিস্কে স্মৃতি/ডেটা ট্রান্সফার, এটা সম্ভব!
---------------------------
যদি একশ জনকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে,সবচেয়ে কঠিন কাজ কোনটি, কায়িক শ্রম নাকি পড়াশোনা?
তবে আমার বিশ্বাস একশত জনই বলবে,"পড়ালেখা"।
কারণ, আপনি আপনার যে কোন কাজ অন্যকে দ্বারা করিয়ে নিতে পারেন।কিন্তু পড়াশোনা?
ইটস ইম্পসিবল।
আপনার পড়াশোনা অন্য কেউ করে দিতে পারবে না।আপনারটা আপনাকেই করতে হবে। এটা সবাই জানে ।
আর এই বিষয়টা নিয়েই এখন আমার যত মাথা ব্যাথা। আচ্ছা,এমন কি হতে পারে না যে,একজন পড়ালেখা করে তার মেমরি তে যা সঞ্চয় করেছে তা অন্য জনকে ট্রান্সফার করে দিতে পারবে!! Like computer's data transferring.
হলে বেশ ভালই হত বটে। আমার মনে হয় দূর ভবিষ্যতে এটাও করা সম্ভব হবে।আর সম্ভব হবে এ জন্যই যে-
ধরুন, আমাদের মস্তিস্কের একটা অংশ যা স্মৃতি সংরক্ষণ করে তা কম্পিউটারের একটা হার্ডডিস্ক/ মাইক্রো চিপের মত।অসংখ্য নিউরন দ্বারা গঠিত এই অংশ। যা কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক এর মতই কাজ করে।আমরা আমাদের ইনপুট অর্গানিজম চোখ,কান,নাক,মুখ(জিহ্বা  যা স্বাদ মনে গ্রহন করে) দেখি,শুনি,গন্ধ নেই, স্বাদ নেই কিংবা পড়ি তাই এটা সংরক্ষণ করে। তারপর বছরের পর বছর তা স্মৃতিতে ধরে রাখে। আবার মস্তিষ্ক কম্পিউটার হার্ডডিস্ক এর মতই ক্রাশ করে। আর তখন মানুষ তার স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলে।কিংবা বহু পুরোনো স্মৃতি ধীরে ধীরে মলিন হয়ে যায়। যদি মানুষের মস্তিস্ক এবং কম্পিউটারের মেমরির মধ্যে এতই সামঞ্জস্য তবে কম্পিউটার থেকে যেমন ডেটা ট্রান্সফার করা যায়,মস্তিস্ক থেকে কেন নয়!!
হয়ত আমার কথাগুলো পাগলের প্রলাপ মনে হতে পারে।আর হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারন ইতোপূর্বেও যারা স্থান-কালের উর্ধ্বে কিছু বলেছে তাদের কথা গুলোকেও প্রলাপ বলে হেয় করা হয়েছে। কিন্তু যখন তার কথা বা তত্ত্ব প্রমাণিত হয়েছে তখন তারই ফলাফল আমরা সাদরে গ্রহন করেছি,আর করবোও তাই।
আমার বিশ্বাস দূর ভবিষ্যতে একজনের স্মৃতি অন্যজনকে ট্রান্সফার করা সম্ভবপর হবে।শুধু তাই নয়,এর দ্বারা আমরা বহু পুরোনো তথ্য পূর্বপুরুষের কাছ থেকে নিয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে রাখতে পারব।
নীলকান্ত®

বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০১৬

  • ১:২১:০০ PM

ঠাকুরগাঁ এর আবহাওয়া টা বেশ ভালো। আর সব বসন্তের ন্যায় দিনে এখানেও ঝলমলে রোদ পড়ে তবে তাপমাত্রা টা ঢাকার মত ওতটা পোড়ায় না। আর বেলা গড়ালেই হিমালয়ের কাছাকাছি কোথাও এসে পড়েছি তার আঁচ পাওয়া যায়।
ঢাকায় যেখানে রাত দিন চব্বিশ ঘন্টা এসি কিংবা ফ্যান ছাড়া চলেই না,সেখানে এই মার্চের শেষার্ধেও ফ্যান না চালিয়ে দিব্যি থাকা যায়।। শুধু ফ্যান চালানোর প্রয়োজন হয়না তা না,বরং রীতিমত কাঁথা কিংবা লেপ গায়ে দিয়ে থাকা যায়।
কিন্তু এরকম সময়েও আমি ফ্যান চালালাম। রেগুলেটর ঘুরিয়ে বেশ খানিকটা জোড়েই ফ্যান ছেড়েছি।উদ্দেশ্য গরম কে তাড়াবো বলে নয়,বরং মাথার মধ্যে রাগের ঝিঝি পোকারা যে সুর তুলেছে তা বাতাস দিয়ে অন্য দিকে ডাইভার্ট করা।
মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে বনবন করে।আর আমি গায়ে ছোট্ট কম্বলটা জড়িয়ে জানালা দিয়ে চাঁদ দেখছি। অপূর্ব সে চাঁদ।  অপূর্ব!
রাগটা একটু কমে এসেছে কিন্তু নির্মুল হয়নি এখনো। অগত্যা চাঁদ দেখতে থাকি । সাদা মেঘের ফাঁকে উঁকি মারা সে চাঁদ।
  • ১:১৯:০০ PM
এ যেন অভিকর্ষের চিরায়ত নিয়মে বাধা পড়া।
তাই তোমাকে ঘিরেই আবেগগুলো কেন্দ্রীভূত হয়।
ভূত থেকে ভবিষ্যৎ সবকিছু যেন আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা পড়ে থাকে সেখানে। ঘূর্ণনের নিম্নমুখী চাপেও মাঝে মাঝে
কষ্টের রকেটলঞ্চারে উর্ধ্বমুখী হই।
কিন্তু সম্পর্কের বন্ধন ছিন্ন করার দুঃসাহস হয়না কখনো,
ফিরে ফিরে আসি বারবার তোমার জমিনে।
তবেই এটাই কি আমার দূর্বলতা!
  • ১:১৭:০০ PM
আমি কি মানুষ নই!
আমি বোধহয় মানুষ নই।
মানুষের রক্তের রং লাল হয়,আমার রক্ত খয়েরী কিংবা বাদামী।
মানুষ হলে
রক্তের প্রতিটি কণায় উত্তাপ থাকত,
আমার রক্ত ঠান্ডা-শীতল।
আমি মানুষ নই,
মানুষ হলে আবেগের জায়গা থাকত,
মান-অভিমানের জায়গা থাকত,
হৃদয় থাকত।
আমার হৃদয় নেই,
মান-অভিমান আর আবেগ থেকে আমি বহুদুর।।
আমি বোধহয় সত্যিই কোন মানুষ নয়।
নীলকান্ত®

শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

  • ১২:০৬:০০ AM

আই মিস ইউ পত্র-১৬

প্রিয়তমা,

আজ বড্ড অভিমান করে তুমি বললে,
"তুমি আমাকে অনেকদিন চিঠি লিখো না ,আজকে একটা চিঠি লিখো তো ! কতদিন তোমার চিঠি পড়ি না !"
তোমার কথা শুনে হাসব না কাদবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না । হাসতে ইচ্ছে করছিল এই জন্যে যে,তোমার কথা যখন মোবাইলের স্পীকার থেকে কানে পৌছলো ,নিশ্চয়ই তখন তোমার অভিমানী মুখের অভিব্যক্তিতে ছোট্ট বাচ্চাদের মত সেই সহজ সরল ছেলেমানুষি খেলা করছিল !
আর কাদতে ইচ্ছে করছিলো এই ভেবে যে, আজ আমি তোমার পাশে নেই।দূর দুরান্তর থেকে শুধু দূরালপনির কী-প্যাডে মেসেঞ্জারের পাতায় কিংবা শব্দ তরঙ্গে বন্দী হয়ে আছে তোমার আমার ভালবাসা! যেখানে অনুভূতিগুলো ক্র্যাশ খায় হ্যাশ ট্যাগ কিংবা smiley তেই।

তবুও লিখতে বসেছি।তোমাকে অনেক অনেক কথা বলবো বলে।কিন্তু দেখ, লিখার ভাষা গুলো কোথা যেন দোল খাচ্ছে একলা মনে। কিছুতেই ধরা দেবেনা বলে পণ করেছে খুব দৃঢ় ভাবে! অভিমানী শব্দগুলো বুকের ভেতর বিরহের সুর তুলে বলছে," তোমার স্পর্শ চাই। পাশা-পাশি বসে গল্প শোনাতে চাই।আমি দূরালাপনির কী-প্যাডে বন্দী হতে আর চাই না। আমি চাই, হৃতপিন্ডের স্পন্দন দুটি এক হোক,আর ভালবাসার সুর তুলুক এক সাথে। "

#নীলকান্ত

বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

  • ১:২৮:০০ AM
এই মধ্যরাতে বিড়াল দম্পতির আবার কি হলো কে জানে! চেঁচামেচি করে পুরো ফ্লাটটা মাথায় তুলেছে যেন।সম্ভবত, পরকীয়া জনিত কারণে বিড়ালনীর সাথে বিড়ালের কিছু একটা হয়েছে। আর হবেই না বা কেন! এই তো গতকালকেও দেখলাম,বিড়ালনী তার বয়ফ্রেন্ডকে ছেড়ে অন্য একজনের সাথে ঘুটুর ঘুটুর করছে। এরকম ঘুটুর-ঘুটুর বিড়ালের সহ্যই বা হবে কেন! তাই বিড়াল মহাশয় টের পেয়ে গিয়ে হয়ত  মাঝ রাত্রে তার বিড়ালনীর সাথে এই বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েছে।
যাই হোক,
বেশ কিছুক্ষণ প্রচন্ড মাথা ব্যাথা সত্ত্বেও ওদের চেঁচামেচি শুনলাম।কিন্তু আর কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না। এমনিতেই নিজের প্রচন্ড মাথা ব্যাথায় ইচ্ছে করছে মাথাটা কেটে সাইড করে রাখি তার উপর ওদের দুজনের উৎপাতে নিজের মাথাটা কাটার আগে ওদের মাথা কেটে ছাদ থেকে বসুন্ধরার বালিতে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
উহ! অসহ্য।
খুব রাগ হলেও শেষ পর্যন্ত নিজেকে সংবরন করলাম। নিজেকে বুঝালাম, "Everything is fair in Love & War."
করুক না একটু রাগারাগি। এটাও তো ওদের ভালবাসারই অংশ । ওদের এই মধুর কিংবা বিমধুর আলাপচারিতার মধ্যে আমার নাক না গলানোই ভাল।
তার চেয়ে বরং নিজের মাথা ব্যাথাটাকে নিয়েই একটু ভাবি।
ভাবছি....
তার কিছুক্ষণ পর মনে হলো, মাথা ব্যাথাটা বোধ হয় একটু কমেছে। খেয়াল করে দেখলাম,বিড়াল-বিড়ালনীর ঝগড়াটাও পড়ে এসেছে।এখন শুধু দু একবার মিঁয়াও মিঁয়াও শব্দ শোনা যাচ্ছে খুব ক্ষীন স্বরে।হয়ত ঝগড়া করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গলাগলি ধরে শুয়ে দুজন দুজনাকে বলছে,"তুমি এমন কর কেন? "
উত্তরে আরেকজন মৃদুস্বরে ভালবাসা নিয়ে বলছে,"আই এম সরি। "
তারপর শহুরে রাতের কোলাহলকে ভালবাসার চাদরে ঢেকে উপভোগ করছে নিস্তব্ধতা!
আর আমি?
আমি শুনছি,দুরে কোথাও হুইসেল বাজিয়ে রাতের ট্রেন এগিয়ে চলেছে গন্তব্যে ঝিক ঝিক ঝক ঝক ঝিক ঝিক!  আর বাসার পাশের ওয়াসিং ফ্যাক্টরির মেশিন থেকে বেড়িয়ে আসা ক্যাচ ক্যাচ শন শন ক্যাচ ক্যাচ শন শন শব্দ।
#নীলকান্ত

মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

  • ১০:২৬:০০ AM


নিঃস্বার্থ প্রেম বলে পৃথিবীতে কোন প্রেম নেই।এমনকি প্রেমের ক্লাসিফিকেশনেও নিস্বার্থ প্রেমের অস্তিত্ব নেই।তার মানে হলো,নারী বা পুরুষের প্রেম,খোদার প্রতি বান্দার প্রেম, প্রকৃতির প্রতি মানুষের প্রেম সকল প্রেমেই কোন না কোন স্বার্থ জড়িয়ে আছে।
কিভাবে?
আচ্ছা,তার জন্য শুধু দু' একটা প্রেমের ব্যাখ্যায় যাচ্ছি তাহলেই বাকি সব তথাকথিত নিঃস্বার্থ প্রেমের মাঝে স্বার্থপরতা খুঁজে পেতে কষ্ট হবে না।।
প্রথমত,প্রকৃতি ও মানুষের প্রেমের মধ্যে নজিরবিহীন নিঃস্বার্থ প্রেম দেখা যায়(আপাতদৃষ্টিতে।) । কিন্তু আসলেই কি মানুষ ও প্রকৃতির প্রেমে কোন স্বার্থ জড়িয়ে নেই? অবশ্যই আছে। মানুষ প্রকৃতির সাথে প্রেম করে। ভালবেসে প্রকৃতির পরিচর্যা করে।গাছ লাগায়,বায়ু দূষন,শব্দ দূষন রোধে  আইন পাশ করে।মিটিং করে,মিছিল করে, সবই করে।আর যেগুলো করতে পারেনা তাও করার চেষ্টা চালিয়ে যায়।প্রকৃতির প্রতি মানুষের এ প্রেম,"প্রেম নেহি তো কিয়া হ্যায়!" কিন্তু ইডা কি নিঃস্বার্থ প্রেম? অসম্ভব।
মানুষ প্রকৃতিকে ভালবাসে নিজের সুখের জন্য,সৌন্দর্যের জন্য আর বেঁচে থাকার জন্য  । প্রকৃতির উপকরণ মানুষের কাজে না আসলে এ প্রেম কখনোই আসতো না।
তারপর আসি খোদার প্রতি মানুষের প্রেম । আরে ভাই,এইডা তো জলের মত ক্লিয়ার! খোদার প্রতি মানুষের ভক্তি বা প্রেম হলো স্বার্থপরতার চরম উদাহরন। খোদাকে ভাল না বাসলে কপালে স্বর্গ জুটবে না,পরকালে শাস্তি পেতে হবে এরূপ ভয়ই হলো খোদার প্রতি মানুষের ভক্তি দেখানোর অন্যতম কারন।তবে মূল কারন হলো, "ডিমান্ড"।
মানে,ও খোদা তুমি আমায় স্বর্গ দাও,দুনিয়ায় ভাল একটা বউ দাও,চাকুরী দাও,রোগ-বালাই হতে মুক্তি দাও,এটা দাও,সেটা দাও, ওটাও দাও । যা আছে সব দাও।
এই চাওয়া গুলো না থাকলে মানুষ কখনো খোদার কথা মনেই করত না।প্রেম তো দূরের কথা। প্রেম বা ভক্তির সাথে যখন বিনিময় যুক্ত থাকে তবে তা,"স্বার্থপরতা নেহি তো অর কিয়া হ্যায়!! "
অতএব, মানুষের প্রেম সর্বদা স্বার্থপর। নিঃস্বার্থপরতা শুধু মাত্র একটা কল্পিত শব্দ ছাড়া কিছুই না!
এবার আসি,নারী পুরুষের নিঃস্বার্থ প্রেমে।নারী ও পুরুষের প্রেম কতটা নিঃস্বার্থ তা বুঝার পূর্বে বুঝতে হবে,

কোন নারী বা পুরুষ পরস্পরের প্রেমে পড়ে কোন কোন কারনে?

প্রথম দর্শনে প্রেম হয় কি কি দর্শন করে?

অতঃপর, প্রেমের চুড়ান্ত লক্ষ্যই বা আসলে কিসে লুকিয়ে থাকে?

উত্তর একটাই, "জৈবিক ও মানসিক শান্তি পাওয়ার ইচ্ছা।"
যখন কোন পুরুষ ও নারী পরস্পরকে দেখে বা পরস্পরের সাথে মিশে এটা অনুভব করে যে,"আমি তার সাথে থাকলে জৈবিক ও মানুষিকভাবে শান্তি পাব" একমাত্র তখনই দুজনার মধ্যে প্রেম জন্মাতে পারে।
আর এর প্রধান লক্ষ্যটা থাকে জৈবিক প্রশান্তি লাভের আশা। জৈবিক প্রশান্তি লাভ না করলে মানুষিক প্রশান্তিই উবে যাবে।তখন ভালবাসা বলেন আর প্রেম বলেন,যাই বলেন বা কেন তা থাকেনা।আবার জৈবিক চাহিদা পূরন হলেও যদি মানুষিক সুখ না পাওয়া যায় সেখানে প্রেম থাকে না । অর্থ্যাৎ "তুমি আমাকে সুখ দাও,বিনিময়ে আমি তোমাকে সুখি করবো" এরকম একটা পরোক্ষ্য বিনিময় চুক্তি জড়িয়ে থাকে  নারী -পুরুষের প্রেমে।
সুতরাং প্রেম শব্দটা নিঃস্বার্থ হতে পারে না।
তাই প্রেমে পড়লে যা বলা হয়,
"দেখ,আমি তোমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসি। আমার ভালবাসায় কোন স্বার্থপরতা নেই।"
এটা শুধু কথার কথা। আসলে যে কথাটা বলা হয়না তা হলো, "আমি তোমাকে ভালবাসি কারন আমি স্বার্থপর। "

#নীলকান্ত
Writer information NILKANTO