:::: MENU ::::
  • slider image 1

    Take my hand, take my whole life too.

  • slider image 2

    I never want to live without you

  • slider image 3

    I am who I am because of you.

সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯

  • ৫:৪৩:০০ PM
সকাল ৬:০০ টায় যখন দিন শুরু হয় তখন মূলত কামলা দেয়ার প্রস্তুতিপর্ব হিসেবেই শুরু হয়।এরপর ৮:০০ টা নাগাদ কামলা দিতে বের হই। পেটে দানা পানি বলতে কখনো সখনো নিকোটিনের সাদা ধোয়া কিংবা বুড়িগঙ্গার শুদ্ধপ্রায় জল। স্যুটেড, বুটেড হয়ে নিজের ইচ্ছা, আকাঙখা, ভালবাসা, চাওয়া পাওয়া এমনকি পেটের ক্ষুধা ভুলে সভ্যতার অসভ্য নীতিভ্রষ্টতাকে সমর্থন করে তেল দেই রাত-দিন। 

প্রতিদানসরূপ কখনো ঝাঁঝালো বাক্যবাণ, কখনো নীতিভ্রষ্টের শিষ্টাচার। আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতই শিষ্টাচারের ভার্চুয়াল ইমেজ নিয়ে ধন্য মনে করি নিজেকে। যাক, তবুও ত কিছু পেয়েছি! 

এভাবে সকাল গড়িয়ে দুপুর, ভেতরে ছুঁচোরকেত্তন শুরু হয়। বাধ্য হয়ে ২:০০ টা নাগাদ যখন বাসায় ফিরে শূন্য হাড়ি সামনে পাই তখন নিজেকে সহস্রবার গালি দেই। বলি, "এটাই তোর প্রাপ্য।"
 
দুপুর গড়িয়ে শীতের জৌলুসহীন সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়ে। আধার নামবে হয়ত আর কিছুক্ষণ।  অসহায় কামলার জীবনের ২য় অধ্যায়ের পাঠ শুরু হয়। স্যুটেড বুটেড দেহের উচু মস্তকটা আবারো ভ্রষ্টাচারদের সামনে নুইয়ে পড়ে। বিদ্রোহী মন তখনো খেলা করে তার আপন রাজ্যে। ইচ্ছে করে স্বাধীনতার স্বাদ নিতে। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে নিজেকে স্বাধীন দেখার সাধ জাগে।কিন্তু তা আর হয় না।

মধ্যবিত্ত জীবনের অভাব অনটনে, সমাজের নীচুদরের মানুষ হয়ে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন যেন অলীক কল্পনামাত্র। আমাদের স্বাধীন দেখার স্বাদ মানায় না।। তার উপর জীবনের ভুলগুলো চোখের সামনে এসে তিরস্কার করে বলে,
"এটাই তোর প্রাপ্য। তুই এর চেয়ে বেশি স্বাধীনতা পাওয়ার যোগ্য না।"

মেনে নেই। চাপা কষ্ট চাপা থাক না হৃদয়ে। চেপে যাই নিজের ভেতরে। এভাবে একটা কামলার জীবনের রেগুলার রুটিন মেনে যখন ক্লান্ত শরীর বাসায় ফেরে তখনো ফেরা হয়না স্বাধীনতায়, ফেরা হয়না নিজের জগতে।

প্রতিদিন বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ১২ টা। তারপর আবার কাগজ কলম নিয়ে বসে কামলা দেই ১:০০ টা পর্যন্ত। মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে মনে পড়ে পরিবার, বাবা মা, স্বজনদের কথা। কিন্তু ঘড়ির কাটা বলে দেয়, এখন সবাই ঘুমে অচেতন। বিরক্ত করার সময় এখন নয়। হয়ত তারাও সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে ঘুমিয়ে আছে। ঘুম ভাঙানোর অধিকার আমার নেই। মনে মনে ভাবি, আজ হলো না যখন তখন কাল কথা বলব সবার সাথে! 
এরপর বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই নিজেকে আবিষ্কার করি সকালের সূর্যোদয়ে। আবারো শুরু হয় একজন কামলার জীবন। আবারো অপেক্ষায় থাকি আরেকটা দিনের। অপেক্ষা করি আমার নিজের জন্য, যে সময়টা শুধুই আমার হবে।। 😔🙁

প্রকাশঃ ২৩/১২/১৯
সময়ঃ দুপুর ২:০০ টা

শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৯

  • ১১:৪৫:০০ AM



গভীর হতে থাকে একাকী রাত,
নিস্তব্ধতা ভাঙে একেকটা দীর্ঘশ্বাস।
কত দিন হলো বলো তো?
কত শত শতাব্দী, কত শত বছর
কত সহস্র মাস!

হিসেবের খাতায় শূন্য ফলাফল
চাওয়া-পাওয়ার যোগবিয়োগে
চোখের লোনা জল।
কত সমুদ্র হলো বলো তো?
কত প্রশান্ত, কত আটলান্টিক
কত টাইগ্রিস -ইউফ্রেটিস!

স্মৃতিরা সব ধাওয়া করে পিছু,
ধূলো জমা ক্যানভাস,পোঁড়া হৃদয়,
ছেঁড়া এলবাম, আকুল স্পর্শ।
কত বয়স হলো বলো তো?
কত চন্দ্ররাত, কত শত সহস্র আলোকবর্ষ!

ফেলে আসা শতাব্দীর গল্পে,
তোমার আমার লাল নীল সংসার,
ফিরে ফিরে যায় বিরহী হৃদয়,
এ অশান্ত মন আমার।।
দেখো, আজ তুমিও একা, আমিও একা
শুধুই একাকীত্ব মনের আঙিনায়।।

#নীলকান্ত© [সংক্ষিপ্ত ]

শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৯

  • ১১:৪৫:০০ PM



কবিতার অন্ত্যমিলে খুঁজে চলি অবিরাম
ছন্নছাড়া জীবন, মেঘ কালোকেশী
রমণীর টোল পড়া গাল, জোড়া ভ্রু,
পশমি বলের মত বুক, কাব্যিক হাসি।
পার্কের বেঞ্চে বসে যাকে প্রথম দেখেছিলাম,
চারসহস্র শতাব্দী বছর আগে।
তারপর স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম দুজনে একসাথে,
দু'রুমের ফ্লাটে স্বপ্নগুলোর হয়েছিল স্থান।
তারপর একশত বিশ কিংবা তার কিছু বেশী
শতাব্দী কেটেছে উন্মত্ত জৈবিক সাধনায়।
শতাব্দীর সুখ সে তো দিয়েছিল আমায়।
সেই জোড়া ভ্রু,
কালোকেশ, টোল পড়া গাল।
সেই সব ঝড়ের রাত, শীতের কুয়াশা
সকালের মিঠে রোদ, সম্পর্কজাল।
সে তো আমার নয়, আমিই ছিলাম তার,
কিন্তু কি আশ্চর্য! আজ
ভুলেই গেছ কি ছিল তার নাম!! ধ্রুব? নাকি ধ্রুবক!!
#নীলকান্ত©

শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৯

  • ১২:১৬:০০ PM

আজ আমি নীরবে মেনে নেই সব। আজ আমি সব পারি, পারতে হয়। এতটুকু প্রতিবাদ নেই কণ্ঠে। নিজস্বতা, স্বাধীনতা বলতে দিন শেষে ঘরে ফিরে এক মুঠো ভাত, ক্লান্ত শরীর, ছটফটানি ঘুম। তবুও ভাল আছি আমি। নিম্ন মধ্যবিত্তের বড় ছেলেদের সব শেষে ভাল থাকতে হয়। একজন সাধারন গৃহিণী নারীর ছা পোষা হাসব্যান্ডকে ভাল থাকতে হয়। মুখে হাসি টেনে বলতে হয়, আমি ভাল আছি। ভাল থাকাটা শিখে গেছি মেনে নেয়ার সাথে সাথে।।

পৃথীবির চিরাচরিত দাসত্বের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি অথবা চেষ্টা করছি মানিয়ে নিতে। 

জীবনের ত্রিশটা বছর সুখের পেছনে ছুটতে ছুটতে কখন যে সুখ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি বুঝতে পারিনি। 

একটা সময় ছিল যখন ভর দুপুরে ঘুরি উড়ানোতে সুখ ছিল। সুখ ছিলো ঘন্টার পর ঘন্টা পানিতে ঝাপাঝাপি, বাটুল হাতে সকাল দুপুর পাখি শিকারের প্রাণান্ত শ্রেষ্টায়, কিংবা কাঁচা আমের করালি ঝিনুকের খোলস দিয়ে ছিলে তেল মরিচের ভর্তা, আর পাঁকা আমের নেশায় এ ডাল থেকে ও ডালে ঘুরে বেড়ানো কিংবা ঝড়ের মাঝে গাছের নীচে দাঁড়িয়ে আম কুড়ানোয়।

সুখ ছিল কলার ভেলা বানিয়ে বন্যার পানিতে ভেসে বেড়ানোতে, শৈশবের বন্ধু-বান্ধবীর সাথে ভেন্না তলায় কলার পাতার ঘর বানিয়ে চড়ুইভাতির পাতিলে। সুখ ছিল তিন চাকার বিয়ারিং এর গাড়ি বানিয়ে অথবা সুপারি পাতার খোলসে বসে ধুলো রাস্তায় আগে যাবার প্রতিযোগিতায় । সুখ ছিল, জোসনা রাতে পানি দিয়ে কোর্ট কেটে বদন খেলায় কিংবা ধানের ক্ষেতের আইল ধরে নিরুদ্দেশ হেটে চলায়। সুখ ছিল,  মধ্য দুপুরে ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরতেই মায়ের বকুনিতে, দাদীর আদরে, বাবার শাসনে।

সুখ ছিল, বৃষ্টি হলে হাই স্কুলের বারান্দায় বন্ধুদের আড্ডায়, টিফিনের ফাঁকে ভাল লাগার মানুষটাকে ইশারায় মনের কথা বলাতে। সুখ ছিল, ক্লাসের শেষ ব্রেঞ্চে বন্ধুদের আড্ডায়, কিংবা রাজপথে মিছিলে ছান্দসিক চলাতে।।

সুখ ছিল, ভার্সিটির গেটে দাঁড়িয়ে রহিম ভাইয়ের দোকানের চায়ের চুমুকে, সারা রাত বন্ধুদের সাথে তাশ আর সিগারেটের আড্ডায়। সুখ ছিল, রাত জেগে মধ্য দুপুরে আড়মোড়া ভাঙতে, পড়ন্ত বিকেলে বান্ধবীর হাত ধরে হাটাতে।

তারপর দিন ফুরালো। সুখ গুলো একে একে ধূসর হতে শুরু করল অজান্তেই। বেকারত্বের অভিশাপ আর স্বাধীনতার অভিলাষকে একসাথে মেটাতে কতই না কিছু করলাম! কিন্তু ওই যে মধ্যবিত্তের শৃঙ্খলে বাধা জীবনে স্বাধীনতা এক আকাশকুসুম স্বপ্ন ছাড়া কিছুনা! 

নিত্য নতুন দৈন্যতা, অভাব, অভিযোগ থেকে ধীরে ধীরে একটু সুখের খোঁজে অসুখের বাসা বাধালাম মনে। দাসত্বের শৃঙ্খল বন্দী হওয়ার নেশায় পড়ে হলাম চাকুরীজীবী।

চাকুরী?  সে তো স্বাধীনতার বিসর্জন।  নিজেকে গলা টিপে হত্যা করে নতুন মানুষ হওয়ার চেষ্টা। আমিও হত্যা করেছি নিজেকে। দিয়েছি প্রবোধ অবুঝ মনটাকে। বলেছি, "এভাবেই মেনে নিতে হয়। মানিয়ে চলতে হবে এভাবেই।"


সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

  • ৬:২৭:০০ PM

পুরুষ মানুষকে যদি কোন স্ত্রী বশে রাখতে চান, তবে তার সাথে ভাল ব্যবহার করুন, যা বলে তাই শুনুন, দিন কে রাত, রাত কে দিন বললে মেনে নিন।
তারপর রাতের বেলায় ঠান্ডা মাথায় সুন্দর করে আপনার আবদার টা উপস্থাপন করুন। যদি আপনার আবদার শুনে সে রাগ করে তবে তার কথা মেনে নিন। এরপর, রাগ না করে হাসিমুখে তাকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলুন।
দেখবেন আমতা আমতা করলেও সময় মত আপনার কাজ হয়ে গেছে। 
এবার আরেকটা কথা বলি, আপনি কি সারাজীবন শুধু কম্প্রোমাইজ করে চলবেন? 
না, সুন্দর সম্পর্কের জন্য উভয় পক্ষকে কম্প্রোমাইজ করতে হয়। শুধুমাত্র স্ত্রী কিংবা স্বামী সারাজীবন কম্প্রোমাইজ করে চললে স্ত্রীর কিংবা স্বামীর নিজস্বতা,ব্যক্তিত্ব বলে কিছু থাকে না। সুতরাং আপনি স্ত্রী হিসাবে অবশ্যই রাগ,যেদ,অভিমান করার অধিকার সংরক্ষন করেন। কিন্তু সবসময় একটা জিনিস মাথায় রাখবেন, কোন কিছুই যেন অতিরিক্ত না হয়।

আর স্ত্রী দের বলছি, "পুরুষরা হলো বন্য ঘোড়ার মত। এদের বশ করতে হলে রাগ, যিদ কিংবা অভিমান নয়,হাসি মুখে কথা বলতে হবে। দেখবেন এক সময় বন্য ঘোড়া টা সুন্দর ভাবে বশে চলে এসেছে। তখন আপনি যেভাবে চাইবেন আপনার ঘোড়া সেভাবেই চলবে।"

সর্বশেষে আপনাদের সুন্দর ও সুখী দাম্পত্য জীবনের আশা ব্যক্ত করছি।

#সম্পর্ক_নীলকান্ত

বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৯

  • ১১:৪২:০০ AM
আমার ও
------------দু'চোখ ভরা অভিমান নিয়ে ও প্রায়ই বলে,"তুমি আমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাও না। "
"বল তো,আমাকে নিয়ে তুমি কোথাও বেড়াতে গেছো? "
তারপর
ওর অভিমানী চোখের পাতায় না পাওয়ার শিশিরেরা ভর করে । আমি একটু ভেবে দেখি,সত্যিই তো, ওকে নিয়ে কোথাও সেভাবে ঘোরা হয়নি!আমাদের সীমাবদ্ধ ঘোরা ফেরা শুধু সাত মাথা থেকে খোকন পার্ক আর বড়জোর বিসিএল কিংবা কোয়ালিটিরর ফাস্ট ফুড শপ।তার বাইরে তেমন কোথাও যাওয়া হয়নি।এমনকি এক দেড় ঘন্টার বেশি বাহিরে যে ওকে সময় দিতে পেরেছি তাও না! বরং যা দিতে পেরেছি তা হল, অনাগত ভবিষ্যৎ জীবনে দু'জন সারা দেশ ঘুরে বেড়াবো সেই অনিশ্চিত প্রতিশ্রুতি।
তবে কি এ অভিমান যথার্থ নয়? হ্যা,,অবশ্যই তার এ অভিমান করা অমূলক নয়।অমূলক নয় অভিমানের বাহিরে এসে সম্পর্ক কে সেখানেই ইতি টানা।
কিন্তু না,সে সামান্য অভিমান করেছে বটে আবার পরক্ষণেই সে অভিমান ভুলে কখন যে দীর্ঘ ঘর সংসার করা গৃহিণীদের মত বড় মানুষ হয়ে গেছে ও নিজেও বুঝত না।
আমি ওকে বলি,"তো চল যাই,কোথাও থেকে ঘুরে আসি।" 
ও তখন বড় মানুষের মত বলে,"আগে তোমার চাকরী বাকরি কিছু একটা হোক।তারপর সব সুদে আসলে উশুল করবো। কিন্তু এখন না। "
কথা বলতে বলতে ওর চোখ মুখ চকচক করে উঠত ভবিষ্তের দিকে তাকিয়ে।মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে কাঁধের উপর হেলান দিয়ে আস্তে আস্তে বলত,"আই লাভ ইউ সো মাচ সোনা।উই হ্যাভ আদারস টাইম টু গো।"
আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবি,"যেন সে সময় আসার আগে বিধাতা আমাকে তুলে না নিয়ে যান। তা না হলে মৃত্যুর পরেও এই অপ্রাপ্তির ভার আমায় বয়ে বেড়াতে হবে।"
এভাবে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ইচ্ছে করে জড়িয়ে ধরে বলি,আই লাভ ইউ টু।ইয়া,উই হ্যাভ আদারস টাইম টু গো।বাট উই উইল নেভার গেট দিজ মোমেন্ট ব্যাক।"
কিছুটা কষ্ট বুকের মধ্যে বাসা বাঁধতে চায়। কিন্তু ওর টোল পড়া গালের মিষ্টি হাসি আর আমার বর্তমান পরিস্থিতি বুঝে ওর এমন বড় মানুষের মত কথা শুনে সব ভুলে যাই।একে একে গত প্রায় এক বছরের সুন্দর মুহুর্ত গুলো চোখের তারায় এসে ভীর জমায়। সেই সব স্বপ্ন দেখার আর স্বপ্ন দেখানোর দিনগুলো। 
ও আমাকে এতটা ভালোবাসে,এতটা কেয়ার করে,মাত্র উনিশের কোঠায় সে যখন হঠাৎ অনেক বড় হয়ে যায় তখন
নিজেকে খুব লাকি মনে হয়। মনে হয়,আমার চেয়ে পৃথিবীতে খুব কম মানুষই আছে যারা এতটা সৌভাগ্যবান হয়,এতটা ভালো কাউকে জীবন চলার সঙ্গী হিসেবে পায়।।
সত্যি কথা বলতে কি জানেন,
জীবনের ছোট ছোট সুখের মুহুর্ত গুলো আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃসময় কেও ভুলিয়ে রাখতে পারে। ছোট ছোট অভিমান ভরা মুহুর্ত গুলো আপনার বন্ধুর পথচলায় আনন্দ এনে দেয়।আপনি তখন অনায়াসে দুঃস্বপ্নের এভারেস্ট জয় করতে পারেন সহজেই।পারেন নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেতে।

আপনার প্রিয় মানুষটির প্রতিটি মুহুর্ত কে বুঝার চেষ্টা করুন।তার ভালোলাগা, মন্দ লাগাকে যথার্থ মূল্যায়ন করুন।প্রচন্ড খারাপ লাগার মুহুর্ত গুলোতে একটু পেছন ফিরে তাকান,প্রিয় মানুষের সাথে কাটানো প্রিয় মুহুর্ত গুলো স্মরণ করুন, দেখবেন কত সহজেই সেই খারাপ লাগা ভালোলাগায় বদলে গেছে।

সম্পর্কের মাঝে রাগ-অভিমান, সুখ দুখ,হাসি-কান্না খুব পাশাপাশি। এগুলো কে এড়িয়ে যেতে কেউ পারে না।কিন্তু একটু চেষ্টা করলে নেতিবাচক বিষয়গুলোকে অবশ্যই কমিয়ে আনা সম্ভব। প্রিয় মানুষটি যখন আপনার উপর প্রচন্ড অভিমান করেছে,যখন আপনার কোন ভুলে সে কষ্ট পাচ্ছে তখন অবলীলায় তাকে "সরি" বলুন। নিজের ভুলের জন্য তার কাছে মন থেকে ক্ষমা চান।অভিমান ভাঙান।
আমার মতে,সম্পর্কের মাঝে রাগ-অভিমানকে জিইয়ে রাখা কখনোই উচিত নয়। অনেক সময় আপনি যেটাকে ভাবছেন কিছুই নয়,সেটাও অন্য কারো কাছে অনেক বড় কিছু হতে পারে। তাই যত দ্রুত নিজেদের মধ্যে মিউচুয়াল হওয়া যায় ততই মঙ্গল। ততই সম্পর্ক টা দীর্ঘস্থায়ী ও সুদৃঢ় হয়।

আপনি বিশ্বাস করবেন কি না জানি না,কিন্তু আমার আর ওর মাঝে প্রতিদিন ঠুক ঠাক লেগেই থাকে।কখনো কখনো আমি ইচ্ছে করেই লাগাই আবার কখনো ভুল বুঝাবুঝিতে লাগে।কিন্তু তা সত্বেও ও কখনোই আধা ঘন্টার বেশি রাগ করে থাকেনি।এমনকি আমিও না।তবে মাঝে মাঝে আমি একটু বেশি রাগ করেছি হয়ত,একটু বেশি সময় ধরে ওকে ফোন দিচ্ছি না,কথা বলছি না কিংবা ফোন ধরছি না, তখন ও পাগলের মত আমাকে ফোন দেবে।ফোন ধরলে ধরা গলায় যখন বলে,"আই য়াম সরি।ভুল হয়ে গেছে আমার।"কিংবা "সরি জান আই লাভ ইউ।"
তখন রাগ তো দূরের কথা, আমি যে কেন রাগ করেছিলাম সেটাও আর মনে করতে পারিনা।
আচ্ছা,এটা কে কি তবে ভালোবাসা বলে? হ্যা,এটাই ভালোবাসা।আর সম্পর্কের মাঝে দুঃখ গুলো, রাগ অভিমানের কারন গুলো ভুলে যাওয়াই উত্তম।ভুলে যাই,ভুলে যায়,আপনিও ভুলে যান।
দেখবেন কত সহজেই সবকিছু সুন্দর হয়ে গেছে।পৃথিবীটাকে কত প্রেমময় কাব্যিক মনে হচ্ছে।
বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা বেড়ে গেছে শতভাগ ।
আমি নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে করি ওকে পেয়ে।কারন ওই আমাকে শিখিয়েছে, কিভাবে ভালোবাসতে হয়। কিভাবে বাঁচতে হয়।সুন্দর পৃথিবীটাকে কিভাবে নিজের করে নিতে হয়!

তোমাকে অনেক ভালবাসি আমি,যতটা ভালোবাসা যায়।

প্রকাশকালঃ ১৪ আগষ্ট ২০১৫ ইং

বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০১৯

  • ৯:৩২:০০ AM
জীবন থেকে সুখ গুলো সব উড়ে গেছে, 
ব্যর্থতারা ছায়ার মত পিছু লাগে।।
হতাশার ছানিপড়া চোখে, আশার আলোও যেন আধারে ডাকে।
স্বপ্নগুলো সব ধরাশায়ী তাই হৃৎপিন্ডের ব্লকেজে,
আমি যে হেরে গেছি আজ জীবনের শো-কজে।
ভাবি, মৃত আর অমৃতের মাঝে আমি এক সাদাকালো জঞ্জাল।
আমাকে গ্রাস করেছে তাই নিরাশা, ব্যর্থতা আর
বেকারত্বের ধূসর কঙ্কাল।।

নীলকান্ত©

বুধবার, ২৯ মে, ২০১৯

  • ৪:৪৫:০০ PM
joy goshwami kobita photo
পাগলী, তোমার সঙ্গ

পাগলী, তোমার সঙ্গ
- জয় গোস্বামী--

পাগলী, তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোবালি কাটাব জীবন
এর চোখে ধাঁধা করব, ওর জল করে দেব কাদা
পাগলী, তোমার সঙ্গে ঢেউ খেলতে যাব দু’কদম।

অশান্তি চরমে তুলব, কাকচিল বসবে না বাড়িতে
তুমি ছুঁড়বে থালা বাটি, আমি ভাঙব কাঁচের বাসন
পাগলী, তোমার সঙ্গে বঙ্গভঙ্গ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ৪২ কাটাব জীবন।

মেঘে মেঘে বেলা বাড়বে, ধনে পুত্রে লক্ষ্মী লোকসান
লোকাসান পুষিয়ে তুমি রাঁধবে মায়া প্রপন্ঞ্চ ব্যন্জ্ঞন
পাগলী, তোমার সঙ্গে দশকর্ম জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে দিবানিদ্রা কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে ঝোলভাত জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে মাংসরুটি কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে নিরক্ষর জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে চার অক্ষর কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে বই দেখব প্যারামাউন্ট হলে
মাঝে মাঝে মুখ বদলে একাডেমি রবীন্দ্রসদন
পাগলী, তোমার সঙ্গে নাইট্যশালা জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে কলাকেন্দ্র কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে বাবুঘাট জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে দেশপ্রিয় কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে সদা সত্য জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ‘কী মিথ্যুক’ কাটাব জীবন।

এক হাতে উপায় করব, দুহাতে উড়িয়ে দেবে তুমি
রেস খেলব জুয়া ধরব ধারে কাটাব সহস্র রকম
লটারি, তোমার সঙ্গে ধনলক্ষ্মী জীবন কাটাব
লটারি, তোমার সঙ্গে মেঘধন কাটাব জীবন।

দেখতে দেখতে পুজো আসবে, দুনিয়া চিত্‍কার করবে সেল
দোকানে দোকানে খুঁজব রূপসাগরে অরূপরতন
পাগলী, তোমার সঙ্গে পুজোসংখ্যা জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে রিডাকশনে কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে কাঁচা প্রুফ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ফুলপেজ কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে লে আউট জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে লে হালুয়া কাটাব জীবন।

কবিত্ব ফুড়ুত্‍ করবে, পিছু পিছু ছুটব না হা করে
বাড়ি ফিরে লিখে ফেলব বড়ো গল্প উপন্যাসোপম
পাগলী, তোমার সঙ্গে কথাশিল্প জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে বকবকম কাটাব জীবন।

নতুন মেয়ের সঙ্গে দেখা করব লুকিয়ে চুরিয়ে
ধরা পড়ব তোমার হাতে, বাড়ি ফিরে হেনস্তা চরম
পাগলী, তোমার সঙ্গে ভ্যাবাচ্যাকা জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে হেস্তনেস্ত কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে পাপবিদ্ধ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধর্মমতে কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে পুজা বেদি জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে মধুমালা কাটাব জীবন।

দোঁহে মিলে টিভি দেখব, হাত দেখাতে যাব জ্যোতিষীকে
একুশটা উপোস থাকবে, ছাব্বিশটা ব্রত উদযাপন
পাগলী, তোমার সঙ্গে ভাড়া বাড়ি জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে নিজ ফ্ল্যাট কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে শ্যাওড়াফুলি জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে শ্যামনগর কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে রেল রোকো জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে লেট স্লিপ কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে আশাপূর্ণা জীবন কাটাব
আমি কিনব ফুল, তুমি ঘর সাজাবে যাবজ্জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় জওয়ান জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় কিষান কাটাব জীবন।

সন্ধেবেলা ঝগড়া হবে, হবে দুই বিছানা আলাদা
হপ্তা হপ্তা কথা বন্ধ মধ্যরাতে আচমকা মিলন
পাগলী, তোমার সঙ্গে ব্রক্ষ্মচারী জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে আদম ইভ কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে রামরাজ্য জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে প্রজাতন্ত্রী কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে ছাল চামড়া জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে দাঁতে দাঁত কাটাব জীবন।

এর গায়ে কনুই মারব রাস্তা করব ওকে ধাক্কা দিয়ে
এটা ভাঙলে ওটা গড়ব, ঢেউ খেলব দু দশ কদম
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোঝড় জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ‘ভোর ভয়োঁ’ কাটাব জীবন।
  • ৪:৪১:০০ PM
খুব কাক্সহে এসোনা
-রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ

খুব কাছে এসো না কোন দিন
যতটা কাছে এলে কাছে আসা বলে লোকে
এ চোখ থেকে ঐ চোখের কাছে থাকা
এক পা বাড়ানো থেকে অন্য পায়ের সাথে চলা
কিংবা ধরো রেল লাইনের পাশাপাশি শুয়ে
অবিরাম বয়ে চলা ।
যে কাছাকাছির মাঝে বিন্দু খানেক দূরত্বও আছে
মেঘের মেয়ে অতো কাছে এসোনা কোন দিন
দিব্যি দিলাম মেঘের বাড়ীর,
আকাশ কিংবা আলোর সারির।

তার চেয়ে বরং দূরেই থেকো
যেমন দূরে থাকে ছোঁয়া, থেকে স্পর্শ
রোদ্দুরের বু্‌ক, থেকে উত্তাপ
শীতলতা, থেকে উষ্ণতা
প্রেমে্‌র, খুব গভীর ম্যাপে যেমন লুকিয়ে থাকে ভালোবাসা
তেমন দূরেত্বেই থেকে যেও-
এক ইঞ্চিতেও কভু বলতে পারবে না কেউ
কতটা কাছা কাছি এসেছিলে বলে দূরত্বের পরিমাপ দিতে পারেনি পৃথিবী।

-সংগৃহীত
  • ৪:৩৬:০০ PM
হৃদয়ের ঋণ-হেলাল হাফিজ। ফটোঃ সংগৃহীত
হৃদয়ের ঋণ-হেলাল হাফিজ। ফটোঃ সংগৃহীত
হৃদয়ের ঋণ
-হেলাল হাফিজ

আমার জীবন ভালোবাসাহীন গেলে
কলঙ্ক হবে কলঙ্ক হবে তোর,
খুব সামান্য হৃদয়ের ঋণ পেলে
বেদনাকে নিয়ে সচ্ছলতার ঘর

বাঁধবো নিমেষে। শর্তবিহীন হাত
গচ্ছিত রেখে লাজুক দু’হাতে আমি
কাটাবো উজাড় যুগলবন্দী হাত
অযুত স্বপ্নে। শুনেছি জীবন দামী,

একবার আসে, তাকে ভালোবেসে যদি
অমার্জনীয় অপরাধ হয় হোক,
ইতিহাস দেবে অমরতা নিরবধি
আয় মেয়ে গড়ি চারু আনন্দলোক।

দেখবো দেখাবো পরস্পরকে খুলে
যতো সুখ আর দুঃখের সব দাগ,
আয় না পাষাণী একবার পথ ভুলে
পরীক্ষা হোক কার কতো অনুরাগ।
-সংগৃহীত
  • ৪:৩০:০০ PM
Hariken -lamp light effect
Photo Credit and Photoshop: Copy right @Nilkantobd
একটি বৃষ্টির সন্ধ্যায়- জয় গোস্বামী 

চোখ, চলে গিয়েছিল, অন্যের প্রেমিকা, তার পায়ে।
যখন, অসাবধানে, সামান্যই উঠে গেছে শাড়ি—
বাইরে নেমেছে বৃষ্টি। লন্ঠন নামানো আছে টেবিলের নীচে, অন্ধকারে
মাঝে মাঝে ভেসে উঠেছে লুকোনো পায়ের ফর্সা আভা…
অন্যায় চোখের নয়। না তাকিয়ে তার কোনো উপায় ছিল না।
সত্যিই ছিল না? কেন?—হুহু করে বৃষ্টিছাট ঢুকে আসে ঘরে
সত্যিই ছিল না? কেন?—কাঁটাতারে ঝাঁপায় ফুলগাছ
সত্যিই ছিল না? কেন?—অনধিকারীর সামনে থেকে
সমস্ত লুকিয়ে নেয় নকশা-কাটা লেসের ঝালর…
এখন থেমেছে বৃষ্টি। এখন এ-ঘর থেকে উঠে গেছে সেও।
শুধু, ফিরে আসছে হাওয়া। শুধু, এক অক্ষমের চোখের মতন
মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে টেবিলের তলার লন্ঠন।
  • ৩:৪৫:০০ PM
-জয় গোস্বামী

পাখিটি আমাকে ডেকে বলল তার ডানার জখম
বলল যে কীভাবে তার পালকে সংসার পোড়া ছ্যাঁকা
কীভাবে পায়ের মধ্যে ফুটো করে ঢুকে এল চেন
ঠোঁট দিয়ে খাঁচার শিক কাটতে গিয়ে ঠোঁটের জখম
দ্যাখালো, বাইরে থেকে আমি নিজ ওষ্ঠ থেকে ওম
দিলাম, খাঁচার দরজা খুলে তাকে “বাঁচবিযদি আয়’,
বলে বার করে এনে রাখলাম আর একটা খাঁচায়
সেখানে দুজনে বন্দি পরস্পর দোষারোপ করি,
দোষারোপ করতে করতে বৃষ্টি আসে, সন্ধে হয়ে যায়।

-সংগৃহীত
  • ৪:৩৪:০০ AM
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত 
sottendronath dotto photo
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

(জন্ম: ফেব্রুয়ারি ১১, ১৮৮২ - মৃত্যু: ফেব্রুয়ারী ২৫, ১৯২২) একজন বাঙালি কবি ও ছড়াকার। তাঁর কবিতায় ছন্দের কারুকাজ, শব্দ ও ভাষা যথোপযুক্ত ব্যবহারের কৃতিত্বের জন্য তাঁকে ছন্দের যাদুকর নামে আখ্যায়িত করা হয়। মধ্যযুগে ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি, পৌরাণিক প্রভৃতি বুদ্ধি-বৃত্তিবিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্তের অধিকারী।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের জন্ম ১৮৮২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কলকাতার নিকটবর্তী নিমতা গ্রামে। তার পৈতৃক নিবাস বর্ধমান এর চুপী গ্রামে। পিতা রজনীনাথ দত্ত ছিলেন কলকাতার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং পিতামহ অক্ষয় কুমার দত্ত ছিলেন তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক। সত্যেন্দ্রনাথের কবিতায় নানা ভাষার শব্দ নিপুণ ছন্দে যুক্ত হয়েছে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদকর্মও করেছেন। সত্যেন্দ্রনাথ কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৯৯) এবং জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন (বর্তমান স্কটিশ চার্চ কলেজ) থেকে এফএ (১৯০১) পাস করেন। কিন্তু পরে বিএ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন।

কাব্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করার আগে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত পিতার ব্যবসায় যোগ দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতী পত্রিকাগোষ্ঠীর অন্যতম কবি। প্রথম জীবনে তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্ত, অক্ষয় কুমার বড়াল প্রমুখের দ্বারা প্রভাবিত হন। পরে রবীন্দ্র অনুসারী হলেও তিনি স্বতন্ত্র হয়ে ওঠেন। বাংলা শব্দের সঙ্গে আরবি-ফার্সি শব্দের সমন্বিত ব্যবহার দ্বারা বাংলা কাব্যভাষার শক্তি বৃদ্ধির প্রাথমিক কৃতিত্ব তারই। অনুবাদের মাধ্যমে তিনি বিশ্বের কাব্যসাহিত্যের সঙ্গে বাংলার যোগাযোগ ঘটান। নবকুমার, কবিরত্ন, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর প্রভৃতি ছদ্মনামে তিনি কবিতা লিখতেন। দেশাত্মবোধ, মানবপ্রীতি, ঐতিহ্যচেতনা, শক্তিসাধনা প্রভৃতি তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু। ১৯১৮ সালে ভারতী পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায় ছন্দ সম্পর্কিত তার প্রসিদ্ধ রচনা ‘ছন্দ-সরস্বতী’ প্রকাশিত হয়। তাঁর অপর কৃতিত্ব বিদেশী কবিতার সফল অনুবাদ। আরবি-ফার্সি, চীনা, জাপানি, ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষার বহু কবিতা অনুবাদ করে বাংলাসাহিত্যের বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধি সাধন করেন। মেথরদের মতো অস্পৃশ্য ও অবহেলিত সাধারণ মানুষ নিয়েও তিনি কবিতা লিখেছেন। তিনি একাধিক ছদ্মনামে কবিতা চর্চা করতেন।[২] কবিতায় ছন্দের সমৃদ্ধতার জন্য তিনি ছন্দের রাজা ও ছন্দের যাদুকর বলে খ্যাত।

মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে ১৯২২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত পরলোকগমন করেন।

কাব্যগ্রন্থ

সবিতা (১৯০০)
সন্ধিক্ষণ (১৯০৫)
বেণু ও বীণা (১৯০৯)[৪]
হোমশিখা (১৯০৭)
ফুলের ফসল (১৯১১)
কুহু ও কেকা (১৯১২) [৫]
তুলির লিখন (১৯১৪)
মনিমঞ্জুষা (১৯১৫)
অভ্র-আবীর (১৯১৬)
হসন্তিকা (১৯১৯)
বেলা শেষের গান (১৯২৩)
বিদায় আরতি (১৯২৪)

উৎসঃ বাংলা উইকিপিডিয়া/ Wikipedia
  • ৪:২৭:০০ AM
জীবনানন্দ দাশঃ

Jibonanond dash photo
জীবনানন্দ দাশ

১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৯ - ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪; ৬ ফাল্গুন, ১৩০৫ - ৫ কার্তিক, ১৩৬১ বঙ্গাব্দ)[২] ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম।[১] জীবনানন্দের প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী।[১] মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে যখন তার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কবিতে পরিণত হয়েছেন।[৩]

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ জীবনানন্দের কাব্যে হয়ে উঠেছে চিত্ররূপময়, তাতে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি’ অভিধায় খ্যাত হয়েছেন।[১][৪] বুদ্ধদেব বসু তাঁকে নির্জনতম কবি বলে আখ্যায়িত করেছেন। আবদুল মান্নান সৈয়দ তাঁকে শুদ্ধতম কবি বলেছেন।[৫] সমালোচকদের অনেকে তাঁকে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল-পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি বলে মনে করেন।[৬] জীবনানন্দের বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থ নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত (১৯৫৩) হয়। ১৯৫৫ সালে শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থটি ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করে।[১] জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মাঝে রয়েছে রূপসী বাংলা, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, বেলা অবেলা কালবেলা, শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি।

জীবনানন্দ দাশ প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন। তবে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুর পূর্বে তিনি ২১টি উপন্যাস এবং ১০৮টি ছোটগল্প রচনা করেছিলেন যার একটিও তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি। তাঁর জীবন কেটেছে চরম দারিদ্রের মধ্যে। বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধকালে অনপনেয়ভাবে বাংলা কবিতায় তাঁর প্রভাব মুদ্রিত হয়েছে।

উৎসঃ বাংলা উইকিপিডিয়া
  • ৩:৪৮:০০ AM
churuivati-nilkanto-photo
চড়ুইভাতির দৃশ্যঃ সংগৃহীত




চড়ুইভাতি-
কপিরাইট© নীলকান্ত

যাহ!
তোকে চাইব না আর ডাকতে কাছে,
ভ্যান্না তলায়, কলার পাতায় ঘর বানাতে।
আমন খরের জাজিম পেতে
ডাকবো না আর,
চাইবো না আর বউ বানাতে।
গোল মরিচের তরকারি আর
জংলী কচুর শাক,
বলব না আর রাঁধতে তোকে
বালি মাটির ভাত।
করবো না আর  মাটির থালায়
মিছি মিছি বউভাত।
গামছা পড়িয়ে চাইব না আর বউ বানাতে,
ভ্যান্না তলায় কলার পাতার ঘর পাতাতে।
বলব না আর,বৃষ্টি মাথায় আসতে কাছে,
ডাকবো না আর, বউ বলে রাগলে পাছে।
যাহ!
তোকে ডাকবো না আর চড়ুইভাতির
ঘর সাজাতে,
চাইবো না আর ভ্যান্না তলায়
কলার পাতা,আমনের খর আর
কঞ্চি কেটে ঘর বানাতে।।
#নীলকান্ত©

প্রথম প্রকাশঃ ২০ অক্টোবর ২০১৪ ইং  সময় 8:19:00 PM
[[ কেন জানি ছেলেবেলায় ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে খুব।সেই চড়ুইভাতি, কলা পাতার ছাউনি,কচুরিপানার মাছ,মাটির হাড়ি পাতিল, মিছিমিছি ভাত রান্না করা আবার ফিরে পেতে ইচ্ছে করছে খুব।]]

মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০১৯

  • ১২:৫৫:০০ AM
কমলে কামিনী
- মাইকেল মধুসূদন দত্ত


কমলে কামিনী আমি হেরিনু স্বপনে
কালিদহে। বসি বামা শতদল-দলে
(নিশীথে চন্দ্রিমা যথা সরসীর জলে
মনোহরা।) বাম করে সাপটি হেলনে
গজেশে, গ্রাসিছে তারে উগরি সঘনে
গুঞ্জরিছে অলিপুঞ্জ অন্ধ পরিমলে,
বহিছে দহের বারি মৃদু কলকলে!---
কার না ভোলে রে মনঃ, এহেন ছলনে!
কবিতা-পঙ্কজ-রবি, শ্রীকবিকঙ্কণ,
ধন্য তুমি বঙ্গভূমে! যশঃ-সুধাদানে
অমর করিলা তোমা অমরকারিণী
বাগ্‌দেবী! ভোগিলা দুখ জীবনে, ব্রাহ্মণ,
এবে কে না পূজে তোমা, মজি তব গানে?---
বঙ্গ-হৃদ-হ্রদে চণ্ডী কমলে কামিনী॥

======================
চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়
- রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়- বিচ্ছেদ নয়
চলে যাওয়া মানে নয় বন্ধন ছিন্ন-করা আর্দ্র রজনী
চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে
আমার না-থাকা জুড়ে।
জানি চরম সত্যের কাছে নত হতে হয় সবাইকে-
জীবন সুন্দর
আকাশ-বাতাস পাহাড়-সমুদ্র
সবুজ বনানী ঘেরা প্রকৃতি সুন্দর
আর সবচেয়ে সুন্দর এই বেঁচে থাকা
তবুও কি আজীবন বেঁচে থাকা যায়!
বিদায়ের সেহনাই বাজে
নিয়ে যাবার পালকি এসে দাঁড়ায় দুয়ারে
সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে
এই যে বেঁচে ছিলাম
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে যেতে হয়
সবাইকে
অজানা গন্তব্যে
হঠাৎ ডেকে ওঠে নাম না জানা পাখি
অজান্তেই চমকে ওঠি
জীবন, ফুরালো নাকি!
এমনি করে সবাই যাবে, যেতে হবে।
  • ১২:৪৫:০০ AM
জয় গোস্বামী কবিতা-ফটো
আমি তো আকাশ সত্য গোপন রাখিনি

আমি তো আকাশসত্য গোপন রাখিনি
- জয় গোস্বামী

সূর্য পোড়া ছাই
আমি তো আকাশসত্য গোপন রাখিনি
খুলে দ্যাখো পাখির কঙ্কাল।

নীচের প্রান্তরে উড়ত পাখি ও পাখিনী
অনেক উপরে ঢালু বাটির মতন শূন্য ধ’রে
আমি তার ছায়াচিত্র তুলে রাখতাম।

এ দৃশ্য যে দেখেছিল তার মধ্যে থেকে আজ আর
আলো অব্দি বেরোতে পারে না।
সেখানে দিবস রাত্রি নেই, শুধু জমে থাকা
থলথলে অন্ধকার সময় একতাল।
তার চারিদিকে আজ শেষ হয়ে যাওয়া
জ্যোতিষ্ককোটর ভরা ছাই।

আমি দীর্ঘাকার প্রভা নিয়ে
তার বৃত্তপথ থেকে, ধীরে ধীরে, দূরতম শূন্যে সরে যাই
  • ১২:৪২:০০ AM
নগ্ন নির্জন হাত
- জীবনানন্দ দাশ

আবার আকাশে অন্ধকার ঘন হয়ে উঠেছে:
আলোর রহস্যময়ী সহোদরার মতো এই অন্ধকার।

যে আমাকে চিরদিন ভালোবেসেছে
অথচ যার মুখ আমি কোনাদিন দেখিনি,
সেই নারীর মতো
ফাল্গুন আকাশে অন্ধকার নিবিড় হয়ে উঠেছে।

মনে হয় কোনো বিলুপ্ত নগরীর কথা
সেই নগরীর এক ধুসর প্রাসাদের রূপ জাগে হৃদয়ে।

ভারতসমুদ্রের তীরে
কিংবা ভূমধ্যসাগরের কিনারে
অথবা টায়ার সিন্ধুর পারে
আজ নেই, কোনা এক নগরী ছিল একদিন,
কোন এক প্রাসাদ ছিল;
মূল্যবান আসবাবে ভরা এক প্রাসাদ;
পারস্য গালিচা, কাশ্মিরী শাল, বেরিন তরঙ্গের নিটোল মুক্তা প্রবাল,
আমার বিলুপ্ত হৃদয়, আমার মৃত চোখ, আমার বিলীন স্বপ্ন আকাঙ্খা,
আর তুমি নারী-
এই সব ছিল সেই জগতে একদিন।

অনেক কমলা রঙের রোদ ছিল,
অনেক কাকাতুয়া পায়রা ছিল,
মেহগনির ছায়াঘর পল্লব ছিল অনেক;
অনেক কমলা রঙের রোদ ছিল;
অনেক কমলা রঙের রোদ;
আর তুমি ছিলে;
তোমার মুখের রূপ কত শত শতাব্দী আমি দেখি না,
খুঁজি না।

ফাল্গুনের অন্ধকার নিয়ে আসে সেই সমুদ্রপারের কাহিনী,
অপরূপ খিলানও গম্বুজের বেদনাময় রেখা,
লুপ্ত নাশপারিত গন্ধ,
অজস্র হরিণ ও সিংহের ছালের ধুসর পান্ডুলিপি,
রামধনু রঙের কাচের জানালা,
ময়ুরের পেখমের মতো রঙিন পর্দায় পর্দায়
কক্ষ ও কক্ষান্তর থেকে আরো দূর কক্ষ ও কক্ষান্তরের
ক্ষণিক আভাস-
আয়ুহীন স্তব্ধতা ও বিস্ময়।

পর্দায়, গালিচায় রক্তাভ রৌদ্রের বিচ্ছুরিত স্বেদ,
রক্তিম গেলাসে তরমুজ মদ!
তোমর নগ্ন নির্জন হাত;

তোমার নগ্ন নির্জন হাত।
  • ১২:৪০:০০ AM


বনলতা সেন
- জীবনানন্দ দাশ

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে , ‘এতোদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে — সব নদী- ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।
  • ১২:৩৮:০০ AM
sunil-gangopadhyay photo
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

হঠাৎ নীরার জন্য
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়---

আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি
বাস স্টপে দেখা হলো তিন মিনিট, অথচ তোমায় কাল
                                   স্বপ্নে বহুক্ষণ
দেখেছি ছুরির মতো বিঁধে থাকতে সিন্ধুপারে–দিকচিহ্নহীন–
বাহান্ন তীর্থের মতো এক শরীর, হাওয়ার ভিতরে
তোমাকে দেখছি কাল স্বপ্নে, নীরা, ওষধি স্বপ্নের
নীল দুঃসময়ে।

দক্ষিণ সমুদ্রদ্বারে গিয়েছিলে কবে, কার সঙ্গে? তুমি
আজই কি ফিরেছো?
স্বপ্নের সমুদ্র সে কী ভয়ংকর, ঢেউহীন, শব্দহীন, যেন
তিনদিন পরেই আত্মঘাতী হবে, হারানো আঙটির মতো দূরে
তোমার দিগন্ত, দুই উরু ডুবে কোনো জুয়াড়ির সঙ্গিনীর মতো,
অথচ একলা ছিলে, ঘোরতর স্বপ্নের ভিতরে তুমি একা।

এক বছর ঘুমোবো না, স্বপ্নে দেখে কপালের ঘাম
ভোরে মুছে নিতে বড় মূর্খের মতন মনে হয়
বরং বিস্মৃতি ভালো, পোশাকের মধ্যে ঢেকে রাখা
নগ্ন শরীরের মতো লজ্জাহীন, আমি
এক বছর ঘুমোবো না, এক বছর স্বপ্নহীন জেগে
বাহান্ন তীর্থের মতো তোমার ও-শরীর ভ্রমণে
পুণ্যবান হবো।

বাসের জানালার পাশে তোমার সহাস্য মুখ, ‘আজ যাই,
                                   বাড়িতে আসবেন!’

রৌদ্রের চিৎকারে সব শব্দ ডুবে গেল।
‘একটু দাঁড়াও’, কিংবা ‘চলো লাইব্রেরির মাঠে’, বুকের ভিতরে
কেউ এই কথা বলেছিল, আমি মনে পড়া চোখে
সহসা হাতঘড়ি দেখে লাফিয়ে উঠেছি, রাস্তা, বাস, ট্রাম, রিকশা, লোকজন
ডিগবাজির মতো পার হয়ে, যেন ওরাং উটাং, চার হাত-পায়ে ছুটে
পৌঁছে গেছি আফিসের লিফ্‌টের দরজায়।

বাস স্টপে তিন মিনিট, অথচ তোমায় কাল স্বপ্নে বহুক্ষণ।।
  • ১২:২৪:০০ AM
sottendronath dotto photo
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
ঝর্ণা
- সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

ঝর্ণা! ঝর্ণা! সুন্দরী ঝর্ণা!
তরলিত চন্দ্রিকা! চন্দন-বর্ণা!
     অঞ্চল সিঞ্চিত গৈরিকে স্বর্ণে,
     গিরি-মল্লিকা দোলে কুন্তলে কর্ণে,
তনু ভরি' যৌবন, তাপসী অপর্ণা!
            ঝর্ণা!
পাষাণের স্নেহধারা! তুষারের বিন্দু!
ডাকে তোরে চিত-লোল উতরোল সিন্ধু|
     মেঘ হানে জুঁইফুলী বৃষ্টি ও-অঙ্গে,
     চুমা-চুমকীর হারে চাঁদ ঘেরে রঙ্গে,
ধূলা-ভরা দ্যায় ধরা তোর লাগি ধর্ণা!
             ঝর্ণা!
এস তৃষার দেশে এস কলহাস্যে -
গিরি-দরী-বিহীরিনী হরিনীর লাস্যে,
     ধূসরের ঊষরের কর তুমি অন্ত,
     শ্যামলিয়া ও পরশে কর গো শ্রীমন্ত;
ভরা ঘট এস নিয়ে ভরসায় ভর্ণা;
             ঝর্ণা!
শৈলের পৈঠৈয় এস তনুগত্রী!
পাহাড়ে বুক-চেরা এস প্রেমদাত্রী!
     পান্নার অঞ্জলি দিতে দিতে আয় গো,
     হরিচরণ-চ্যুতা গঙ্গার প্রায় গো,
স্বর্গের সুধা আনো মর্ত্যে সুপর্ণা!
             ঝর্ণা!
মঞ্জুল ও-হাসির বেলোয়ারি আওয়াজে
ওলো চঞ্চলা ! তোর পথ হল ছাওয়া যে!
     মোতিয়া মোতির কুঁড়ি মূরছে ও-অলকে;
     মেখলায়, মরি মরি, রামধনু ঝলকে
তুমি স্বপ্নের সখী বিদ্যুত্পর্ণা
             ঝর্ণা!

সোমবার, ২৭ মে, ২০১৯

  • ১০:৫৭:০০ PM
জবা


আমারে লইয়া সুখী হও তুমি ওগো দেবী শবাসনা,
আর খুঁজিও না মানব-শোনিত, আর তুমি খুঁজিও না|
আর মানুষের হৃত্ পিণ্ডটা নিওনা খড়গে ছিঁড়ে,
হাহকার তুমি তুলো না গো আর সুখের নিভৃত নীড়ে|
এই দেখ আমি উঠেছি ফুটিয়া উজলি পুষ্পসভা,
ব্যথিত ধরার হৃত্ পিণ্ডটি আমি যে রক্তজবা|
তোমার চরণে নিবেদিত আমি, আমি যে তোমার বলি,
দৃষ্টি-ভোগের রাঙ্গা খর্পরে রক্ত কলিজা-কলি|
আমারে লইয়া খুশি হও ওগো, নম দেবি নম নম,
ধরার অর্ঘ্য করিয়া গ্রহণ, ধরার শিশুরে ক্ষম|

Satyendranath Dutta
  • ১০:৫৫:০০ PM
কেউ কথা রাখেনি



কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর
কাটলো, কেউ কথা রাখেনি
ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার
আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল
শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু
শুনিয়ে যাবে
তারপর কত চন্দ্রভূক
অমাবস্যা চলে গেলো, কিন্তু সেই
বোষ্টুমী
আর এলোনা
পঁচিশ বছর প্রতিক্ষায় আছি।
মামা বাড়ির মাঝি নাদের
আলী বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর
তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল
দেখাতে নিয়ে যাবো
সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর
ভ্রমর
খেলা করে!
নাদের আলী, আমি আর কত বড় হবো?
আমার মাথা এ ঘরের ছাদ
ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর
তুমি আমায়
তিন প্রহরের বিল দেখাবে?
একটাও রয়্যাল
গুলি কিনতে পারিনি কখনো
লাঠি-লজেন্স
দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে
লস্করবাড়ির ছেলেরা
ভিখারীর মতন চৌধুরীদের
গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি
ভিতরে রাস-উৎসব
অবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ
পরা ফর্সা রমণীরা
কত রকম আমোদে হেসেছে
আমার দিকে তারা ফিরেও চায়নি!
বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন,
দেখিস, একদিন, আমরাও…
বাবা এখন অন্ধ, আমাদের
দেখা হয়নি কিছুই
সেই রয়্যাল গুলি, সেই লাঠি-লজেন্স,
সেই রাস-উৎসব
আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবেনা!
বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল
রেখে বরুণা বলেছিল,
যেদিন আমায় সত্যিকারের
ভালবাসবে
সেদিন আমার বুকেও এ-রকম আতরের গন্ধ
হবে!
ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠোয়
প্রাণ নিয়েছি
দূরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল
কাপড়
বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন
করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীল পদ্ম
তবু কথা রাখেনি বরুণা, এখন তার
বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ
এখনো সে যে-কোনো নারী।
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর
কাটল, কেউ কথা রাখে না!
কপিরাইট© নীলকান্ত সময় 2:57:00 PM 

  • ১০:৫৩:০০ PM

         
প্রিয় সূপর্ণা,
                 তুমি বলছিলে, “সারাটা জীবন ছায়া হয়ে, আমি তোমার পাশে থাকব”।আমি সেদিনও বুঝিনি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আমি ভেবেছিলাম সারা জীবন তুমি আমার হাত ধরে পাশা-পাশি হাঁটবে, অচেনা-অজানা জীবনের বন্ধুর পথ এক সাথে পাড়ি দেব। কিন্তু দেখ, আজ আমাকে একা একা এতটা পথ আসতে হল তোমাকে ছাড়া।
সেদিন হেমন্তের মধ্য দুপুরে যখন হেঁটে চলেছি গ্রামের ওই মেঠো পথ ধরে। হটাৎই মনে হল আমার পেছনে কে যেন আমাকে অনুসরণ করছে। এক ঝাঁপটা দক্ষিনা বাতাসে তোমার শরীরের মিষ্টি গন্ধ পেলাম। পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখি আশে-পাশে কেউ নেই। নিজের অজান্তেই তোমার নাম ধরে একবার ডেকে ফেললাম, “সুপর্ণা”। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম তুমি নেই, তুমি কখনো আসবে না।

এতটা  বছর ধরে,এত পথ পাড়ি দিলাম একা একা।তুমি আমার সাথে ছায়া হয়ে থাকবে বলেছিলে কিন্তু যখনই তোমার ছায়া খুজে ফিরি তখনই দেখি আমারি ছায়া। তুমি কথা রাখনি।আজ তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু কিভাবে করব বল? তুমি তো সেই কবেই না ফেরার দেশে চলে গেছ আমাকে একাকী করে।
তোমার স্মৃতি গুলোর ভার আমি আর বইতে পারছি না, সুপর্ণা ।তাই এই শেষ চিঠি তোমার কাছে ঠিকানা বিহীন পাঠিয়ে দিলাম। ভালো থেকো তুমি।

ইতি
নীলকান্ত

  • ১০:৪৮:০০ PM
বৈশাখী বাঙালিপনা
==============
পহেলা বৈশাখ এলে পান্তা খাওয়ার ধুম পরে যায়। এমন কি বাঙালি হওয়ার জন্য যে জীবনে ঠান্ডা ভাত খেতে পারে না বা খায় না সেও কাচা মরিচ আর পেয়াজ নিয়ে বসে পান্তা খেতে( যদিও আমি এটাকে বলি, বৈশাখী বাঙালি।কারন এরা শুধু বৈশাখ মাসে বাঙালি হয়)। তখন গ্রাম বাঙলার আঞ্চলিক গান,গরুর গাড়ি আর রং বেরঙের বাংলা শাড়ি পরে,লুঙ্গী পরে রাস্তায় বাঙালি চেতনা ফুটিয়ে তোলে(আসলে এইটা একটা ফ্যাশান আর কি! ফটো শুট আর ফেসবুকে আপলোড দিয়ে বাঙালিপনা দেখানোর জন্য)। এরপর বৈশাখ শেষ তো,
এ ছি!  গরুর গাড়িতে কেউ ঊঠে না কি!
পান্তা?  ওহ নো,  নেভার।
হঠাৎ করে রাস্তায় চলতে চলতে যদি কোন গ্রামের চাষা-ভূসার গায়ের  সাথে গা লেগে যায় তো,
ইউ ব্লাডি রাসকেল!
দেখে চলতে পারো না।
তারপর, ছি ছি করে যেখানে সেই গেয়ো ভূত টার স্পর্শ লেগেছে সেই জায়গা দশবার করে ঝারেন।যেন,ওই খানে কোন বিষ্ঠা লেগেছে।
বলি, এই আপনার পান্তা খেয়ে বাঙালি সাজার নমুনা!
যখন বাসায় আসেন তখন টিভি অন করে রিমোট টিপে এইচ বি ও,স্টার মুভিজ,একশ্যান,স্টার এইচ ডি কিংবা জি সিনেমা,মাক্স,স্টার গোল্ড দেখেন।সন্ধ্যে হলে জলসা ঘরে বসেন অথবা স্টার প্লাসের সিরিয়াল দেখে দেখে নিজেকে স্টার ভাবেন।
কিন্তু ভুলেও বাংলা চ্যানেল বাংলা নাটক দেখার চেষ্টা ও করেন না।আবার আঞ্চলিক ভাষায় কোন নাটক যদিও বা দেখেন,দেখে মজাও নেন কিন্তু সমালোচনা করবার সময়,
"এই সব কি নাটক? কি গেয়ো ভাষা!  ছি! আমি তো কখনোঈ বাংলা নাটক দেখি না "।
আরে বাবা আপনি দেখবেন কিভাবে, সারাদিন তো আপনার হিন্দি আর ভারতীয় সিরিয়াল দেখতেই চলে যায়! বাংলা নাটক দেখার সময় কোথায়!
নাটক, সিনেমায় আঞ্চলিকতা এবং কিছু আঞ্চলিক গালি ব্যবহার হয় ঠিক, কিন্তু তা চরিত্রের প্রয়োজনে। আদার ওয়াইজ, নাটকের চরিত্রগুলো আনফিট লাগবে।
যাই হোক, এত কিছু বলা আমার উদ্দেশ্য না।আমার উদ্দেশ্য হলো,
"নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে আর যাই হোন না কেন,আপনি নিজেকে স্মার্ট ভাববার চেষ্টা করবেন না"।
বৈশাখী বাঙালি না হয়ে মনে প্রানে জন্য বাঙালি হয়ে যান।ওসব আনুষ্ঠানিক পান্তা খাওয়া আর নিজেকে বাঙালি জাহির করার দরকার পড়বে না।

  • ১০:৪৫:০০ PM

পারু,
হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে গেলো টিনের চালায় বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে।
একটু কান খাড়া করে শুনতে চাইলাম, আসলে এটা বৃষ্টি না তোমার নুপুরের নিক্কন।একবার
মনে হল, তুমি আমার বারান্দায় দাড়িয়ে আছো।
লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠলাম।দরজা খুলে দেখি,না সেখানে কেউ নেই বৃষ্টির ফোটারা ছাড়া।শুধু মাঝে মাঝে কে বা কারা যেন বেশ জোড়ে সোরে হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছে একেরপর এক।আর কোন অশতীপর বৃদ্ধার দৃষ্টি শক্তি বোধহয় একটু বেশিই কমে গেছে।না হলে এরকম সকালে বিজলী বাতি জ্বালিয়ে আমার বোকা হয়ে দাড়িয়ে থাকা দেখত না।
টিনের চাল বেয়ে বৃষ্টির ধারা সারি করে মাটিতে পরছে, তারপর গড়িয়ে গড়িয়ে জমা হচ্ছে ঐ নিচু জায়গাটায়। জানো পারু, ওখানে বৃষ্টির ফোটারা এক এক করে স্পেস স্যুট এর মাস্ক পড়ে কি দারুন ভাবে ভেসে যাচ্ছে! ইস! তুমি যদি দেখতে।
পারু,
কথা ছিলো,সকালে তোমার সাথে দেখা করব।আমারো খুব ইচ্ছে করছে এই বৃষ্টিতে কাক ভেজা হয়ে তোমার সামনে দাঁড়াতে। তারপর, খোলা আকাশের নিচে, ঝুম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হেটে যাব সাতমাথায়।ওখান থেকে পৌর পার্ক,খোকন পার্ক হয়ে আলতাবেলীর সামনের ফুট পাতে দাড়িয়ে দাড়িয়ে এক কাপ চা খাব ভাগা ভাগি করে।।লোকজন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে আর মাঝে মাঝে ঐ অশতীপর বৃদ্ধা হয়ত হাতের লাইট জ্বালিয়ে দেখবে আমাদের ছেলেমানুষি।
কিন্তু কি করব বলো, তুমিই তো বের হতে পারবে না। আর এখন যখন তোমাকে এত সব লিখছি তখন, হুমকি-ধামকির জোড় অনেক বেরে গেছে।বেড়ে গেছে বৃদ্ধার লাইটের চার্জ।।
এখন আমি কি করি বলো তো!!
পারু,
তুমিও কি জানালা খুলে বৃষ্টি দেখছ?
মনে হচ্ছে,তুমি হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোটাগুলো ধরে আলতো করে ঠোটের কোনে লাগিয়ে মিষ্টি করে হেসে উঠছো আমাকে ভেবে! দেখো, কি আশ্চার্য ! আমিও তো তোমার ছুয়ে দেয়া বৃষ্টিতে ভিজছি।এ যেন,তোমার স্পর্শ বুলিয়ে যাচ্ছে আলতোভাবে।
অনেক মিস করছি তোমাকে, পারু। অনেক মিস করছি তোমাকে।
এভাবেই মিস করে যাব কাল হতে অনন্তকাল ধরে। ভাল থেক প্রিয় পারু।আমি দেবদাস হয়ে না হয় পথ চেয়ে রইবো তোমার!

ইতি
নীলকান্ত
  • ১০:৪২:০০ PM
তোমায় খুঁজে ফিরি
                নীলকান্ত


হন্যে হয়ে তোমায় খুঁজে ফিরি
কখন পুরনিমার রুপালি চাঁদে-
কখন বা অমাবস্যার রাতে
জোনাকির মিটিমিটি আলোয়;
শ্রাবনে একটানা বৃষ্টিতে ,
দক্ষিণা হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো কাশফুলে,
অথবা দিন রাতের সন্ধিক্ষণ
রাঙা গোধূলিতে।

মেঘলা আকাশে কাল মেঘের
রগরগে বরসায়,
অথবা ফাগুণের নীল আকাশে
সালা মেঘের ভেলায়-
তোমায় খুঁজে ফিরি একান্ত আনমনে
ফেলে আসা স্মৃতির দরজায়।

গোমানির বুকে পাল তোলা-
জেলেদের নৌকায়,
বরষার প্লাবনে কলা গাছের ভভেলায়-
তোমায় খুঁজে ফিরি; আজ-
তেইশ বছর পড়ে, জীবনের এ বেলায়।
#nilkanto প্রকাশঃ 01-08-2014
  • ১০:৪১:০০ PM
চম্পা
সত্যন্দ্রনাথ দত্ত

আমারে ফুটিতে হ'লো বসন্তের অন্তিম নিশ্বাসে,
বিষণ্ণ যখন বিশ্ব নির্মম গ্রীষ্মের পদানত;
রুদ্র তপস্যার বনে আধ ত্রাসে আধেক উল্লাসে,
একাকী আসিতে হ'লো - সাহসিকা অপ্সরার মতো|

বনানী শোষণ-ক্লিষ্ট মর্মরি' উঠিল এক বার,
বারেক বিমর্ষ কুঞ্জে শোনা গেল ক্লান্ত কুহু স্বর;
জন্ম-যবনিকা-প্রান্তে মেলি' নব নেত্র সুকুমার
দেখিলাম জলস্থল, - শুন্য, শুষ্ক, বিহ্বল, জর্জর|

তবু এনু বাহিরিয়া, - বিশ্বাসের বৃন্তে বেপমান, -
চম্পা আমি, - খর তাপে আমি কভু ঝরিবো না মরি,
উগ্র মদ্য-সম রৌদ্র - যার তেজে বিশ্ব মুহ্যমান, -
বিধাতার আশির্বাদে আমি তা সহজে পান করি|

ধীরে এনু বাহিরিয়া, ঊষার আতপ্ত কর ধরি';
মূর্ছে দেহ, মোহে মন, - মুহুর্মুহু করি অনুভব!
সূর্যের বিভূতি তবু লাবণ্যে দিতেছ তনু ভরি';
দিনদেবে নমস্কার! আমি চম্পা! সূর্যের সৌরভ|
#সংগৃহীত
  • ১০:৪০:০০ PM

দেখা না হলেই হতো বেশ
                    নীলকান্ত

দেখা না হলেই হতো বেশ
দক্ষিনা হাওয়ায় কেন তুমি
উরিয়েছিলে কেশ!
দেখা না হলেই হতো বেশ।

গোধূলি বেলা
দিন যবে হবে শেষ,
দিগন্ত হতে হাসি হাসি মুখে এসে
চলে গেলে।
রেখে গেলে সে আবেশ।

দেখা না হলেই হতো বেশ।

অপলক চোখে চেয়ে থেকে তবু
মেটেনি মনের আশা
ও চোখে জেন মায়া ছিল শুধু
ছিল আরও বেশি নেশা।
আর তাইতো হারিয়েছি দিশা।
দিয়ে ভালবাসা, হয়ে গেছে
জীবনের শেষ।

দেখা না হলেই হতো বেশ।।
কপিরাইট© নীলকান্ত সময় 11:33:00 AM
প্রকাশকালঃSunday, March 3, 2013
  • ১০:৩৯:০০ PM

সুপর্না,
রাতের অন্ধকারের গুমট গন্ধ পাও তুমি?
কি বিশ্রী,ভয়ংকর এ গন্ধ!
মনে হয় যেন,
লাশের
গায়ে গুবরেপোকারা বাসা করেছে।
এক ঝাক শকুনির দল খুবলে খুবলে খাচ্ছে
আধারের পচা মাংস।
আর,
জানালার ফাক-
ফোকরগুলো গলে উত্তরের বাতাস
আমার ফুসফুসীয়
কার্যে এনেছে ধর্মঘট।
বন্ধ হয়ে গেছে হৃৎপিন্ডের মুদিখানা।
জানো সুপর্না,
যে আলো আমার বন্ধু ছিল,
তা আজ রুপ নিয়েছে পাওনাদারে।
ওর থেকে পালিয়ে বেড়াই।
যে আধার আমার স্বপ্নের রাজ্য ছিল,
তার গায়ে আজ পচন ধরেছে।
আজ তাই ওর গায়ে পচা মাংসের গন্ধ।
(সঙ্ক্ষিপ্ত)
কপিরাইট© নীলকান্ত সময় 12:14:00 PM
প্রকাশকালঃ 23-12-2013

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৯

  • ৮:৫৯:০০ AM


বলার মত কিছু নেই যে কথাটা বলা যায়!!
সারা রাত হা ডু ডু খেলে সকালে ঘুম ভাঙতে ভাঙতে যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে তা বুঝতে পারলাম কিছুক্ষন আগে। ঘুম ভাঙবেই বা কিভাবে! আজ ঘুমের দেবতার সাথে সাথে স্বপ্ন দেবীও যে বেশ প্রসন্ন ছিলো।দেবীর স্বদিচ্ছায় বন-বাদার, মাঠ-ঘাট,সমুদ্র-আকাশ কোনটাই বাদ যায়নি আজ। এই এখন সমুদ্রের মাঝে ছোট্ট ডিঙিতে মরনপণ বাচার লড়াই তো,কিছুক্ষন পর দেখি আকাশে ডানাবিহীন উড়ন্ত মানখি(মানুষ +পাখি)।নিজেকে সুপারম্যান কিংবা কৃষ টাইপের কিছু একটা মনে হচ্ছিল তখন। 
দেবী সবকিছুই ঠিকঠাকই মেইনটেইন করছিলেন কিন্তু হঠাৎ বোধহয় ঘুম দেবতার সাথে রোমাঞ্চ করতে করতে তিনি আমার ব্যাপারে খানিকটা উদাসীন হয়ে গেছিলেন। নয়ত,দুই জনের রোমাঞ্চকালীন সময়ে লোকাল ট্রেনের স্পিডটা মেইল ট্রেনের স্পিডে উঠায় যাত্রীর ছিট থেকে ছিটকে পড়েছিলাম আমি।  
বলি,ও দেবতা, লোকাল চালাও আর মেইল চালাও যাত্রী কেন পড়ে?? :p
যাই হোক ছিটকে পড়লাম তো পড়লাম তাও আবার মালীর ঘাড়ে।
আরে বাবা, এত জায়গা রেখে ওই খানেই ফেলতে হলো!
চেহারাটা এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না।তবে বেশ পুরোনো চেহারা।আই মিন, অনেক পুর্ব পরিচিত।হয়ত এক সময় তার জন্য আমিই পাগল ছিলাম!  কিন্তু,
মনের ঘরের জানালা দরজায় বোধহয় একটু বেশিই মরিচা ধরে গেছে।না হলে এত চেষ্টা করেও কিছুতেই ওর নাম মনে করতে পারছি না কেন!
বোধহয় শশী বা কুশি এই জাতীয় কোন একটা নাম ছিল ওর। হাল্কা গড়ন,দুধে আলতা গায়ের রং,মাথার মেঘকালো চুলগুলো ছেড়ে দিলে কোমড় ছুই ছুই করে আর ভাসা ভাসা চোখ যেন সবসময় স্বপ্ন দেখে। আমি বোধকরি একবার ওকে খোলা চুলে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখেছিলাম।
সেদিন ওর পড়নের আকাশি স্যালোয়ার কামিজ ভিজে শরীরের সাথে আটকে গেছে।সামনের চুলগুলো থেকে ফোটা ফোটা বৃষ্টি কণা কপাল চুইয়ে গাল বেয়ে ঠোটের কার্নিশে এসে মিশেছে আর ও আলতো ভাবে ওড়নার আচল দিয়ে গড়িয়ে পরা মুক্ত কনা মুছার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে।।
এভাবেই ওকে প্রথম দেখেছিলাম বোধহয়। কিন্তু কি আশ্চার্য আজ ওর নামটাই মনে নেই!!

স্বপ্নের মধ্যেও স্বপ্নদেবীর এই অহেতুক রসিকতায় কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে গেলাম। স্বপ্ন দেখছি, আমি সুপারম্যানের মত উড়ে চলেছি।হঠাৎ আমার সুপার ন্যাচারাল ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলো।আমি হাজার হাজার ফুট উপর থেকে নিচে পড়ে যাচ্ছি। ঈশ্বর আল্লাহ, পীর-আউলিয়া সবার নাম ধরে ডাকা ডাকি করছি কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত মরে যাবার আগে চোখটা বন্ধ করে প্রিয় মানুষগুলোর মুখ মনে করার চেষ্টা করছি।
নাহ!কারো কথাই মনে আসছে না।বরং মনে হচ্ছে,  এই বুঝি আমার জীবনের সাঙ্গ হবে এখানেই।।
কিন্তু কি আশ্চার্য,  আমি এত উঁচু থেকে পড়লাম কিন্তু মরলাম না। অবশ্য স্বপ্ন ছিলো বলেই এই অসম্ভবও সম্ভব হয়েছে।।এই যা!  এখন তো নিজেকে অনন্ত জলিল টাইপের কিছু একটা মনে হচ্ছে!! :p
যাই হোক, মাটিতে পরে যখন আমার চোখ খুললাম,তখন দেখি;পাশে সেই মেয়েটি। কি যত্ন করে আমার সেবা করছে!  আহা!
সামান্য কাটা ছেড়ায় বাংলা সিনেমার মলম লাগানো থেকে শুরু করে ব্যান্ডেজ, মন্ডেজ(মনের ব্যান্ডেজ) ইত্যাদি ইত্যাদি।   আর আমি কিনা তার নামটাই মনে করতে পারছিনা এখন।এমন কি স্বপ্নেও বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছি নাম মনে করতে,পারিনি। তবে সেই স্বপ্নের মধ্যে আমার কাটিয়ে দেয়া রোমাঞ্চকর, রোমান্টিক বছরটাও কাটিয়ে দিয়েছি বিনা নাম জেনে। কিভাবে যে বছর কেটে গিয়েছিল তা ভাবতেই অবাক লাগছে।আচ্ছা , বাস্তবেও কি এমন হতে পারে?  কি জানি!!!
হঠাৎ করে স্বপ্নের জগতে পার্থিব হস্তক্ষেপ আমার সাধের স্বপ্নটার বারোটা বাজিয়ে দিলো। স্বপ্নের মধ্যে পার্থিব  কে যেন জোরে জোরে ডাকছিল।ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি বারান্দার গেটে পত্রিকাওয়ালা।
"ভাই, আছেন?  এ মাসের বিলটা দেন।"
মনে মনে ভাবলাম, আরে ব্যাটা, আগে আমার স্বপ্ন ভাঙার ক্ষতিপূরণটা দিয়ে যা।তারপর বিল দেব!!
ইস!  কি সুন্দর স্বপ্নই না দেখছিলাম!!  এর মধ্যেও ডিস্ট্রার্ব??

পত্রিকাওয়ালা কে বিল দিয়ে বিদায় করে কিছুক্ষন শুয়ে শুয়ে
স্মৃতির ধুলো জমা ময়লা পাতা গুলো আরেকবার ঝেরে পরিস্কার করার চেষ্টা করলাম কিন্তু লাভ হলো না। আমার স্বপ্নে দেখা সেই মেয়েটার নামও আর জানা হলো না।।

Writer information NILKANTO