:::: MENU ::::
  • slider image 1

    Take my hand, take my whole life too.

  • slider image 2

    I never want to live without you

  • slider image 3

    I am who I am because of you.

সোমবার, ২০ জুন, ২০১৬

  • ৩:৪০:০০ PM
বাবা,
প্রথম যখন বুঝতে শিখলাম সম্পর্ক কি,তখন চার পাশে হাতড়ে তোমায় পাইনি।পরিবারে দাদা-দাদী,চাচা,ফুফুরা, মা সবাই ছিল শুধু তুমি ছিলে না।পরে জানলাম তুমি দেশের বাহিরে। চাকুরীর প্রয়োজনে হাজার হাজার মাইল দূরের অরন্য ঘেরা আফ্রিকায়। অবশ্য তখন ভূগোলের কোন ধারনা ছিল না আমার।না ছিল মাইল বা কিলোমিটারের ধারনা।শুধু জানতাম আফ্রিকা অনেক অনেক দূরে।  মাকে বলতাম,"মা,আফ্রিকা কত দূর?"
মা বলত, "অনেক অনেক দূরে। সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যেতে হয়।"
সমুদ্র বলতে এটা জানতাম যে এটা অনেক বড়।সমুদ্রের নাকি কোন শেষ নেই।তাই মনে মনে ভাবতাম,সমুদ্র পাড়ি দেবে কি করে? নিশ্চয়ই জাহাজে করে।জাহাজও নাকি অনেক বড়।সমুদ্রে চলে।
তাহলে তো জাহাজেই পাড়ি দেবে, তাই না মা?
মার কাছে অবাক হয়ে জানতে চাইতাম।
মা বলত, "না রে ব্যাটা, তোমার বাবা প্লেনে গেছে।"
প্লেন অবশ্য চিনতাম তখন।ওই যে মেঘের উপর দিয়ে শব্দ করে করে উড়ে যায় যে, সেটা। কিন্তু ছোট্ট প্লেনটা মাটিতে কি করে নামে জানা ছিল না। মাকে একদিন বললাম," মা,প্লেন কত বড়? মাটিতে নামে কি করে?"
আমার মা অর্ধশুক্ষিত হলেও ভূগোল আর আধুনিক দুনিয়ার অনেক কিছুই জানতেন। কিংবা তোমার চিঠি পড়ে পড়ে বর্ণনা করতেন প্লেন,প্লেনের ল্যান্ডিং কিভাবে হয়। মায়ের ভাষায় তখন প্লেন ছিল,"বড় বড় বাসের মত"।
কিংবা কখনো সখনো আমাদের চৌচালা ঘর দেখিয়ে বলতেন,"এই এত বড় তো বটেই।"
আমি প্লেন কে বাস কিংবা ঘরের মতই মনে করতাম।শুধু জানতাম,প্লেন বাসের মত সরক দিয়ে যায় না।যায় আকাশ দিয়ে উড়ে।
জানো বাবা,তারপর থেকে যখনি মাথার উপর দিয়ে প্লেন উড়ে যেত,কিংবা প্লেনের শব্দ পেতাম তখন দৌড়ে বাহিরে দাঁড়িয়ে হাত উচু করে ডাকতাম।
আর বলতাম,"ও প্লেনওয়ালা,আমার আব্বাকে নামায়া দিয়া যাও।"
কিন্তু প্লেনওয়ালারা আমার কথা শুনত না।আস্তে আস্তে মেঘের আড়ালে হারিয়ে যেত।আমি অপেক্ষায় থাকতাম,কবে আমার বাবা ফিরে আসবে!
এরপর যখন তুমি দেশে ফিরলে তখন আমি মহা খুশি। বিদেশ থেকে আনা টেন ব্যান্ডের রেডিও আর ইয়াশিকা ক্যামেরার ফ্লাশের সামনে সামনে থাকা যেন আমার নেশা হয়ে গেল।যেই ছবি উঠতে যাবে সেখানে রেডিও হাতে আমি আছিই। হা হা হা।
বাবা,মনে আছে এসব কথা?
যাই হোক,
তারপর ধীরে ধীরে বড় হলাম।স্কুলে গেলাম।লেখাপড়া শিখতে লাগলাম। তোমার সাথে ঘুরতে লাগলাম এক কর্মস্থল হতে অন্যথায়। এভাবেই বেশ যাচ্ছিল।এরপর একটা সময় এলো।তোমার দুষ্ট ছেলেটা তখন বেয়ারা প্রায়। আষ্টম শ্রেনী পাশ করলাম। সাথে সাথে যিদ আর রাগ যেন বেড়ে গেল।
বয়সের চেয়ে যেন সবকিছু বেশিই বুঝতে শিখলাম। তোমার কিংবা মায়ের অবাধ্য হতেও বাধল না। তোমার মনে একটার পর একটা কষ্ট দেয়া যেন নিয়মিত হয়ে গেল।শাসন করলে কিন্তু তা যেন আগুনে ঘি ছিটানোর মত ছিল তখন। তখন মনে হত,আমিই ঠিক বাকি সব ভুল।আর তাই একের পর এক কষ্ট দিতে এতটুকু দ্বিধা করিনি তোমাকে। তারপরেও তুমি সব ভুলে আমাকে বুকে টেনে নিয়েছ রক্তের কারনে।
বাবা,আজ আমি আমার পুরোনো ভুলের জন্য লজ্জিত। আজ বুঝি আমি কতটা ভুল ছিলাম। এখন বুঝি, তোমাকে কতটা কষ্ট দিয়েছি।
তখন যে ভুল করেছিলাম তা তো আর সুধরাতে পারব না কিন্তু নতুন করে যেন ভুল না করি আজ সেদিকে খেয়াল রাখতে শিখেছি।
বাবা,
সব কিছুর পরে একটা কথা তোমাকে বলতে খুব ইচ্ছে করে।যদিও সামনাসামনি কখনো বলতে পারিনি।পারবও না। আবার এখানে লিখলে তুমি দেখবেও না,তাই বলতে পারছি-
"বাবা,আই লাভ ইউ।"
Writer information NILKANTO