বলার মত কিছু নেই যে কথাটা বলা যায়!!
সারা রাত হা ডু ডু খেলে সকালে ঘুম ভাঙতে ভাঙতে যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে তা বুঝতে পারলাম কিছুক্ষন আগে। ঘুম ভাঙবেই বা কিভাবে! আজ ঘুমের দেবতার সাথে সাথে স্বপ্ন দেবীও যে বেশ প্রসন্ন ছিলো।দেবীর স্বদিচ্ছায় বন-বাদার, মাঠ-ঘাট,সমুদ্র-আকাশ কোনটাই বাদ যায়নি আজ। এই এখন সমুদ্রের মাঝে ছোট্ট ডিঙিতে মরনপণ বাচার লড়াই তো,কিছুক্ষন পর দেখি আকাশে ডানাবিহীন উড়ন্ত মানখি(মানুষ +পাখি)।নিজেকে সুপারম্যান কিংবা কৃষ টাইপের কিছু একটা মনে হচ্ছিল তখন।
দেবী সবকিছুই ঠিকঠাকই মেইনটেইন করছিলেন কিন্তু হঠাৎ বোধহয় ঘুম দেবতার সাথে রোমাঞ্চ করতে করতে তিনি আমার ব্যাপারে খানিকটা উদাসীন হয়ে গেছিলেন। নয়ত,দুই জনের রোমাঞ্চকালীন সময়ে লোকাল ট্রেনের স্পিডটা মেইল ট্রেনের স্পিডে উঠায় যাত্রীর ছিট থেকে ছিটকে পড়েছিলাম আমি।
বলি,ও দেবতা, লোকাল চালাও আর মেইল চালাও যাত্রী কেন পড়ে?? :p
যাই হোক ছিটকে পড়লাম তো পড়লাম তাও আবার মালীর ঘাড়ে।
আরে বাবা, এত জায়গা রেখে ওই খানেই ফেলতে হলো!
চেহারাটা এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না।তবে বেশ পুরোনো চেহারা।আই মিন, অনেক পুর্ব পরিচিত।হয়ত এক সময় তার জন্য আমিই পাগল ছিলাম! কিন্তু,
মনের ঘরের জানালা দরজায় বোধহয় একটু বেশিই মরিচা ধরে গেছে।না হলে এত চেষ্টা করেও কিছুতেই ওর নাম মনে করতে পারছি না কেন!
বোধহয় শশী বা কুশি এই জাতীয় কোন একটা নাম ছিল ওর। হাল্কা গড়ন,দুধে আলতা গায়ের রং,মাথার মেঘকালো চুলগুলো ছেড়ে দিলে কোমড় ছুই ছুই করে আর ভাসা ভাসা চোখ যেন সবসময় স্বপ্ন দেখে। আমি বোধকরি একবার ওকে খোলা চুলে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখেছিলাম।
সেদিন ওর পড়নের আকাশি স্যালোয়ার কামিজ ভিজে শরীরের সাথে আটকে গেছে।সামনের চুলগুলো থেকে ফোটা ফোটা বৃষ্টি কণা কপাল চুইয়ে গাল বেয়ে ঠোটের কার্নিশে এসে মিশেছে আর ও আলতো ভাবে ওড়নার আচল দিয়ে গড়িয়ে পরা মুক্ত কনা মুছার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে।।
এভাবেই ওকে প্রথম দেখেছিলাম বোধহয়। কিন্তু কি আশ্চার্য আজ ওর নামটাই মনে নেই!!
স্বপ্নের মধ্যেও স্বপ্নদেবীর এই অহেতুক রসিকতায় কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে গেলাম। স্বপ্ন দেখছি, আমি সুপারম্যানের মত উড়ে চলেছি।হঠাৎ আমার সুপার ন্যাচারাল ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলো।আমি হাজার হাজার ফুট উপর থেকে নিচে পড়ে যাচ্ছি। ঈশ্বর আল্লাহ, পীর-আউলিয়া সবার নাম ধরে ডাকা ডাকি করছি কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত মরে যাবার আগে চোখটা বন্ধ করে প্রিয় মানুষগুলোর মুখ মনে করার চেষ্টা করছি।
নাহ!কারো কথাই মনে আসছে না।বরং মনে হচ্ছে, এই বুঝি আমার জীবনের সাঙ্গ হবে এখানেই।।
কিন্তু কি আশ্চার্য, আমি এত উঁচু থেকে পড়লাম কিন্তু মরলাম না। অবশ্য স্বপ্ন ছিলো বলেই এই অসম্ভবও সম্ভব হয়েছে।।এই যা! এখন তো নিজেকে অনন্ত জলিল টাইপের কিছু একটা মনে হচ্ছে!!
:p
যাই হোক, মাটিতে পরে যখন আমার চোখ খুললাম,তখন দেখি;পাশে সেই মেয়েটি। কি যত্ন করে আমার সেবা করছে! আহা!
সামান্য কাটা ছেড়ায় বাংলা সিনেমার মলম লাগানো থেকে শুরু করে ব্যান্ডেজ, মন্ডেজ(মনের ব্যান্ডেজ) ইত্যাদি ইত্যাদি। আর আমি কিনা তার নামটাই মনে করতে পারছিনা এখন।এমন কি স্বপ্নেও বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছি নাম মনে করতে,পারিনি। তবে সেই স্বপ্নের মধ্যে আমার কাটিয়ে দেয়া রোমাঞ্চকর, রোমান্টিক বছরটাও কাটিয়ে দিয়েছি বিনা নাম জেনে। কিভাবে যে বছর কেটে গিয়েছিল তা ভাবতেই অবাক লাগছে।আচ্ছা , বাস্তবেও কি এমন হতে পারে? কি জানি!!!
হঠাৎ করে স্বপ্নের জগতে পার্থিব হস্তক্ষেপ আমার সাধের স্বপ্নটার বারোটা বাজিয়ে দিলো। স্বপ্নের মধ্যে পার্থিব কে যেন জোরে জোরে ডাকছিল।ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি বারান্দার গেটে পত্রিকাওয়ালা।
"ভাই, আছেন? এ মাসের বিলটা দেন।"
মনে মনে ভাবলাম, আরে ব্যাটা, আগে আমার স্বপ্ন ভাঙার ক্ষতিপূরণটা দিয়ে যা।তারপর বিল দেব!!
ইস! কি সুন্দর স্বপ্নই না দেখছিলাম!! এর মধ্যেও ডিস্ট্রার্ব??
পত্রিকাওয়ালা কে বিল দিয়ে বিদায় করে কিছুক্ষন শুয়ে শুয়ে
স্মৃতির ধুলো জমা ময়লা পাতা গুলো আরেকবার ঝেরে পরিস্কার করার চেষ্টা করলাম কিন্তু লাভ হলো না। আমার স্বপ্নে দেখা সেই মেয়েটার নামও আর জানা হলো না।।