:::: MENU ::::
  • slider image 1

    Take my hand, take my whole life too.

  • slider image 2

    I never want to live without you

  • slider image 3

    I am who I am because of you.

শনিবার, ৩০ মে, ২০১৫

  • ১:১১:০০ PM
গল্পঃ অদৃশ্য নুপুরের শব্দ

গল্পটা বললে হয়ত কেউ বিশ্বাস করবেন না।কিন্তু এটা বাস্তবে আমার সাথে হয়েছিলো।  শুধু এই একটাই না আরো অনেক অতিপ্রাকৃত ঘটনার জলজ্যান্ত স্বাক্ষী আমি নিজেই। এখন যে গল্পটা বলছি তা ২০০৭ সালের ঘটনা।
তখন আমি চাটমোহর ডিগ্রী কলেজে পড়ি।আমার বাসা কলেজ থেকে খুব বেশি দূরে না হলেও পড়ালেখা ও আত্ম স্বাধীনতার জন্য মেসে থাকতাম।
আমাদের মেসটা ছিল চাটমোহর এর নাড়িকেল পাড়ার প্রায় উত্তর পশ্চিম সীমান্তে। আর আমার মেস থেকে কয়েক কদম হাটলেই চৌধুরী পাড়ার শুরু হয়।
যাই হোক, আমাদের মেসের নাম ছিলো "বকুল ছাত্রাবাস"। মেসের সামনে দিয়ে রাস্তা গেছে। আর রাস্তার ওপাশে ছিল "গুলজার ছাত্রাবাস"। মেসের উত্তর পাশে তখন হাজী সাহেবের ফাঁকা ভিটা।একটা বনের বেড়া আর টিনের চালার ঘর।সেখানে তেমন কেউ থাকত না।মাঝে মাঝে বাড়িওয়ালার ছেলে জামিন ভাই থাকতেন সেখানে। দক্ষিন দিকে একটা পায়ে হাটা রাস্তা চলে গেছে সোজা বিলের মধ্য দিয়ে "শিঙেল" নামক গ্রামে।ওই  রাস্তার সাথেই ছিল সরোয়ার ভাইদের কলার বাগান, আর বাগানের পেছনে একটা বড় পুকুর।শুনেছি,ওই পুকুরের পানি কোনদিন নাকি শুকাতো না।আর আমরা যে তিন-চার বছর ওই মেসে ছিলাম, সে চার বছরে কখনো পানি শুকাতেও দেখিনি।
যাই হোক, মূল প্রসঙ্গে আসি।
আমাদের মেসে আমরা একই ক্লাসের প্রায় বারো জন ছিলাম।সবাই একই ফিগারের আর একই রকম। সারাদিন  চুটিয়ে আড্ডা আর রাতে যে যত পড়তে পারে।
আমারো দিনের চেয়ে রাত জেগে পড়ার প্রতি বেশি ঝোক ছিলো। দেখা যেত কোন কোন দিন পড়তে পড়তে রাত তিনটে চারটে বেজে যেত।আর আমি যতক্ষন জেগে থাকতাম,ততক্ষন আর কেউ জেগে থাকত না।
আর এই রাত জাগার কারনেই আমি সেই অদৃশ্য নুপুরের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলাম।
সেদিন  ছিল ডিসেম্বরের কনকনে শীতের রাত। আমি দরজা জানালা লাগিয়ে ঘরে বসে পড়ছি। আমার ঘরটা ছিলো দক্ষিন পাশের রাস্তাটার সাথেই।যে রাস্তাটা বিলের মধ্য দিয়ে দূরের একটা গ্রামে চলে গেছে।আমার ঘরের একটা জানালাও ছিল সেদিকে।কিন্তু শীতের রাত তাই সব দরজা জানালা লাগিয়ে কম্বল গায়ে দিয়ে পড়ছিলাম সেদিন। শীতের দিনে রাত যেন খুব তাড়াতাড়িই গভীর হয়ে যায়।আমার বন্ধুরা অনেকেই দশটা না বাজতেই লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েছে। কিন্তু প্রতিদিনের অভ্যেস বশত আমার ঘুমাতে অনেক দেরি হয়। আমি বই পড়ছি।পড়তে পড়তে কেবলই তন্দ্রা মত এসেছি,ওমনি জানালায় মৃদু দুইটা টোকা পড়লো।
ছ্যাৎ করে চমকে উঠলাম।টেবিল ঘরিটার দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ১২:৩৩ বাজে। ভাবলাম,এত রাতে কে টোকা দিল! তারপর মনে হলো, হয়ত গ্রামের কোন লোক রাস্তা দিয়ে যেতেই হাতের টোকা লেগেছে।তাই তেমন গুরুত্ব দিলাম না।
আর রাত যেহেতু অনেক হয়েছে তাই দেরি না করে ঘুমাবো বলে লাইট অফ করে দিলাম। কিছুক্ষনের মধ্যে চোখ ভার করে ঘুম চলে এসেছে প্রায়, এমন সময় আবার দু'টো টোকা।
এবারের টোকা গুলো আগের গুলোর চেয়ে জোড়ে হলো। ধরফর করে বিছানার উপর বসে পড়লাম।জোড়ে করে বললাম, "কে? "
কোন সাড়া পেলাম না।
হাতের কাছের বেড সুইচ টা দিয়ে আলো জ্বালালাম।আলো জ্বালানোর সাথে সাথে জানালার পাশ থেকে কে যেন বিলের দিকে প্রথমে আস্তে পরে জোড়ে হেটে চলে গেলো।পায়ের শব্দ পেলাম না কিন্তু সুর তোলা নুপুরের আওয়াজ বলে দিল সব। আমি ভয়ে ভয়ে জানালা খুললাম। কিন্তু কই? কেউ নেই তো। ঘরের টিউবলাইটের সাদা আলো জানালার ফাঁক গলে রাস্তার উপর পড়েছে। সেখানে শীতের কুয়াশা ছাড়া আর কিছু নেই।
কি আর করা,জানালা বন্ধ করে আবার শুয়ে পড়লাম।আর মনে মনে নিজের বোকামির কথা ভেবে নিজেই লজ্জা পেলাম। সকালে উঠে কাউকেই কিছু বললাম না। শেষে সবাই এ নিয়ে হাসাহাসি করে! মনকে বুঝালাম,
দূর, ভূত টুত কিছু না! সব মনের ভ্রম।
কিন্তু আমার সেই ভ্রম ভাঙলো ২য় দিন।
সেদিনও আমি পড়ালেখা শেষ করে সাড়ে বারোটা নাগাদ বিছানায় শুলাম।মেসের অন্যরা অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু আমার চোখে তখনো ঘুম আসেনি।আমি পুরোপুরি সজাগ।এমনকি ফোনে আমার ঢাকার এক বান্ধবির সাথে চ্যাট করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ আবারো জানালায় জোড়ে জোড়ে দু'টো টোকা পড়লো।
আকষ্মিক এ শব্দে আমার বুক ধরফর ধরফর করে উঠলো।  আমি স্পষ্ট জানালায় টোকা দেয়ার শব্দ শুনতে পেলাম। বুকে একটু সাহস সঞ্চয় করে জিজ্ঞাসা করলাম, "
কে? কে ওখানে? "
কেউ কোন কথা বলল না, শুধু একটা মেয়েলি হাসি শুনতে পেলাম।তারপর কেউ নুপুর পায়ে দৌড়ে গেলে যেমন শব্দ হয়,তেমন একটা শব্দ।
আমার গা ছম ছম করে উঠলো।
আমি পাশের ঘরে গিয়ে আমার বন্ধু মিরাজকে ডেকে তুললাম। ওকে সব ঘটনা খুলে বলতেই বলল,"চল যাই,দেখি কে? "
দুজনে দরজা খুলে বাহিরে এলাম।নাহ! কেউ নেই। আরেকটু এগিয়ে পুকুর পারে চলে এলাম, নাহ! কোথাও কেউ নেই।
মিরাজ বলল, "নানাতো ভাই, এসব তোমার মনের ভুল।ওসব কিছুই না।"
যাই হোক, দু'জনে ঘরে ফিরে এলাম।সেদিন রাতে আর কোন আওয়াজও পেলাম না।
তারপর আরো দু'দিন গেল, কোন শব্দ টব্দ নেই। আর আমি ভাবলাম, আসলেই মনে হয় সব আমার মনের ভুল।
কিন্তু ৪র্থ দিনের দিন ঘটলো সবচেয়ে আশ্চার্য জনক ঘটনা।
সেদিন অবশ্য আমি আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ মাঝরাতে ঘুম কিছুটা পাতলা হয়ে এলো।
চোখ খুলতেই সারা ঘরে অন্যরকম এক আলো দেখতে পেলাম।তারপর মুহুর্তে ভ্যানিশ হয়ে গেল সব।
আর জানালার পাশে কেউ যেন নুপুর পায়ে হাসতে হাসতে বিলের দিকে চলে গেল।
আমি বুকে সাহস সঞ্চয় করে ধীরে ধীরে বাহিরের দরজা খুললাম। তারপর বারান্দা থেকে নিচে নেমে বিলের দিকে চলে যাওয়া রাস্তায় ফুচকি দিলাম।
একি! 
একটা মেয়ে সাদা স্যালোয়ার কামিজ পরে পুকুরের পারে দাড়িয়ে আছে। যেন,এখনি পুকুরের মধ্যে লাফিয়ে পড়বে।
আমি মেয়েটাকে দেখে ভাবলাম, হয়ত এলাকার কোন মেয়ে অভিমান করে আত্মহত্যা করতে এসেছে।তাই জোরে ডাক দিলাম,
"এই, কে রে ওখানে? "
আমি ডাক দিতে না দিতেই মেয়ে টা পুকুরে লাফিয়ে পড়লো!
একবার সেদিকে দৌড় দিয়েছি প্রায়! তারপর কি যেন মনে করে, মেসে এসে মিরাজকে ডাকলাম।মিরাজ কে সব বলতেই ও বলল, "ভালো করেছো যে,ওখানে যাও নাই। গেলে আর আজ তোমাকে বাঁচানো যেত না।"
তারপর মিরাজ বলল, অনেক বছর আগে নাকি একটা মেয়ে ওই পুকুরে ডুবে আত্মহত্যা করেছিলো। আর তারপর থেকে তার এই আত্মাকে অনেকেই দেখতে পায়।
সব শুনে আমার আত্মারাম খাঁচা ছাড়া।আর সাতদিন প্রচন্ড জ্বর!
Nilkanto( নীলকান্ত)
Writer information NILKANTO