:::: MENU ::::
  • slider image 1

    Take my hand, take my whole life too.

  • slider image 2

    I never want to live without you

  • slider image 3

    I am who I am because of you.

শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১

  • ৪:২৮:০০ PM


২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি প্রচন্ড অসুস্থ হয়েছিলাম। এতটাই অসুস্থ যে, জীবনে প্রথমবারের মত আমাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিলো। 
আমার কপাল ভালো ছিলো কারণ,
তখনো বাংলাদেশে কোন করোনা রুগী ধরা পড়েনি। অন্যদিকে চীন, স্পেন কিংবা ইটালিতে তখন করোনার প্রাদুর্ভাব প্রচণ্ড। আর তখন একটা ধারণা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিলো যে, শুধুমাত্র যারা বিদেশফেরত(বিশেষ করে চীন,ইটালি ফেরত) কারো সংস্পর্শে গিয়েছে তাদেরই করোনা হবে। তা না হলে হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সুতরাং বলাই যায় যে, আমার করোনা হয়নি বা হবে না। কারণ আমি তখনও কোন বিদেশফেরত আত্মীয়,স্বজন,বন্ধু,বান্ধব বা পরিচিত কারো সংস্পর্শে যাইনি। হা হা হা। 

কিন্তু আমার যেসব লক্ষণ ছিলো তা পুরোপুরি করোনার বর্তমান লক্ষণসমূহের সাথে মিলে যায়।
আমার লক্ষণ গুলোর মধ্যে ছিলোঃ
১. প্রচণ্ড জ্বর (১০২-১০৩ ডিগ্রী)
২. সর্দি
৩. প্রচন্ড কাশি।( এতটাই কাশি যে,  কাশতে কাশতে বুক ব্যাথা এমনকি বাথরুম হয়ে যেত।)
৪. বমি।( বমি এতটাই ছিল যে, পানি খেলেও বমি হয়ে যেত,  ভাত কিংবা অন্য খাবার তো দূরের কথা। এমনকি জ্বরের জন্য প্যারাসিটেমল, বমির জন্য এমিস্টেট কিংবা কাশির জন্য মন্টিলুকাস্ট জাতীয় যে ঔষধই খাই না কেন তা বমি হয়ে বের হয়ে যেত।)
৫. পাতলা পায়খানা। (মনে আছে, আমি সোরওয়ার্দীতে ভর্তি হওয়ার পর সেদিনই বাথরুমে যেতে যেতেই প্যান্ট পর্যন্ত নষ্ট করে ফেলেছিলাম।)
৬. শ্বাস কষ্ট। (রাত্রে শ্বাস কষ্টে ঘুমাতে পারিনি।  মাঝ রাত্রে ঘুম ভেঙে জালানা খুলে হা করে শ্বাস নিয়েছি।)
৭. মাথা ব্যাথা। (মাঝে মাঝে মনে হত মাথাটা কেটে আলাদা করে রাখি।)
৮. র‍্যাশ ( সারা শরীরে হাম এর মত র‍্যাশ বের হয়েছিলো।) 


যাই হোক,
আমি তখন চাকরির সুবাদে ঢাকায় একা থাকি। পরিবার পরিজন কেউ সাথে ছিলো না তাই নিজের যা কিছুই হোক না কেন দেখার মত কেউ নেই। অগত্যা বাধ্য হয়ে কয়েকদিন নিজের সাথে লড়াই করলাম। 
এদিকে জ্বরের শুরুর দিকে একটু আধটু খেতে পারলেও ধীরে ধীরে পানি পর্যন্ত খাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছিল। কারন যা খেতাম তাই বমি হয়ে যেত। এমতাবস্থায় দিন সাতেক পর আর কোনভাবেই নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারছিলাম না। আমি সেসময় একটা ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি করি।আর ঔষধ কোম্পানিতে চাকুরির সুবাধে যেসব জানা শোনা প্রাথমিক চিকিৎসা ছিলো সব শেষ করে ফেলেছি। কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না। এভাবে থাকতে থাকতে ৪/৫ দিন কোন মত সামান্য স্যালাইনের পানি ছাড়া আর কিছুই খেতেও পারিনি। তাই যে মনের জোরে অসুস্থ শরীরটা কে চালিয়ে নিচ্ছিলাম এতদিন তা আর মনের জোরে কাজ করছিল না। শারীরিক দূর্বলতা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলো সাথে সাথে শ্বাস কষ্টের মত সমস্যা তো ছিলই।

আমার এরকম অবস্থা দেখে 
রুমমেট দুইটা ছোট ভাই বারবার আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলেও এতদিন আমি পাত্তা দেইনি। কিন্তু পরে আর পারছিলাম না।মনে হচ্ছিলো, আমি বোধহয় জীবনের কাছে হেরে যাবো। 
সত্যি বলতে কি,আমার জীবনের কৃত কর্মগুলো আমার চোখের সামনে ভাসছিল তখন। জীবনের ভুল গুলোর জন্য অনুশোচনার শেষ ছিলো না। আমি হয়ত বাঁচবো না আর এমনই চিন্তাভাবনা মাথায় এসে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছিলো।

আমি আমার ডায়রি নিয়ে বসলাম। ভেবেই নিয়েছিলাম,আমি আর হয়ত বাচবো না। তাই ডায়রির পাতা ভরে আমার সব লেন- দেন, ভুল ভ্রান্তি,  যাদের মনে কষ্ট দিয়েছি তাদের নাম, কি কারণে কিভাবে কষ্ট দিয়েছি সেগুলো। আমার বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া একাউন্ট, মেইল একাউন্ট,পাসওয়ার্ড, ব্যাংকিং পিন ইত্যাদি লিখে রাখতাম ডায়রিতে।  যেন আমি মারা গেলেও পরিবারের লোকজন আমার পক্ষ থেকে সেগুলোর সমাধান করে কিংবা আমার কথাগুলো জানতে পারে।

বাবা মায়ের কাছে শেষ চিঠিও লিখলাম। তারপর নিজের সব কর্ম অপকর্ম লিপিবদ্ধ করে নিজের শেষ নিশ্বাসের জন্য যেন অপেক্ষা ছাড়া আমার যেন আর উপায় ছিল না। 

এদিকে আমার অসুস্থতা বেশি দেখে আর আমার হাল ছেড়ে দেয়া দেখে রুমমেট ছোট ভাই দুইটা আমাকে একরকম জোর করেই হাসপাতালে নিয়ে গেলো। সৌরওয়ার্দী তে ভর্তি করলো। 

আমার কাছ থেকে ফোন নাম্বার নিয়ে বাসায় সংবাদ দেয়া হলো। মা বাবা সব কিছু জেনে অস্থির হয়ে উঠলেন। প্রিয় জন যারা ছিলো তারাও বারবার খোজ নেয়া শুরু করলেন। কিন্তু ফোনে কথা বলার শক্তিও যেন আর ছিল না। এদিকে আব্বা আম্মা ঢাকা আসার জন্য রওয়ানা হলেন সেদিনই।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর
আমার রিজিওনাল সেলস ম্যানেজার বস,এরিয়া ম্যনেজার বস সহ সহকর্মী রা বলতে গেলে আমার জন্য যা করেছে তার ঋণ কোনদিন শোধ করতে পারবো না। বাকের বস নিজের বাসা থেকে নরম খাবার বানিয়ে নিয়ে এসেছে আমার জন্য। ছোট ভাইয়ের মত মুখে তুলে খাইয়েছে। হয়ত আপন ভাইও অনেক সময় এতটা করেন না যতটা বাকের বস আমার জন্য করেছেন। চির কৃতজ্ঞ আমি তার কাছে।
তাছাড়া আমার কাছের এক বান্ধবী ঘন্টার পর ঘন্টা বসে বসে আমার মাথায় পানি দিয়েছে, জলপটি দিয়েছে,ধরে বসিয়ে ঔষধ খাইয়েছে। সত্যিই এদের ঋণ কখনো শোধ হবার নয়। ছোট মামাতো ভাই এসে পাশে থেকেছে। নানা ভাবে সহযোগিতা করেছে। ওদের কাছে আমার ঋণ শোধ হবার মত না।

যাই হোক,
আব্বা আম্মা সন্ধ্যা নাগাদ ঢাকা এসে পৌছালো। আসলে সন্তান যখন বিপদে থাকে তখন বাবা মা যত দূরেই থাক আর যত কষ্টই হোক সন্তানের কাছে ছুটে আসে। আমার বাবা মাও তার ব্যতিক্রম নন। চিরদিন শক্ত হৃদয়ের বাবার চোখেও ছলছল জল দেখেছি সেই দিন। আর গত ২৭-২৮ বছর যা বুঝিনি সেদিন সেটা বুঝেছিলাম। বুঝেছিলাম, বাবারা উপরে যতটা শক্তই হোন, সন্তানের বিপদে অন্তরে ততটাই নরম।



অসুস্থতার ৭ম দিনে আমি হাসপাতালে ভর্তি হলাম। ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে আমায় স্যালাইন করা হলো। ওরালি কিছুই খেতে পারছিলাম না। তাই হাসপাতালে ভর্তির পর তিনদিন শুধু স্যালাইন চলেছে। টাইফয়েড, ডেঙ্গু, কিংবা জানা শোনা যেসব রোগ আছে তা নির্ণয়ের জন্য ব্লাড টেষ্ট,এক্স রে, ইউরিন টেস্ট সহ নানা টেস্ট দেয়া হলো। সেগুলো করালাম। নিউমোনিয়ার লক্ষণ ছাড়া তেমন কোন কিছু পাওয়া গেলো না। 
ডাক্তার মেডিকেশন দিলেন। সেগুলো চলতে থাকলো একটানা। নিয়ম করে সকাল বিকাল নার্স এসে ইঞ্জেকশন দিয়ে যেতেন। রাত্রে ডাক্তার  এসে রিপোর্ট দেখে, একটু আধটু খোজ নিতেন। প্রয়োজনে নতুন ঔষধ লিখতেন।আবার চএ যেতেন।
এভাবে হাসপাতালের দিন গুলো কাটছিলো আমার। এই কদিন  হাসপাতালের বেডে শুয়ে চোখের সামনে অনেক রুগীর মৃত্যু দেখলাম। মৃত ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারি তে হাসপাতালের বাতাস ভারী হয়ে যেত মাঝে মঝেই। আমি সেই ভারী বাতাসের স্পর্শ হৃদয়ে অনুভব করতাম।আর সেই মৃত্যুপুরী থেকে বেঁচে ফেরার জন্য মনে মনে প্রার্থনা করতাম স্রষ্টার কাছে। 


যাই হোক, ৪/৫ দিন একটানা হাসপাতালে থেকে কিছুটা শক্তি ফিরে পেয়ে সৌরওয়ার্দী হাসপাতাল ত্যাগ করলাম। জীবনে কোনদিন হাসপাতালে না থাকা আমি দিব্যি পাঁচ দিন হাসপাতালের বেডে কাটালাম। কিন্তু বাবা মায়ের অবর্ণনীয় কষ্ট হচ্ছিলো হাসপাতালে থেকে। তাই কিছুটা সুস্থ অনুভূত হতেই হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিলাম। একরকম জোর করেই। তারপর আবার নিজ গ্রামের বাড়ি এসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হলাম। এখানে থাকলাম আরো তিন চার দিন।

এই পনেরো দিনের অসুস্থতায় আমার ওজন ৭৮ কেজি থেকে ৬৬ কেজিতে নামলো। সারা মুখে,শরীরে র‍্যাশ বের হয়ে কালো কালো দাগ হয়ে গেলো। তবে সব শেষে আমি জীবিতদের দলে আরো কিছুদিন পৃথিবীর রূপ উপভোগ করার সুযোগ পেলাম।


যাই হোক,
আমি সেসময় যেসব লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম তা এখনকার সময়ে হলে ১০০% করোনা পজেটিভ হত কিংবা করোনা টেস্ট করালেও সম্ভবত ধরা পড়ত। তবে সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত, আমার রোগ যাই হোক, আমাকে তিনি সুস্থ করে ফিরিয়েছেন। 

Writer information NILKANTO