:::: MENU ::::
  • slider image 1

    Take my hand, take my whole life too.

  • slider image 2

    I never want to live without you

  • slider image 3

    I am who I am because of you.

শনিবার, ৩০ মে, ২০১৫

  • ১:১২:০০ PM
আলোচনা ও সমালোচনাঃ

বাংলা ভাষায় এ দু'টি শব্দ বেশ জনপ্রিয় । এবং প্রায় কথায় কথায় এই শব্দ দু'টি আমরা ব্যবহার করে থাকি।
কিন্তু শব্দ দু'টির ব্যবহারের আগে এর অর্থ এবং সংগাটা জেনে নেয়া দরকার। তাছাড়া শব্দ দু'টি কিভাবে প্রভাব বিস্তার করে তাও জেনে নেই, কি বলেন?
(বি দ্র. বিভিন্ন জনের সঙ্গার মধ্যে কিছুটা  তারতম্য থাকতে পারে।)
#১
আলোচনাঃ
"আলোচনার" ইংরেজি প্রতিশব্দ "Discussion"। ইংরেজিতে Discussion বলতে বুঝায়, "Conversation or debate concerning a particular topic" অথবা বলা যায়, "A text giving further details on a subject."
বাংলায় এর অর্থ করলে দাড়ায়, " কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর বিশদ কথোপকথন অথবা বিতর্ক"।
অর্থ্যাৎ "আলোচনা" শব্দটির সঙ্গা দিলে এভাবে দেয়া যেতে পারে," কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর  ইতিবাচক কথোপকথন যা ঐ বিষয়ের বিশদ তথ্য উপস্থাপন করে এবং বিষয়ের পক্ষে ও বিপক্ষে মত প্রকাশ করে।"
উৎসঃ বাঙালি ও বাংলা, Article
আচ্ছা, আলোচনা শব্দটি সম্পর্কে একটা ধারনা হলো , এবার আসি "সমালোচনা" কি তা নিয়ে।
(আলোচনা'র প্রভাব সম্পর্কে পরবর্তীতে আলোচনা করবো।)
সমালোচনাঃ এর ইংরেজি প্রতিশব্দ "Criticism" যার অর্থ দাড়ায়,"A critical judgment passed or expressed on a topic." অথবা বলা যায়, "A critical observation or detailed examination and review on a subject."
বাংলায় যাকে বলা হয়, চুলচেরা বিশ্লেষণ(বিশেষ করে বিষয়ের নেতিবাচক দিক এবং এর প্রভাবের সাথে সাথে উত্তরণের উপায়  নিয়ে যে  বিশ্লেষনী মন্তব্য করা হয়।)
ইংরেজি সংগা ছেড়ে  বাংলায় বাংলায় সঙ্গায়িত করা যায় এভাবে,
" কোন বিষয়ের উপর চুলচেরা বিশ্লেষণ, বিশেষ করে বিষয়ের ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিকের(নেতিবাচক বিষয় অত্যাধিক গুরুত্ব পায়) উপর গভীর পর্যবেক্ষণমূলক  আলোচনা, যা বিষয়টির পর্যবেক্ষণকৃত অংশ নিয়ে বিশদ আলোচনাসহ মন্তব্য প্রকাশ করে।"
এই হলো আলোচনা ও সমালোচনা। এবার এই দুটি শব্দের প্রভাব এবং কোনটি বিষয়কে বেশি প্রভাবান্বিত করে তা নিয়ে ছোট্ট কয়েকটা কথা বলি। মূলত এই কথাগুলো বলার জন্যই উপরের ওইসব অযাচিত আলোচনা করা হলো।
বিগত কয়েকদিন যাবৎ চেতনায় চাটমোহরে আমরা অনেকেই বিভিন্ন গণ মাধ্যমের বিশেষ করে স্থানীয় গনমাধ্যম নিয়ে বেশ কয়েকটা পোষ্ট দেখেছি। সেখানে গনমাধ্যমকে আমরা কিভাবে দেখতে চাই, আর কেন সেভাবে দেখতে পাবো না,  তাই নিয়ে বিশদ আলোচনা এবং সেই সব সংবাদ মাধ্যমের গঠনমূলক সমালোচনা করা হয়েছে। তাদের ভুল গুলো যা দৃষ্টি কটু লাগে তা নিয়েও কথা হয়েছে।
আর এতে ওই সব সংবাদ মাধ্যমের কর্মীগন চড়াও হয়েছেন আলোচনাকারী ও সমালোচনাকারীদের উপর। অনেক কে আবার ডাইরেক্টলি অথবা ইনডাইরেক্টলি এসব সমালোচনায় যেতে,মন্তব্য করতে নিষেধ করা হয়েছে।কিংবা চাপ দেয়া হচ্ছে।
এবার প্রশ্ন হলো,  এই সমালোচনাতে সেই সব সংবাদ মাধ্যমের লাভ হয় না ক্ষতি হয়?
তার আগে বলে নেই। আমরা চাটমোহরবাসী কখনোই চাইনা যে,আমাদের মিডিয়াগুলো অন্যদের কাছে হাসির পাত্র হোক। অনলাইনে শুধুমাত্র আমাদের  চাটমোহরের মানুষ খবরটি দেখবেন, আর অন্য কেউ দেখবেন না,তা তো নয়!
তাহলে?
যদি একটা সংবাদে হাজারো ভুল থাকে তবে কি তা মানুষ গ্রহন করবে? করবে না।বরং ছি ছি করবে সেটাই স্বাভাবিক।
আর সেই ভুলগুলো নিয়ে আলোচনা , সমালোচনা না করলে এসব ভুল গুলো কি সংশোধন হবে?হবে না।হয় না।
সমালোচনা না হলে ওই ভুলটা আমরা এড়িয়ে যাই।তখন দায়ী ব্যক্তি দায়সারা কাজ করবেন। আর সেই সমালোচনা যদি নিজেরাই করি,নিজেদের ভুল গুলো নিয়ে তবে  কি সংবাদমাধ্যম গুলো উল্টো আমাদের উপর প্রতিশোধ নেয়ার পথ খুঁজবেন?
তবে সেই পথ খুঁজার আগে অন্তত মনে রাখবেন, কোন ভুল/খারাপ কাজ নিয়ে আলোচনার চেয়ে সমালোচনা বেশি হয়।
আর বড় কথা হলো,
জবাবদিহিতা না থাকলে তার আউটপুট কখনো ভালো হয় না।।
এবার আসি আলোচনা ও সমালোচনার প্রভাব নিয়ে।
মনে রাখা দরকার যে কোন বিষয়ের উপর আলোচনা বা সমালোচনা সেই বিষয়ের ক্ষতির চেয়ে লাভ করিয়ে দেয় বেশি।
উদাহরন সরূপঃ
নতুন একটা সিনেমা রিলিজ হলো, যেমন ধরুন PK. এবার সমালোচক গণ pk কে ধুয়ে মুছে  শেষ করে দিলেন আমীর খানের রেডিও হাতে জন্মদিনের পোশাক পড়ার দৃশ্য নিয়ে।ফলাফল সরূপ pk এর তেমন কিছুই হয়নি,সামান্য সংশোধন কিন্তু এই সমালোচনা পাবলিক ইন্টারেস্ট বহুগুণ বৃদ্ধি করলো। ফলাফল সরূপ সিনেমা হল হাউজফুল।Pk ব্যবসা সফল ছবি।।
আমি জানি,জ্ঞানীর জন্য ঈশারাই যথেষ্ট। এখন দেখবার বিষয়,আমাদের স্থানীয় গনমাধ্যম গুলো আমাদের আলোচনা, সমালোচনা কে কিভাবে নেন!!
[[আমার বিশ্বাস গত কয়েক দিনে আমাদের স্থানীয় পত্রিকার টি আর পি অনেক বেড়ে গেছে।
And obviously its only for those criticism last few days we have in Chetonay Chatmohar.]]
  • ১:১১:০০ PM
গল্পঃ অদৃশ্য নুপুরের শব্দ

গল্পটা বললে হয়ত কেউ বিশ্বাস করবেন না।কিন্তু এটা বাস্তবে আমার সাথে হয়েছিলো।  শুধু এই একটাই না আরো অনেক অতিপ্রাকৃত ঘটনার জলজ্যান্ত স্বাক্ষী আমি নিজেই। এখন যে গল্পটা বলছি তা ২০০৭ সালের ঘটনা।
তখন আমি চাটমোহর ডিগ্রী কলেজে পড়ি।আমার বাসা কলেজ থেকে খুব বেশি দূরে না হলেও পড়ালেখা ও আত্ম স্বাধীনতার জন্য মেসে থাকতাম।
আমাদের মেসটা ছিল চাটমোহর এর নাড়িকেল পাড়ার প্রায় উত্তর পশ্চিম সীমান্তে। আর আমার মেস থেকে কয়েক কদম হাটলেই চৌধুরী পাড়ার শুরু হয়।
যাই হোক, আমাদের মেসের নাম ছিলো "বকুল ছাত্রাবাস"। মেসের সামনে দিয়ে রাস্তা গেছে। আর রাস্তার ওপাশে ছিল "গুলজার ছাত্রাবাস"। মেসের উত্তর পাশে তখন হাজী সাহেবের ফাঁকা ভিটা।একটা বনের বেড়া আর টিনের চালার ঘর।সেখানে তেমন কেউ থাকত না।মাঝে মাঝে বাড়িওয়ালার ছেলে জামিন ভাই থাকতেন সেখানে। দক্ষিন দিকে একটা পায়ে হাটা রাস্তা চলে গেছে সোজা বিলের মধ্য দিয়ে "শিঙেল" নামক গ্রামে।ওই  রাস্তার সাথেই ছিল সরোয়ার ভাইদের কলার বাগান, আর বাগানের পেছনে একটা বড় পুকুর।শুনেছি,ওই পুকুরের পানি কোনদিন নাকি শুকাতো না।আর আমরা যে তিন-চার বছর ওই মেসে ছিলাম, সে চার বছরে কখনো পানি শুকাতেও দেখিনি।
যাই হোক, মূল প্রসঙ্গে আসি।
আমাদের মেসে আমরা একই ক্লাসের প্রায় বারো জন ছিলাম।সবাই একই ফিগারের আর একই রকম। সারাদিন  চুটিয়ে আড্ডা আর রাতে যে যত পড়তে পারে।
আমারো দিনের চেয়ে রাত জেগে পড়ার প্রতি বেশি ঝোক ছিলো। দেখা যেত কোন কোন দিন পড়তে পড়তে রাত তিনটে চারটে বেজে যেত।আর আমি যতক্ষন জেগে থাকতাম,ততক্ষন আর কেউ জেগে থাকত না।
আর এই রাত জাগার কারনেই আমি সেই অদৃশ্য নুপুরের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলাম।
সেদিন  ছিল ডিসেম্বরের কনকনে শীতের রাত। আমি দরজা জানালা লাগিয়ে ঘরে বসে পড়ছি। আমার ঘরটা ছিলো দক্ষিন পাশের রাস্তাটার সাথেই।যে রাস্তাটা বিলের মধ্য দিয়ে দূরের একটা গ্রামে চলে গেছে।আমার ঘরের একটা জানালাও ছিল সেদিকে।কিন্তু শীতের রাত তাই সব দরজা জানালা লাগিয়ে কম্বল গায়ে দিয়ে পড়ছিলাম সেদিন। শীতের দিনে রাত যেন খুব তাড়াতাড়িই গভীর হয়ে যায়।আমার বন্ধুরা অনেকেই দশটা না বাজতেই লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েছে। কিন্তু প্রতিদিনের অভ্যেস বশত আমার ঘুমাতে অনেক দেরি হয়। আমি বই পড়ছি।পড়তে পড়তে কেবলই তন্দ্রা মত এসেছি,ওমনি জানালায় মৃদু দুইটা টোকা পড়লো।
ছ্যাৎ করে চমকে উঠলাম।টেবিল ঘরিটার দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ১২:৩৩ বাজে। ভাবলাম,এত রাতে কে টোকা দিল! তারপর মনে হলো, হয়ত গ্রামের কোন লোক রাস্তা দিয়ে যেতেই হাতের টোকা লেগেছে।তাই তেমন গুরুত্ব দিলাম না।
আর রাত যেহেতু অনেক হয়েছে তাই দেরি না করে ঘুমাবো বলে লাইট অফ করে দিলাম। কিছুক্ষনের মধ্যে চোখ ভার করে ঘুম চলে এসেছে প্রায়, এমন সময় আবার দু'টো টোকা।
এবারের টোকা গুলো আগের গুলোর চেয়ে জোড়ে হলো। ধরফর করে বিছানার উপর বসে পড়লাম।জোড়ে করে বললাম, "কে? "
কোন সাড়া পেলাম না।
হাতের কাছের বেড সুইচ টা দিয়ে আলো জ্বালালাম।আলো জ্বালানোর সাথে সাথে জানালার পাশ থেকে কে যেন বিলের দিকে প্রথমে আস্তে পরে জোড়ে হেটে চলে গেলো।পায়ের শব্দ পেলাম না কিন্তু সুর তোলা নুপুরের আওয়াজ বলে দিল সব। আমি ভয়ে ভয়ে জানালা খুললাম। কিন্তু কই? কেউ নেই তো। ঘরের টিউবলাইটের সাদা আলো জানালার ফাঁক গলে রাস্তার উপর পড়েছে। সেখানে শীতের কুয়াশা ছাড়া আর কিছু নেই।
কি আর করা,জানালা বন্ধ করে আবার শুয়ে পড়লাম।আর মনে মনে নিজের বোকামির কথা ভেবে নিজেই লজ্জা পেলাম। সকালে উঠে কাউকেই কিছু বললাম না। শেষে সবাই এ নিয়ে হাসাহাসি করে! মনকে বুঝালাম,
দূর, ভূত টুত কিছু না! সব মনের ভ্রম।
কিন্তু আমার সেই ভ্রম ভাঙলো ২য় দিন।
সেদিনও আমি পড়ালেখা শেষ করে সাড়ে বারোটা নাগাদ বিছানায় শুলাম।মেসের অন্যরা অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু আমার চোখে তখনো ঘুম আসেনি।আমি পুরোপুরি সজাগ।এমনকি ফোনে আমার ঢাকার এক বান্ধবির সাথে চ্যাট করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ আবারো জানালায় জোড়ে জোড়ে দু'টো টোকা পড়লো।
আকষ্মিক এ শব্দে আমার বুক ধরফর ধরফর করে উঠলো।  আমি স্পষ্ট জানালায় টোকা দেয়ার শব্দ শুনতে পেলাম। বুকে একটু সাহস সঞ্চয় করে জিজ্ঞাসা করলাম, "
কে? কে ওখানে? "
কেউ কোন কথা বলল না, শুধু একটা মেয়েলি হাসি শুনতে পেলাম।তারপর কেউ নুপুর পায়ে দৌড়ে গেলে যেমন শব্দ হয়,তেমন একটা শব্দ।
আমার গা ছম ছম করে উঠলো।
আমি পাশের ঘরে গিয়ে আমার বন্ধু মিরাজকে ডেকে তুললাম। ওকে সব ঘটনা খুলে বলতেই বলল,"চল যাই,দেখি কে? "
দুজনে দরজা খুলে বাহিরে এলাম।নাহ! কেউ নেই। আরেকটু এগিয়ে পুকুর পারে চলে এলাম, নাহ! কোথাও কেউ নেই।
মিরাজ বলল, "নানাতো ভাই, এসব তোমার মনের ভুল।ওসব কিছুই না।"
যাই হোক, দু'জনে ঘরে ফিরে এলাম।সেদিন রাতে আর কোন আওয়াজও পেলাম না।
তারপর আরো দু'দিন গেল, কোন শব্দ টব্দ নেই। আর আমি ভাবলাম, আসলেই মনে হয় সব আমার মনের ভুল।
কিন্তু ৪র্থ দিনের দিন ঘটলো সবচেয়ে আশ্চার্য জনক ঘটনা।
সেদিন অবশ্য আমি আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ মাঝরাতে ঘুম কিছুটা পাতলা হয়ে এলো।
চোখ খুলতেই সারা ঘরে অন্যরকম এক আলো দেখতে পেলাম।তারপর মুহুর্তে ভ্যানিশ হয়ে গেল সব।
আর জানালার পাশে কেউ যেন নুপুর পায়ে হাসতে হাসতে বিলের দিকে চলে গেল।
আমি বুকে সাহস সঞ্চয় করে ধীরে ধীরে বাহিরের দরজা খুললাম। তারপর বারান্দা থেকে নিচে নেমে বিলের দিকে চলে যাওয়া রাস্তায় ফুচকি দিলাম।
একি! 
একটা মেয়ে সাদা স্যালোয়ার কামিজ পরে পুকুরের পারে দাড়িয়ে আছে। যেন,এখনি পুকুরের মধ্যে লাফিয়ে পড়বে।
আমি মেয়েটাকে দেখে ভাবলাম, হয়ত এলাকার কোন মেয়ে অভিমান করে আত্মহত্যা করতে এসেছে।তাই জোরে ডাক দিলাম,
"এই, কে রে ওখানে? "
আমি ডাক দিতে না দিতেই মেয়ে টা পুকুরে লাফিয়ে পড়লো!
একবার সেদিকে দৌড় দিয়েছি প্রায়! তারপর কি যেন মনে করে, মেসে এসে মিরাজকে ডাকলাম।মিরাজ কে সব বলতেই ও বলল, "ভালো করেছো যে,ওখানে যাও নাই। গেলে আর আজ তোমাকে বাঁচানো যেত না।"
তারপর মিরাজ বলল, অনেক বছর আগে নাকি একটা মেয়ে ওই পুকুরে ডুবে আত্মহত্যা করেছিলো। আর তারপর থেকে তার এই আত্মাকে অনেকেই দেখতে পায়।
সব শুনে আমার আত্মারাম খাঁচা ছাড়া।আর সাতদিন প্রচন্ড জ্বর!
Nilkanto( নীলকান্ত)
  • ১:১১:০০ PM
ভূতের গল্পঃ প্লানচেট
সুমনের মায়ের আত্মাকে যে রাতে  হাজির করেছিলাম, সে রাতের মত ভয়াবহ রাত আমার জীবনে ২য় টি আসে নি। এখনো সে কথা মনে হলে গা শিউরে উঠে।
এই এখনি লোম গুলো খাড়া হয়ে ঊঠেছে। আপনাদের যদি দেখাতে পারতাম, তবে দেখতেন।
নাহ,থাক।আজ সে গল্পটা করবো না। গল্পটা শোনার পর আপনার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যেতে পারে! আর সত্যি বলতে কি,আমারো কেমন কেমন যেন লাগছে!  ইচ্ছেই হচ্ছে না সে কথাগুলো আবারো মনে করি! আবার গল্পটা শেষ না করে উঠতেও ইচ্ছে করছে না। যত ভয়ংকরই হোক না কেন, আমার মত তো সবাই এত ভীতু না!
তাহলে শুরু করি,কি বলেন?
১৩ জুন ২০০৯ সাল। তারিখটা আমার স্পষ্ট মনে আছে।আর বার সম্ভবত সেদিন শনিবার ছিল। শনি ও মঙ্গলবার আত্মাদের হাজির করার মোক্ষম দিন। বিশেষ করে এই দুই দিন এরা স্বাধীন ভাবে ঘুরে বেড়ায়।সুযোগ পেলেই লোকজনকে ভয় দেখায় কিংবা বড় কোন অঘটন ঘটায়।
ছোট বেলা থেকেই আমার দাদীর কড়া নিষেধ ছিল শনিবার আর মঙ্গল বারে যেন বেশি রাত বাহিরে না থাকি। তাছাড়া আমার বাড়ির প্রায় পাশেই ছিল কবিরাজ মালু জ্যাঠার বাড়ি।তিনিও বারবার নিষেধ করতেন।আর নিষেধ করার বড় কারন ছিল,আমার ভূতুরে রাশি।
আপনি বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা কিন্তু ভূতুরে রাশির লোকই থাকে আলাদা। হয়ত একই সাথে দু'জন রাতের বেলায় হাটছেন, আপনি অনেক কিছুই দেখছেন কিন্তু আপনার সঙ্গী কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। এমনও হয়।
আর নিজে এই ভুতুরে রাশির হওয়ায় এইসব আজে-বাজে নানা অভিজ্ঞতার সম্মুক্ষীন হতে হয়েছে বহুবার।
আর তাই, বাড়ি থেকে কঠিন নির্দেশ ছিল,
ইলিশ,কই কিংবা পুটি মাছ দিয়ে ভাত  খেয়ে ভর দুপুরে বাহিরে যেন না যাই! অথবা তেল পিঠা খেয়ে পানি না খেয়ে বাহিরে বের হওয়া ছিলো অসম্ভব।  এত কড়াকড়ির পরেও কখনো সখনো মিসটেক হয়ে যেত।
যাই হোক,
সেই ১৩ জুন,শনিবার ছিল এমনই একটা ভয়ঙ্কর রাত। ভয়ঙ্কর মানে শুধু ভয়ংকর নয়,এ এক বিভিষিকাময় কালো রাত।
ঠিক সেদিন থেকে একবছর আগে সুমনের মা, সুমনের বাপের উপর রাগ করে বিষ খেয়ে মরেছিল। সন্ধ্যার সময় বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছিলো আর সারা রাত বাড়ি আসে নাই।পরেরদিন নূরুর পুকুরের পাশের এক জমিতে পরে ছিল মহিলার নীল হয়ে যাওয়া লাশ। আর সেদিন থেকে ঠিক উনত্রিশ দিন পর পিয়াঙ্কার মা নাকি একবার সুমনের মা'কে পুকুর পাড় দিয়ে হেটে যেতে দেখেছিলো!
যা হোক, সুমনের মা বিষ খেয়ে মারা যাবার তেতাল্লিশ দিনের দিন সুমনের বাবা নতুন একটা বউ নিয়ে এলো।  কিন্তু সেই নতুন বউ যে সংসারের শান্তির কাল হয়ে যাবে তা সুমনের বাপ ভাবতেও পারে নি। প্রথম কয়দিন ভালোই চলল। তারপর শুরু হলো নতুন বউয়ের আসল চেহারা প্রদর্শন।  ছোট্ট সুমনটা তখন কেবল ছয়-সাত বছরের।কিন্তু ওই ছোট্ট বাচ্চা ছেলেটার সাথে সৎ মা নানাভাবে অত্যাচার করা শুরু করল। সৎ মায়ের আচরনে ক্ষুব্ধ সুমন অভিমান করে বাড়ির বাহিরে তাল গাছ গুলোর নীচে গিয়ে বসে  থাকত। আর তেমনি একদিন ভর দুপুর বেলা সুমন তাল গাছের নীচে বসে আছে। এমন সময় পশ্চিমের বাগানটার কাছ দিয়ে ওর আপন মা'কে আসতে দেখলো (সুমনের ভাষ্যমতে)। মা'কে দেখে আনন্দে আটখান সুমন কিছুদূর দৌরে গিয়ে মা'কে জড়িয়ে ধরে সৎমা আর বাবার বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ একে একে তুলে ধরল,কিভাবে তার নতুন মা তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে!, কিভাবে বাবা আর আদর করে না, সব সব কথা। ছোট্ট সুমনের কথা শুনে ওর হারিয়ে যাওয়া মা নাকি কেঁদে ফেলল।আর সুমনকে বলেছিল,
"যা বাপ,বাড়ি যা।আমি একটু পরে আসতেছি।"
মহা খুশি সুমন দৌড়ে বাড়িতে এসে সবাইকে ডেকে ডেকে মায়ের সাথে দেখা হওয়ার কথা বলল।কিন্তু কেউই ওর কথায় কর্ণপাত করলো না।
আমার কাছে এসে আমাকে জাপটে ধরে বলল, "ও কাকা, আমি না মা'ক দেখিছি।"
আমি ওকে কাছে বসিয়ে খুটে খুটে সব জিজ্ঞাসা করলাম।কি দেখেছি,কিভাবে দেখেছে,আর কি কি কথা হইছে,সব কিছু।  সাত বছরের ছোট্ট সুমন গটগট করে সব কথা বলে গেল।
আমি ওর কথা পুরোপুরি বিশ্বাস না করলেও একেবারে উড়িয়ে দিলাম না।এমনকি ছোট্ট সুমনকেও কিছু বললাম না।থাক না বেচারা মায়ের ফিরে আসার শান্তনা নিয়ে! তাও যদি ও একটু ভালো থাকে!!
সেদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছিলো উৎপাত। সুমনের নতুন মা যেখানেই যাল,সেখানেই ভয় দেখাত।এমনকি একবার তো, কাঁচা পায়খানার মধ্যে উপর করে পুঁতে ফেলতেও চেয়েছিল।ভাগ্যিস সেদিন হুজুরের বউ(বাড়ির পাশের এক মহিলা) পায়খানা ভাঙার শব্দে এগিয়ে এসেছিলো। তা না হলে সেদিনই সৎমায়ের কেল্লা ফতে!!
তারপর থেকে সৎমা একা একা টিউবওয়েল পারেও যেত না।
কিন্তু ক'দিন আর এভাবে থাকা যায়।ভয়ে ভয়ে মহিলাটা বাপের বাড়ি গেল কয়েকদিনের জন্য। আর সেই কয়েকদিন আর কেউই কিছু দেখলো না। সুমনের সৎমা কবিরাজের কাছ থেকে তেল,মাদুলি,পানি পড়া প্রভৃতি নিয়ে কয়েকদিন পর আবার এই বাড়িতে ফিরে এলো।
আর কবিরাজের উপর দৃঢ় ভরসায় সব কিছুকে তুচ্ছ জ্ঞান করা শুরু করলো।কিন্তু কথায় আছে,পিপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে!
একদিন এই নব্য পাখনা যুক্ত মহিলারও শেষ দিন চলে এলো।  সুমনের সৎমা এ বাড়িতে এলেও প্রায় মাস খানেক আর কিছুই দেখলেন না।ভাবলেন , সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কিন্তু এক মাস পর থেকে শুরু হলো নতুন উপদ্রব।
রাত-বিরাতে হঠাৎ করে ঘরের বাহিরে গরুর হেটে চলার শব্দ পাওয়া গেল,কখনো খুব কাছ থেকে কেউ যেন ফিসফিস করে কিছু বলছে এমন শোনা যেত।মনে হত,এই জানালার ও পাশে দাঁড়িয়ে দুজন মানুষ নিজেদের মধ্যে আলাপ করছে।
এমনকি সৎমা দু একদিন সে কথা শোনার চেষ্টা করল না,তাও না।জানালার সাথে কান পেতে থাকল কিন্তু কিছু বুঝতে পারলো না।বরং ফিসফিসানি শব্দ শোনা যেত শুধু। এভাবে চলতে চলতে একদিন ঝড়-বাতাস ছাড়াই সৎমায়ের গায়ের উপর আম গাছের ডাল ভেঙে পড়তে পড়তে বেঁচে গেল।
তারপর একদিন দুপুর বেলায় হঠাৎ করে বাড়ির পাশের আম গাছটা কেউ একজন যেন জোরে জোরে ঝাঁকাতে শুরু করলো।সেকি এই ঝাঁকি না সেই ঝাঁকি! না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবেন না।
যা হোক, এত কিছু এক বছর ধরে চলতে থাকলো। 
একদিন বিকেলে সুমন এলো আমার কাছে।এসে বলল, "ও কাকা,কাকা!  মা তো আর আসলো না?"
আমি ওকে কোন উত্তর দিতে পারলাম না।শুধু বললাম, "দূর ব্যাটা! এত ভাবতেছিস ক্যান? মা আসবিনি।"
ভাতিজা সুমন যেন একটু আশা খুঁজে পেল।ওর চোখ মুখ চকচক করে ঊঠলো। তার পর ভো দৌড় দিয়ে বাড়িতে।
সুমন চলে যেতেই আমার একটা চিন্তা মাথায় এলো। 
আচ্ছা,সুমনের মা কি চায়? কেন এমন করছে?
আমি জানি এর উত্তর একমাত্র সুমনের মা'ই দিতে পারে। মাথার মধ্যে দুষ্ট বুদ্ধি চলে এলো। প্লানচেট করবো বলে স্থির করলাম।কিন্তু কিভাবে?
এর আগে একটা কথা বলে রাখি।আমি যখন এস এস সি তে পড়তাম তখন আমার এক বন্ধু সুজন কবিরাজি শিখত। ও আমাকে কয়েকটা কবিরাজির বইও দিয়েছিলো। আর সেই বইয়ের নিয়ম অনুযায়ী সে বয়সে কিছু আমলও করেছি।
স্মশান থেকে পয়সা, হাড় এসব সংগ্রহ করেছিলাম অনেক আগেই। কিন্তু তার ব্যবহার করার সাহস কখনো হয়ে উঠেনি। আর আমার মা একদিন সেই সব কবিরাজীর বই,ডায়রি খুঁজে পেয়ে নিষ্ঠুর ভাবে পুড়িয়ে দিয়েছিলো। আর তা পুড়িয়েছে আমার ভালোর জন্যই।সেই পুড়ানোর হাত থেকে দু একটা বই রক্ষা পায়।তেমনি একটা বই নিয়ে আমি আবার পড়া শুরু করলাম। খুব মনযোগ সহকারে পড়ে পড়ে করনীয় কাজ গুলো লিখে রাখলাম।
প্লানচেট করতে অন্তত আরো দু'জনকে দরকার। যারা আমাকে শক্তি দিতে পারবে। অনেক ভেবে চিন্তে আমার বাল্য বন্ধু সফিকুল আর জাকির কে সব কিছু খুলে বললাম। ওরা রাজি হয়ে গেল।
তারপর কিছু আনুসাঙ্গিক প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন সোয়া সের আতপ চাল,আগরবাতি, শ্মশ্মানের পৌনে দুই টাকা,  মরা মানুষের বিছানার চাদরের টুকরা, সুমনের মায়ের কাপড়ের টুকরা ইত্যাদি খুব গোপনে সংগ্রহ করলাম।
তারপর এলো কাঙ্খিত রাত,
১৩ জুন ২০০৯, শনিবার। ঘুটঘুটে কালো এক রাত।
আমরা ক'জন রাত ১২ টা নাগাদ জাকিরের ঘরে বসলাম।( জাকিরের বাড়িতে সেদিন কেউ ছিলো না।)
সবাই পুত পবিত্র হয়ে মাটিতে প্লানচেট ছক আকালাম।তারপর বইয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী যা যা করতে হবে, সবই করলাম।রাত একটা নাগাদ তিনজন মুখোমুখি বসে আছি।আমি প্লানচেটের জন্য কালি ষষ্ঠী মন্ত্র জপ করলাম, তারপর আত্মামাং মন্ত্র।
মন্ত্র জপ করতে করতে নাকে তীব্র ঝাঁঝালো এক গন্ধ পেলাম।তারপর,
সারা ঘর যেন কাঁপতে থাকলো। আমি আগেই ওদের বলেছিলাম, যেন কেউ ভয় না পায়।ভয় পেলে নির্ঘাত মৃত্যু। কিন্তু তারপরেও আমারই ভয় ভয় লাগতে শুরু করতেই নিজের দূর্বলতা টের পেলাম।সঙ্গে সঙ্গে জাকিরের হাত জোরে করে ধরলাম।আমার অন্যহাত শ্মশ্মানের হাড়টার উপর।
আমি জানি,যতক্ষন আমি দূর্বল না হবো ততক্ষণ আমার কিছুই হবে না।
একটা জোরে করে নিশ্বাস নিয়ে চোখ খুললাম।
একটা ছায়া-মূর্তি দাড়িয়ে আছে আমাদের থেকে একটু তফাতে।
আমি বললাম, "কে? "
ছায়া-মূর্তি হাসতে হাসতে বলল," কিরে, আমাকে চিনতে পারিস নাই? আমি তোর ভাবি।আমাকে ডাকতেই তো এসব করা,তাই না? হা হা হা "
আমি বললাম, "হ্যা।"
সুমনের মা বলল," আমি অনেক সুযোগ খুঁজছিলাম, তোর সাথে দেখা করার কিন্তু সুযোগ পাই নাই।আজ পেলাম।"
আমি বললাম, "ভাবি,আসলে তুমি এমন করলা কেন? আর এখনই বা এমন করতেছো কেন? "
এবার সুমনের মা একটু গর্জন করে উঠে বলল, "ক্যান,তুই জানিস না? কেন আমি এমন করেছিলাম? আর কেন করতেছি? "
"সুমনের বাপ ওই মাগীর জন্য আমার গায়ে হাত তুলিছিলো।তাই রাগ কইরে আমি বিষ খেলাম।আর ওই মাগী আমি মরতে না মরতে আমার ঘরে ঢুকিছে! "
"আমার ছোট্ট সাওয়ালের সাথে কি খারাপ ব্যবহারই না করেছে! আমার ছাওয়ালডা আমার জন্যি কাঁদে।
আমি কিছুতেই ওই মহিলাকে থাকতে দেব না।এমন কি কোন মহিলাকেই না।"
দৃঢ় কন্ঠে সুমনের মা কথাটা বলল।রাগে তার কন্ঠ থেকে সাপের মত ফোস ফোস শব্দ হচ্ছে। আমি কিছু একটা বলতে যাবো,ওমনি সুমনের মা বলল,
"তুই আর এসব করিস না।তোর এসব কিছুই না।আমি এমনিই তোর সাথে দেখা করতে এসেছিলাম,একটা সংবাদ দিতে।"
আমি কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, "কিসের সংবাদ? "
সুমনের মা এবার ফুফাতে ফুফাতে বলল, "আমি আমার ঘরে কাউকে থাকতে দেব না।এমনকি দুনিয়াতে না। "
"ওই মহিলার সময় শেষ হয়ে গেছে।আম ওকে পানির মধ্যে চুবায়া আসিছি। হা হা হা "
"যাহ! আর এসব করিস না কখনো। "
আমি হব্ব-তব্ব লেগে গেলাম।কি? সত্যিই নাকি? ঘর আবার কাঁপতে শুরু করলো।তারপর আর কিছুই নেই। জাকির আর শফিকুল তো ভয়ে চুপসে আছে। শফিকুল কি যেন বলতে চেয়েও বলতে পারলো না!
সুমনদের বাড়ি থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে।কি যেন হয়েছে সেখানে!
কান খাড়া করে শুনার চেষ্টা করলাম।যা শুনতে পেলাম, তারপর তিনজন পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপসে গেলাম ঘটনার আকষ্মিকতায়।।এত দ্রুত সব ঘটে গেল ভাবতেই পারছি না তখনও।
Nilkanto( নীলকান্ত)®
  • ১:১১:০০ PM
সেবার অনেক দিন পর কুরবানির ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেছি।আর বাড়ি যাওয়া মানেই বাড়িতে থাকি বা না থাকি সুকচাঁদ চাচার দোকানে প্রতিদিন যেতেইই হবে। বিশেষ করে আমি আর আমার এক জ্যাঠাতো ভাই "রবিন" প্রতিদিন বিকেলে মোটরসাইকেল নিয়ে চাচার দোকানে চলে আসতাম। তারপর সারা বিকেল,সন্ধ্যা বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর ছোট ভাইদের সাথে গল্প গুজব করে রাত আটটা-ন'টা নাগাদ বাসায় চলে যেতাম। আমার গ্রামের বাড়ি থেকে সুকচাঁদ চাচার চা-ষ্টলে আসা-যাওয়ার পথে একটা বিল পাড়ি দিতে হত। বিলের মাঝখানে এই রাস্তাটা প্রায় দেড়-দুই কিলো। পুরাটাই ফাঁকা,আসে পাশে কোন বসত বাড়ি নাই,যেদিকে তাকানো যায় শুধু বিস্তীর্ণ  ফসলী জমি।আর পাকা রাস্তার দু'পাশে মাঝারি গোছের লাটিম গাছ,কোথাও কোথাও দু একটা শিশু কিংবা বট গাছ সমস্ত রাস্তাটাকে একটা আকর্ষনীয়,দর্শনীয় স্থানে পরিনত করেছে। তবে বিশেষত বর্ষা কালে এই জায়গাটা আরো বেশি সুন্দর হয়ে উঠে। তখন সমস্ত ফসলী জমি পানির নিচে চলে যায়, বিল বর্ষার পানিতে ভরে উঠে। যে দিকে তাকাবেন শুধু পানি আর পানি।পশ্চিমা দিগন্তে অস্তগামী লাল সূর্যটা কিভাবে বিলের পানিতে হারিয়ে যায়, তাই দেখতে বিকেল বেলা ছেলে-বুড়ো সহ সকল বয়সী লোকজন এসে এই খানে ভীর করে।বিলের অপার সৌন্দর্য দু'চোখ ভরে অবলোকন করে।তারপর সন্ধ্যে বাড়ার সাথে সাথে একে একে ফাঁকা হয়ে যায় সব।
আমাদের চলনবিলের লোকজন এই জায়গাকে বলে "মিনি কক্সবাজার"।যাদের কক্সবাজার দেখার সামর্থ্য নেই, তারা এই চলনবিলের মধ্যেই কল্পনায় কক্সবাজার দেখে নেই।
কিন্তু এই অপার সৌন্দর্যের মাঝে কোথাও কোথাও লুকিয়ে আছে অতিপ্রাকৃত কিছু ঘটনা, তা অনেকেই জানেন না। ছোটবেলায় দাদার মুখে এ বিলের মধ্যে ঘটে যাওয়া কিছু ভুতুরে গল্প শুনে এসেছি।কিন্তু নিজের চোখে তা দেখবো কিংবা আরেকটা নতুন ঘটনার স্বাক্ষী হবো, তা কোনদিন ভাবিনি।
 
যাই হোক, কুরবানির ঈদের বেশ কয়েকদিন পরের ঘটনা এটা। সেদিন আমি আর আমার জ্যাঠাতো ভাই সুকচাঁদ চাচার দোকানে যাওয়ার জন্য বের হলাম।বের হতে হতেই বেশ দেরী হয়ে গেছে।কিন্তু সন্ধ্যা হোক আর যাই হোক চাটমোহরে না এলে আর সুকচাদের দোকানের চা না খেলেই নয়। বাড়ি থেকে রওয়ানা দিয়ে বিলের মধ্যে আসতে আসতে প্রায় বেলা ডুবা ডুবা ভাব।একেবারে ভরা সন্ধ্যে বেলা তখন। হালকা শীত শীত লাগছে,তার মধ্যে দু'ভাই মোটর সাইকেল চালিয়ে আসছি। গাড়ির গতিবেগ ৪০-৫০ কিমি/ঘন্টা।
হঠাৎ
ধানকুনিয়া পার হয়ে যে একটা গোরস্থান আছে সেই গোরস্থানের কাছে আসতেই তীব্র গরম এক বাতাসের হলকা এসে লাগলো। আমি আর রবিন দু'জনেই খুব ভালো ভাবে অনুভব করলাম।
রবিন আমাকে বলল,"চাচাতো ভাই, গাড়ির স্পীড আরেকটু কমা।"
আমি ওর কথার তাৎপর্য বুঝতে পারলাম। সঙ্গে সঙ্গে হালকা ব্রেক করে বিলের প্রথম মোড়টা পার হলাম। ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। আমি রবিনকে বললাম, "কি রে,হঠাৎ এ গরম বাতাস কই থেকে আইলো? "
ও আমতা আমতা করে কিছু বলল না।প্রথম ব্রীজটার কাছে এসে গাড়ি দাড় করালাম।
শরীরটা কেমন যেন ভার ভার লাগছে। হাত পা ঠিক উঠেও উঠতে চাচ্ছে না। আমি রবিনকে বললাম, "তোর কাছে সিগারেট আছে? "
ও কোন কথা না বলে একটা সিগারেট এগিয়ে দিলো। দু'জন পাশাপাশি দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছি। হঠাৎ রবিন বলল,
গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে দে।আমি নীচে নেমে প্রস্রাব করে আসি।"
মুখে সিগারেট লাগিয়েই ও নীচে নেমে গেলো প্রকৃতির ডাকে।তখন আমি ব্রীজের সাইডে একা দাড়িয়ে। মনের মধ্যে হালকা ভয় কাজ করছে,কিন্তু ঠিক পাত্তা দিচ্ছি না।
বরং সিগারেটে জোড়ে করে দুইটা টান দিয়ে ফেলে দিলাম।
ততক্ষণে রবিন ওর কাজ সেরে উপরে চলে এসেছে। ওর মুখে এখনো সিগারেট। গাড়িতে উঠে বসতেই আমি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সামনে এগুতে শুরু করলাম।
গাড়ির হেডলাইট এর তীব্র আলোয় পোকা গুলো সাৎ সাৎ করে চোখে মুখে এসে লাগছে।কিন্তু একটু দূরে যেতেই গাড়ির হেডলাইট হঠাৎ ডাউন হয়ে গেলো। কিন্তু ইঞ্জিন যথারীতি চলছে।
আরেকটু সামনেই বড় ব্রীজটা। সামান্য উচু। কিন্তু আমার গাড়িটা কিছুতেই যেন উপরে উঠছে না।মনে হলো, কেউ একজন পেছন থেকে টেনে ধরে আছে। আমি ভাবলাম, উচু জায়গা তাই বোধহয় এমন হচ্ছে। ক্লাস ধরে ঘ্যাট ঘ্যাট গিয়ার কমিয়ে দুই গিয়ারর নিয়ে আসলাম। কিন্তু তবুও যেন ইঞ্জিন ঠিক শক্তি পাচ্ছে না। আমার ডান হাতে পিক আপ ফুল টানা।সাইলেন্সারের পেছন দিয়ে সাদা ধোয়া বের হচ্ছে।কিন্তু গাড়ি যেন এগুতেই চায় না।অনেক কষ্টে গাড়ি বড় ব্রীজটার উপরে উঠে থেমে গেলো।আর ঠিক সঙ্গে সঙ্গে আবারো সেই গরম বাতাস অনুভব করলাম।যেন এখনই আমাদের দু'জনকে গাড়ি সমেত ব্রীজ থেকে নীচে ফেলে দেবে!
হার্ট বিট প্রচন্ড বেড়ে গেছে।সামনে পিছনে তাকিয়ে কোন জনমানুষের চিহ্ন দেখতে পেলাম না। রবিনের মুখের দিকে তাকিয়ে ওর পাংশুটে মুখ দেখে আমি আরো ঘাবরে গেলাম।কি করি আর কি করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।
এদিকে চরম বাতাস হচ্ছে।যেন এই সময়েও কালবৈশাখী ঝড় হচ্ছে বিলের মধ্যে। আমি তো হেডলাইটের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম, কিন্তু ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার কারন খুজলাম। টাংকি ঝাঁকিয়ে দেখলাম,নাহ,যে তেল আছে তাতে অনায়াসে একশ কিলো রান করা যাবে। স্পার্কিং প্লাগ টান দিয়ে খুললাম। রবিন কে বললাম, মোবাইলের লাইট ধর।
ও গ্যাস ম্যাচ বের করে লাইট ধরলো। নাহ! সব ঠিক আছে। স্পার্কিং চেক করলাম কিন্তু প্লাগে স্পার্ক হচ্ছে না!
আরো বেশিই ঘাবরে গেলাম।এই প্রায় শীতের মধ্যেও দু'জন ঘেমে অস্থির।
শেষ পর্যন্ত সব আশা ছেড়ে দিয়ে রবিনের কাছে আবার সিগারেট চাইলাম। ও সিগারেট বের করে জ্বালানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু এত বাতাসে কিছুতেই মেসলাইট জ্বলছে না।
এদিকে আমার মনে হচ্ছে কেউ যেন বারবার আমার মুখ থেকে সিগারেট টান দিয়ে ফেলে দিতে চাইছে! আর আমিও দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরলাম।
তারপর, বাতাসকে আড়াল করে অনেক কষ্টে সিগারেট টা জ্বালাতে পারি।আর সবচেয়ে আশ্চার্যের বিষয় যখনই সিগারেট টা জ্বলে উঠলো ওমনি চারপাশের উত্তাল হাওয়া শান্ত হয়ে গেলো। বাইকের প্যাডেলে কিক করার সাথে সাথে গাড়ি স্টার্ট, হেডলাইটও একেবারে ফকফকা।
মৃত শরীরে যেন আত্না ফিরে পেলাম দু'জন।
সঙ্গে সঙ্গে গাড়তে উঠে দিলাম টান। গাড়িতে বসার পর আরেকবার ওই গরম বাতাস টা একটা ধাক্কা দিল।আর কানের কাছে কেউ যেন ফিসফিস করে বলল,"তোর মা লাউয়ের পাতায় জাউ বিলাইছিলো দেইখ্যা বাইচ্যা গেলি"।
আমরা দু'ভাই স্পষ্ট সে কথা শুনতে পারলাম। সেই ফিস ফিস আওয়াজ টা।
গাড়ি ছুটিয়ে শুকচাঁদ চাচার দোকানে এসে হাজির হলাম।রবিন আর আমার দু'জনের সারা শরীর ঘেমে একাকার। শুকচাঁদ চাচা রবিনকে দেখেই বলল," বউমার ঘরে চুরি করতে গেছিলে নাকি? "
কি আর বলবো তখন! বিলের মধ্যে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বললাম সবাইকে। সবাই শুনে এবং আমাদের অবস্থা দেখে তো থ!  বকুল,গিয়াস,ইমরান, মিলন সবাই বলল,ভাই আজ আর বাড়ি যাওয়া লাগবি না।আজ চাটমোহরেই থাকেন।
বকুল বলল,"চল,আমার বাড়িতে আজ থাকিস তোরা।"
কি আর করা! অগত্য সে রাত বকুলের বাসাতেই থাকতে হলো। 
(বকুলের বাসায় সে রাতে যে ঘটনা ঘটেছিলো, তা অন্যদিন বলবো।)
Nilkanto( নীলকান্ত)
  • ১:১১:০০ PM
অমীমাংসিত প্রশ্নঃ(মৃত মানুষের যখন সফরসঙ্গী)
(কেউ উত্তর জানলে বলবেন প্লিজ)

আমার সাথে দু'একটা অতি অলৌকিক ঘটনা না ঘটলে আমি কখনোই বিশ্বাস করতাম না যে, জ্বিন-ভূত বলে কিছু আছে।
এখনো মাঝে মাঝে বিশ্বাস করতে চাইনা।আর এই জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে ভূত-প্রেতে বিশ্বাস একেবারেই বেমানান। তবে এই পৃথীবিতে এখনো অনেক বিষয় আছে যা অমীমাংসিত। যার কোন সদুত্তর কেউ দিতে পারেনি।
আমার জীবনে তেমনি একটা অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়ে গেছে।আমি অনেককেই এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছি কিন্তু কোন যুক্তিসংগত উত্তর পাইনি।আজ তাই সবার কাছে আমি সেই প্রশ্নটা আরেকবার করতে চাই।
তার আগে ঘটনাটা বলি,
মাঘ মাসের কনকনে শীতের রাত।আমি সেদিন রাতের ট্রেনে বগুড়া থেকে বাড়ি ফিরছি।রাত দশটা  বিশে রংপুর এক্সপ্রেসে উঠলাম।যেহেতু চাটমোহর স্টেশনে রংপুর এক্সপ্রেস দাড়ায় না তাই বাধ্য হয়ে বড়ালব্রীজের টিকিট কাটতে হলো।  বগুড়া থেকে বড়ালব্রীজ পৌছাতে রাত আড়াইটে বেজে গেলো।
ছোট্ট একটা স্টেশন।দু' একটা দোকান খোলা আছে।দেখে শুনে এক চায়ের দোকানে বসলাম।আর মনে মনে ভাবলাম, আজ আর বাড়ি যাবো না।স্টেশনেই সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। তাই আরাম করে পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে চা-সিগারেট খাচ্ছি। প্রায় আধা ঘন্টা হয়ে গেলো এভাবে বসে থাকতে থাকতে।এদিকে প্রচন্ড ঠান্ডা আর কুয়াশায় চারদিকে ঢেকে আসছে। নিজের অযাচিত বোকামির জন্য নিজের কাছেই রাগ হচ্ছে! 
মনে মনে ভাবলাম,
"দুর! কাল সকালে বের হলেও পারতাম।কি দরকার ছিল অযথা এই রাতে ট্রেনে আসার! না হয় কালকের কাজটা একটু দেরীতেই হত। তবুও তো এই কনকনে শীতের রাতে খোলা আকাশের নীচে এভাবে বসে থাকতে হত না।"
এসব ভাবছিলাম, আর নিজের প্রতি খুব রাগ হচ্ছিলো। কাউকে গাড়ি নিয়ে আসতেও বলিনি।এমনকি কোন আত্মীয়কে ফোন দেব তারও উপায় নেই। ফোনের ব্যাটারি সারা রাস্তায় ফেসবুক চালাতে চালাতেই ডেড হয়ে গেছে।
অগত্য নিরুপায় হয়ে বসে থাকা আর চা সিগারেট খাওয়া ছাড়া উপায় নেই।প্লাটফর্ম এ কিছুক্ষন বসে থেকে সারে তিনটা নাগাদ নীচে বাজারের দিকে নামলাম ঘুরে দেখার জন্য।
কিছুদূর এগুতেই দেখলাম আমার বাড়ির পাশের এক পরিচিত জ্যাঠা এক দোকানে দাঁড়িয়ে পান খাচ্ছে।কাছে যেতেই বলল,
"ক্যা বারে, তুমি এত রাতে কোনে থেইক্যা? "
আমি কাছের একজন মানুষ পেয়ে কিছুটা উচ্ছাসিত হলাম।যাক তাও নিজের একটা মানুষ আছে।
আমি বললাম,"জ্যাঠা,বগুড়া থেকে আসতেছি।আপনি এখানে ক্যা? "
জ্যাঠা বলল,"আমার মেয়ে আর জামাই আসার কথা ছিল এই ট্রেনে।কিন্তু ওরা তো কেউ আসে নাই দেখতেছি। আমার ফোনডাও বাড়িত রাইখ্যে আইছি তাই ফোন দিবের পারি নাই।"
কেবলে দোকানদারের কাছ থেকে ফোন দিয়ে শুনি,ওরা নাকি গাড়ি ফেল করিসে।দেইখসেও রে বা, ক্যাবা কথা হইলো!  যাই হোক,ভালোই হইলো তুমা'ক পায়া।"
"তা তুমি, বাড়ি যাইবে লায়? "
আমি বললাম,"হু যাবো তো,কিন্তু এত রাতে গাড়ি পাবোনে কই? "
জ্যাঠা হাসি মুখে কইলো, "দুর ব্যাটা,আমি একটা সি এন জি লিয়ে আইছি। চল,যাই।"
আমি মোটামুটি আনন্দে আত্মহারা।যাক বাবা,বাঁচা গেলো।
নদী পার হয়ে পশ্চিম পাশের বটগাছের কাছ থেকে সি এন জি তে উঠলাম। বিশ্বাস করবেন না, সি এন জি তে উঠে কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
এক ঘুম দেয়ার পর কারো ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো।দেখি আমার ওই জ্যাঠা।
আমাকে বলল,"ব্যাটা,তোমারে বাড়ি পায়া গেছি।নামবা? না হয় আজ আমারে বাড়িতে যাই চল?
আমি চোখ খুলে দেখলাম,"আমার বাড়ির সামনের রাস্তায় সি এন জি দাড়িয়ে আছে।আমি জ্যাঠাকে বললাম,
"না,জ্যাঠা,বাড়ি যখন চলে এসছি তখন আর যাবো না।অন্যদিন যাবো।"
জ্যাঠা বলল,"আচ্ছা বাজান,ভালো থাইকো তালি।আর তোমার আব্বা মাকে বইলো আমার বাড়িতে বেড়ায়ে আসতে।"
আমি হ্যা বলে বাড়ির উঠোনে উঠতে শুরু করলাম।ততক্ষণে, সি এন জি মুখ ঘুড়িয়ে বড় রাস্তার দিকে চলা শুরু করেছে।
বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে বুঝলাম  সবাই ঘুমিয়ে আছে। আমি আম্মার ঘরের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে আস্তে আস্তে আম্মাকে ডাকলাম।
আম্মা ঘুম থেকে উঠে এত রাত্রে আমাকে দেখে তো অবাক! 
তারপর নানা প্রশ্ন,কিভাবে আসলাম? কই থেকে আসলাম? কার সাথে আসলাম ইত্যাদি।
আমি ঘরে যেয়ে মাকে সব খুলে বললাম।
হঠাৎ করে ঘরের দেয়াল ঘড়িটা বেজে উঠলো। চারটার ঘন্টা শুনে আমি হকচকিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালাম।
কেবল চারটা বাজলো!
আমি দেয়াল ঘড়িতে ভুল আছে ভেবে হাত ঘড়ির দিকে তাকালাম। চারটা এখনো বাজেনি।কয়েক সেকেন্ড এখনো বাকি আছে!! আমি আরো অবাক হয়ে গেলাম।
এটা কিভাবে সম্ভব? বড়ালব্রীজ থেকে চাটমোহরে আসতেই যেখানে ৪৫ মিনিটের উপরে সময় লাগে,সেখানে আরো সাত-আট কিলো বেশি রাস্তা মাত্র পনেরো মিনিটে কিভাবে আসলাম??
তারপর মা যখন সব কিছু শুনে বুকে দোয়া পড়ে ফু দিয়ে বললেন,"আল্লাহর মাল,আল্লাহই হেফাজত করেন। "তখন একটু অবাক হয়েছিলাম বটে কিন্তু যখন শুনলাম আমি যে জ্যাঠার সাথে এতটা পথ এসেছি,তিনি গত পাঁচ দিন আগে মারা গেছেন তখন স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
কিন্ত কিভাবে আমি এত অল্প সময়ে এতটা পথ এলাম?
আর
একজন মৃত মানুষ আমাকে কেন সাহায্য করলেন?
তা আজো আমার কাছে অমীমাংসিত জিজ্ঞাসা!!
কেউ এর সদুত্তর জানলে অবশ্যই জানাবেন।কৃতজ্ঞ থাকবো ।
Nilkanto( নীলকান্ত
  • ১:১০:০০ PM

ভূতের গল্পঃ ঘোর..!
কয়েকদিন হলো রাতে ঠিক ঘুম হচ্ছে না।চোখ বন্ধ করলেই কি সব বিভৎস চেহারাগুলি ভেসে উঠে। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে??
দুই তিনবার ডাক্তারের কাছে গেলাম সমস্যাটা নিয়ে। ডাক্তার নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বললেন,
"নীলকান্ত সাহেব, কোথায়? আপনার তো কোনই সমস্যা নেই। আপনি তো একে বারে ফিট আছেন।"
ডাক্তারকে বললাম,"ডাক্তার,তাহলে আমি যেসব দেখি, সেগুলো? "
ডাক্তার হাসতে হাসতে বললেন,"আপনি সম্পুর্ন সুস্থ আছেন মি. নীলকান্ত। ওসব আসলে কিছুই না।আপনি অত্যাধিক ঘোষ্ট স্টোরি পড়েন আর মিস্ট্রিয়াস বই পড়েছেন একসময়,  তাই হয়ত সামান্য হ্যালিসুলেশন।তবে আমার ঠিক তা মনে হয়না। "
ডাক্তারকে বললাম, "তাহলে কি করবো ডাক্তার? "
তিনি হাসতে হাসতে বললেন, "কিচ্ছু করা লাগবে না।বাসায় গিয়ে দিব্যি রেষ্ট নেন কিছুদিন।অথবা সম্ভব হলে সপ্তাহ খানেক কোথাও থেকে ঘুরে আসুন। তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে।"
আর হ্যা, এসব হরর মুভি আর বই পড়া থেকে পারলে একটু দুরে থাকবেন আপাতত। "
ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে বেশ প্রফুল্ল লাগছিল।যাক,তেমন কোন সমস্যা নেই তাহলে।
খুশি মনে মেডিক্যাল থেকে বের হয়ে সোজা সাত মাথায় এসে চা-টা খেলাম।তারপর রাত সাড়ে দশ'টা নাগাদ সি এনজি ধরে বাসায় চলে এলাম। আমার বাসা,আই মিন মেসটা বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের পেছনে,জহুরুলনগর।  এ পাশটা কলেজের উত্তর দিক। মোটামুটি ফাঁকা একটা সুন্দর এলাকা। কলেজের দু'টো হল,"তিতুমীর "ও "মুন" হল আজ প্রায় বছর সাতেক হলো বন্ধ পড়ে আছে।হলের জানালা,দরজা গুলো ভেঙে গেছে,দু'একটা যাও বা জানালা দরজা আছে তাও কোন মত লুলা হয়ে জানালার চৌকাঠের সাথে আটকে রয়েছে কোনমত।
গভীর রাতে ও দিকে তাকালে পোড়া বাড়ির মত লাগে।মনে হয় কখন বা জানালা দিয়ে কোন বিভৎস মুখ বেড়িয়ে আসে! তারপর গলা কাটা কোন মাথা দেয়াল বেয়ে নেমে আসে নীচে,রাস্তায়। আমি পারত পক্ষে রাতের বেলা ওই দিকে তাকাইই না। আজো বাসায় আসার সময় কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা রুমে চলে এসেছি।  
যাই হোক,
রুমে এসে দেখি আমার বন্ধু আপেল রুমে নেই।মেইন গেটের দরজার সাথে একটা চিরকুট ঝুলানো রয়েছে। তাতে লিখা,"আজ রাতে আর আসতে পারবো  না।কষ্ট করে আজ রাত একাই থাক।"
নাহ!  একা থাকায় আমার কোন আপত্তি ছিল না।এর আগে মাসের পর মাস একা একা একবাসায় থেকেছি।ওটা কোন সমস্যা ছিল না।কিন্তু সমস্যা টা  হয়েছে ইদানীং।মেসে সবাই থাকতেও একা এক রুমে আজকাল ভয় লাগে! সেখানে পুরো মেসে আজ আমি একা।সম্ভবতই গা টা ছমছম করে উঠলো।
কিছুক্ষন পর বুঝতে পারলাম, আমি ঘামছি। শুধু ঘামছি তা না,শরীরটাও বেশ ভারী ভারী লাগছে। এ কেমন যেন অন্যরকম অনুভুতি।
রাত কেবল এগারোটা। আর রাত এগারোটা এসব এলাকায় কিছুই না।ছেলে-মেয়েরা রাত বারোটা একটা পর্যন্ত রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করে।তবে আমি কেন ভয় পাচ্ছি?
দূর! এটা কোন কথা হলো! নিজের মনে নিজেই বলে উঠলাম।
বাসার অন্যান্য রুমের দরজা জানালা লাগানো আছে কিনা দেখে নিজের রুমে এলাম।নাহ! খুব ক্ষুধা লেগেছে মনে হচ্ছে। কিন্ত আজ ডাক্তারের কাছে যাওয়ায় রান্না-বান্না কিছুই করা হয়নি।ভাবলাম , পাশেই মাহাবুব মামার ছোট্ট হোটেল টা থেকে কিছু খেয়ে আসি। আসার সময় হোটেল খোলাই ছিলো, এখনো থাকার কথা।
#
বাসার গেটে তালা মেরে আমি হোটেলের দিকে হাটা ধরলাম। খুব বেশি দূর না।আমার বাসা থেকে এক মিনিটের পথ।কিন্তু একটা মোড় থাকায় দোকান খোলা আছে কিনা ঠিক বুঝা গেল না। আমি হাটা ধরলাম।
কিন্তু আজ কেন জানি,রাস্তাঘাট সব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ছেলে পেলে কাউকে দেখছি না।ব্যাপার কি? মনে মনে ভাবলাম।হয়ত আজ একটু ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া তাই কেউ বাহিরে নেই।
রাতও অবশ্য কম হয়নি।এখন রাত ১২ টা ১৩ বাজে।তাই স্বাভাবিক ভাবেই রাস্তা সুনসান হওয়ার কথা। এবং তাই হয়েছে।
এদিকে রাস্তার মোড়ের কাছে আসতে না আসতেই রোড লাইট হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেল! দূর কারেন্ট টাও গেল বোধ হয়।
চার পাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে গেছে।কোথায় পা ফেলছি ঠিক বুঝতে পারলাম না।কিছুক্ষন পর চোখ আপনা আপনি আধার সয়ে নিলো।এখন বেশ দেখা যাচ্ছে। মোড় টা পার হতেই দেখলাম, মাহবুবের হোটেল বন্ধ। ধুর! এটা একটা কাম হলো!
এদিকে পেটে যেন রাক্ষস ঢুকেছে।খুব ক্ষুধা পাচ্ছে।যে করেই হোক কিছু খেতেই হবে।তবে এত রাতে আর রান্নার ঝামেলা করতে চাই না।
মাহবুবের দোকানের সামনে দাড়িয়ে ভাবছি,কি করা যায়? কই যাই?
এমন সময় হঠাৎ তিতুমীর হল থেকে একটা চিৎকার শোনা গেল।আমি আসে পাশে কাউকে দেখলাম না। একটু সামনে এগিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলাম ঘটনা কি! যদিও মনের মধ্যে একটা দুরুদুরু ভাব রয়েছে তবুও এগিয়ে গেলাম।
বলা যায় না,এমনও তো হতে পারে যে,কেউ হয়ত কাউকে মারছে কিংবা এরকম কোন কিছু!!
আওয়াজ লক্ষ্য করে সামনের দিকে একটু এগুতেই হলের তিনতলার একটা জানালা ধপাস করে মাটিতে আছড়ে পড়লো। আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম পূর্বের রুমটার দুইটা জানালার মধ্যে একটা জানালা মাটিতে পড়েছে।আর অন্যটা ঝুলছে!
আমি আর ওখানে দেরী করলাম না। তাড়াতাড়ি বাসার দিকে হাটা ধরলাম।আর বাসায় গিয়ে পাশের মেসের কাউকে ডেকে নিয়ে যাবো এইটাই স্থির করলাম।
বলতে গেলে একটু দৌড়েই "নামহীনের" সামনে এলাম।মেসের দরজায় টোকা দেব কিন্তু কোথা থেকে যেন একটা কালো বিড়াল এসে পথ আটকে ধরলো। আমি এগুতে চাইলেই বিড়ালটা আমার দু'পায়ের মধ্যে আসতে চাইছে।কিন্তু আমি জানি,
রাতের বেলায় দু'পায়ের ফাক দিয়ে বিড়াল যাওয়া ভালো লক্ষন না। এতে মৃত্যুও নাকি হয়। এদিকে ভয়ে আমার আত্মারাম খাঁচা ছাড়া। আমি যে চিৎকার করবো  তাও করতে পারছি না।কেউ যেন আমার কন্ঠ রোধ করে রেখেছে। গলা থেকে যে আওয়াজ বের হচ্ছে তা অন্য কেউ তো দূরের কথা  নিজেই শুনতে পাচ্ছি না।
আমার সারা গা থরথর করে কাঁপছে।ঘেমে অস্থির হয়ে যাচ্ছি,যেন এই মাত্র বৃষ্টি হয়েছে আর আমি সেই বৃষ্টিতে ভিজছি।
বিড়ালটা কিছুতে পথ ছাড়ছে না। বরং সুযোগ পেলে যেন আমার কন্ঠনালী ছিড়ে নেয়। বারবার দাঁত বের করে আমার দিকে দৌড়ে আসছে,আর আমি হাত পা ছুড়ে লাত্থি দিচ্ছি।কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
হাত ঘড়িতে ১টা বাজার এলার্ম হলো। আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। প্রচুর পানি তৃষ্ণা লেগেছে। এদিকে এই নির্জন পথে আমি একা অসহায় হয়ে আছি।বুক ফেটে চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছি না।
নিজের জানা যত দোয়া দরুদ ছিল, সব একে একে শেষ করেছি প্রায়।এবার চোখ বন্ধ করে জোড়ে করে আল্লাহকে ডাকলাম!
হে আল্লাহ, আমাকে রক্ষা করো।
তারপর চোখ খুলতেই দেখি সামনে কিছু নেই।
ঘরের এনার্জি বালবটা জ্বলছে। মাথার উপর স্ববেগে সিলিং  ফ্যানটা বনবন করে ঘুরছে।কিন্তু আমি ঘেমে অস্থির।পিঠের নিচে বিছানা ভিজে চুপসে গেছে।আর হার্ট বিট এতটাই দ্রুত ও জোড়ে জোড়ে হচ্ছে যে,নিজেই নিজের হার্ট বিট শুনতে পাচ্ছি।
হাত বাড়িয়ে টেবিলের উপর থেকে জগ ভর্তি পানি ঢকঢক করে গিলে খেলাম।
যাক বাবা, বাঁচলাম!!!
কিন্তু মোড়টা এখনো পাচ্ছি না কেন?
ঘরের দরজা জানালা লাগিয়ে শুয়ে আছি।
Nilkanto( নীলকান্ত)

মঙ্গলবার, ২৬ মে, ২০১৫

  • ২:১৭:০০ PM

নায়িকা ও আমি নীলকান্তঃ ১
#১
গল্পের নায়িকাকে বারবার ফ্লাশব্যকে যেতে দেখে শুধালাম,
" তা আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি? "
নায়িকা উত্তরে বললেন,"যখন আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি, তখন ভাবতাম ডাক্তার হবো। তারপর আরেকটু বড় হয়ে শিক্ষিকা হবার শখ।"
এবার আমি জোড় করে তাকে বর্তমানে টেনে আনলাম,"ওহ হো,একটা কথা বলতে তো ভুলেই গেছি! "
নায়িকা উচ্ছাসিত কন্ঠে বললেন,"কি?  কি? "
"না, মানে আপনার হাসব্যান্ড কই থাকেন?" একটু নীচু স্বরে বললাম।
এবার নায়িকা তার নিজের আপাদমস্তক একবার চোখ বুলিয়ে বললেন, "আমার বয়স কি খুব বেশি মনে হয়? "
আমি বললাম, "ছি ছি,তা কেন! আপনাকে দেখে কেউ বুঝতেই পারবেনা আপনার বিয়ে হয়েছে? "
এবার নায়িকা কিছুটা লাজুক হেসে বললেন," আপনার যে কথা! আমার তো আসলেই বিয়ে হয়নি! "
মনে মনে ভাবলাম , তা তো বটেই। বিয়ে হবে কি করে! যার পাষ্টটা এত রোমাঞ্চকর, তার বিয়েটা একটু দেরীতে হওয়াটাই স্বাভাবিক। তা না হলে এত মধুর মধুর স্মৃতির জন্ম হত কোথা থেকে!
ভেতরের ভাবটা জোর করে চেপে রেখে অতি কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,"তাই নাকি? বিশ্বাসই করতে পারছি না। আমি ভাবতেও পারিনি আমার ধারনা টা মিলে যাবে! আমি মনে মনে সেটাই ভাবছিলাম বটে।"
আমার অতি উৎসাহ দেখে নায়িকা বেশ খুশিই হলেন।লাজুক মুখটা একটু নীচু করে,  নিজের বাম হাতের আঙুলের নখ দাঁতের নীচে দিয়ে হেসে হেসে বললেন, "জানেন, এই গত কয়দিন আগেও বিয়ের প্রস্তাব এসেছিলো। প্রায় প্রতিদিনই আসে।আমিই নাকচ করে দেই।"
আমি কৃত্রিম কৌতুহলে জিজ্ঞাস করলাম, "কেন কেন? "
"এই ঠিক মত ছেলে পাইনা তাই। কেউ কেরানীর চাকুরী করে,কেউ দপ্তরি,কারো আবার বউ মারা গেছে!
আপনিই বলেন,এদের সাথে আমার কি যায়? " নায়িকা কিছুটা অভিমান নিয়ে বললেন।
আমি বললাম, "নাহ! কিছুতেই না।এসব লোকজন আপনাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার সাহস পায় কি করে! ছি ছি!  আপনি কি এতটাই ফেলনা হয়ে গেছেন নাকি?
'  তা ম্যাডাম, আপনার কি ধরনের ছেলে পছন্দ? "
এবার নায়িকার মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। লজ্জাবনত মুখে লাজুক হেসে বললেন,"এই আপনার মত।স্মার্ট, লম্বা,সুন্দর দেখতে,স্বাস্থ্য ভালো, সুন্দর করে কথা বলতে পারে এমন কাউকে।"
এতক্ষনে নায়িকা যে লজ্জা পাচ্ছিলেন তার চেয়ে দশগুণ বেশি লজ্জা পেলাম আমি। মনে মনে বললাম,বলে কি রে!
নায়িকার কথা তখনো শেষ হয়নি।তিনি কথার সাথে আরো যোগ করলেন, "আপনার মত শ্যামলা হলেও চলবে।জানেন,আপনাকে না অপূর্বর মত লাগে! "
লজ্জা পাওয়ার আরো কিছু বাকি ছিল ঠিক ভাবিনি।শেষের কথাতে আরো বেশিই লজ্জা পেলাম। বলে কি?
কোথাকার কি,পান্তাভাতে ঘি!  কই অপূর্ব আর কই নীলকান্ত!
তবে এই তুলনা যে প্রথম শুনছি ঠিক তা না।এর আগে কমছে কম হাজার জন একই কথা বলেছেন।যদিও আয়নার সামনে দাড়ালে ঠিক বিশ্বাস হয়না, আর মিলাতেও পারি না।
যাই হোক,
যে পাঞ্চগুলো এতক্ষন আমি নায়িকাকে দিচ্ছিলাম,নায়িকা তা যে এভাবে ফেরত দেবেন তা ভাবতে এবং বুঝে উঠতে একটু সময় লেগে গেলো।
আমি নায়িকাকে উদ্দেশ্য করে বললাম, "কি যে বলেন আপনি! কোথায় আমি আর কোথায় অপূর্ব! আর আপনার মত মেয়ে আমার মত ছেলেকে পছন্দ করবেন কেন? আপনার আরো ভালো ছেলের সাথে বিয়ে হবে,দেখবেন।"
নায়িকা এবার একটু নড়েচড়ে বসলেন।কি যেন বলতে চেয়েও বললেন না। এদিকে আমি কোন মত এই স্থান ত্যাগ করবার অভিপ্রায়ে কাঁচুমাচু করছি।বারবার রিষ্ট ওয়াচটার দিকে তাকাচ্ছি আর ভাবছি, কি বলে এখান থেকে উঠা যায়!  সময়ও কম হলো না,সাড়ে পাঁচটা মত বাজে। আমি রিষ্ট ওয়াচ থেকে মুখটা তুলে নায়িকার মুখটা ওয়াচ করবো বলে যেই না তাকিয়েছি ওমনি অবাক হয়ে দেখলাম, একি! নায়িকা যে কাঁদছেন!!
কিন্তু কেন, তা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। আমি তাকাতেই তিনি তার উড়নার আচল দিয়ে চোখ মুছলেন। কিছুটা বিব্রত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,
"ম্যাডাম, আমি কি কোনভাবে আপনাকে কষ্ট দিয়েছি? প্লিজ নিজের অজান্তে কোন ভুল করলে ক্ষমা করবেন। "
এবার নায়িকা তার চোখের জলে ভেজা আচলটা হাতের আঙুলে জড়িয়ে আবেগাপ্লুত কন্ঠে বললেন,
"এত দিন অনেক মানুষের সাথে কথা বলেছি,কিন্তু কেউ আপনার মত করে আমার সাথে কথা বলেনি। সবাই আমার দূর্বলতার সুযোগ খুঁজেছে। একমাত্র আপনার সাথে কথা বলে আজ যত ভালো লাগলো, তা আমি কোনদিন ভুলবো না। গত দুই ঘন্টা আমার কাছে আজীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে।"
নায়িকা আর কিছু বললেন না।কেমন যেন চুপসে গেলেন।এদিকে আমার নিজের কাছে নিজেই খুব বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ে গেলাম। একজন মানুষ তার অতীতের দুঃখগুলো আমার সাথে শেয়ার করছিলেন কিন্তু আমি? আমি স্বার্থপরের মত তার কথা গুলোকে নিছক বাজে অতীত ভেবে কিভাবেই না অগ্রাহ্য করেছি!  তারপর আবার এখান থেকে পালানোর জন্য পথ খুঁজছি। ছি ছি! আমি এতটা স্বার্থপর??
নায়িকাও নীরব,আমিও নীরব। ড্রয়িং রুমের সিলিং ফ্যানের শ শ শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। বেশ কিছুক্ষন এভাবে যাবার পর নায়িকাই প্রথমে কথা পারলেন,
"নীল,আজ আপনি আমার বাসায় ডিনার করে যান।ফ্রিজে মাংশ আছে আর আমি ভালো বিরিয়ানি করতে পারি।আপনার অনেক ভালো লাগবে।"
আমি স্বাভাবিক ভদ্রতা বশত বললাম,না না।তার দরকার নেই।আজ আপনার সাথে ডিনার করতে পারছি না।অন্য কোনদিন নিশ্চয়ই করবো।
আজ যে আমাকে উঠতে হচ্ছে!  প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এলো। "
নায়িকা এবার ধরা গলায় বললেন, "হোক না! আজ ডিনার টা করে যান।আর কোনদিন আসবেন কি না, তা বলা যায় না।
অন্তত আজকে,প্লিজ।"
একবার ভাবছি,অনুরোধ টা রাখি।আবার মনে হচ্ছে,নাহ! আজ আর না। শেষপর্যন্ত ভাবনার দোলাচালে ২য় সিদ্ধান্তটাই স্থির করলাম।
উঠে দাঁড়িয়ে নায়িকাকে বললাম, আজ আমাকে উঠতেই হচ্ছে।সন্ধ্যার পরে বিশেষ একটা কাজ আছে। প্লিজ মন খারাপ করবেন না।।
নায়িকা এবার দাবির সুরে বললেন,"কাজটা কি খুব জরুরী? "
বললাম,"হ্যা।বেশ জরুরী। "
নায়িকা বললেন, "ঠিক আছে,খুব জরুরী কাজ থাকলে যান।কিন্তু কথা দিতে হবে, আরেকদিন আসবেন।"
আমি মুচকি হেসে মেইন দরজার সামনে এসে দাঁড়ালাম। বললাম,
যদি সৃষ্টিকর্তা আবার কখনো সুযোগ দেন,তবে অবশ্যই আসবো।
নায়িকা আমাকে মূল রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে দিতে বললেন, "অবশ্যই দেবেন।আর দিতেই হবে। 
আপনার সাথে ২য় বার দেখা না হওয়া পর্যন্ত আমি মরতে চাই না।"
কিছুটা অপ্রতিভ হয়ে নায়িকার মুখের দিকে তাকালাম। তার চোখে ছলছল জল,সকরুণ আহবান। সেখানে কোন কৃত্রিমতা নেই।না আছে অন্য কোন কিছু। আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। একটা খালি রিকশা আসতেই দ্রুত উঠে পড়লাম।একবার পেছন ফিরে তাকিয়ে বললাম,"ভালো থাকবেন।"
Nilkanto( নীলকান্ত)

শনিবার, ২৩ মে, ২০১৫

  • ১০:৩৫:০০ PM

মিস ইউ  -পত্র ৫


রাত গভীর থেকে আরো গভীর হয়।সারাদিনের ক্লান্তি শেষে দু'চোখের পাতা  বুঁজে আসে আলতোভাবে ।স্বপ্নগুলো সাত দিগন্ত ছুঁয়ে উড়ে এসে বাসা বাধে ঘুমের রাজ্যে।তারপর শুরু হয় লাল নীল স্বপ্নের ঘুড়ি উৎসব।

আজকের স্বপ্নে তুমি ছিলে আমার আকাশের নীল ঘুড়িটা, আর আমি সেই উড়তে থাকা গাংচিল। দু'জনে মিলে এক আকাশ স্বপ্ন বুনেছি মেঘের সাথে ভেসে ভেসে।কাল বৈশাখির কালো মেঘকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে উড়তে উড়তে দেখেছি দিগন্তের লাল আভা । বৃষ্টিতে ভিজে যাবে বলে আমার ডানা দিয়ে আড়াল করে রেখেছি তোমাকে। তারপর, একটা গল্প সাজিয়েছি তুমি আর আমি।আমাদের উড়ে চলার গল্প,বাসা বাঁধার গল্প,রঙিন ছাদের গল্প,কিচিরমিচির অবুঝ কথাগুলোর গল্প,আমাদের ভালোবাসার গল্প।

#নীলকান্ত
  • ১০:৩০:০০ PM
আই মিস ইউ-পত্র ৪

প্রেয়সী,
অন্য কোন দিন হলে হয়ত এতক্ষনে তোমার হাতের রান্না খেতে চাইতাম। সেই ঝাল "পাটি সাপ্টা" কিংবা আমার অনভিজ্ঞ হাতে তৈরি  পাটি সাপ্টার নামে "ডিমাটা ভাজা"।
কিন্ত তা আজ শুধু কল্পনাতেই মিশে থাকছে কিংবা অধরা স্মৃতির এলবামে কিছু সুখস্মৃতির হাতছানি হয়ে।
তবে কি সেই দিন আজ হারিয়ে গেছে খুব দুরে কোথাও? কই,এইতো সেদিনের কথা;মাত্র পনেরশত শতাব্দী আগের। যখন তুমি আমি এক ছিলাম।দশ হাজার বিশ শতাব্দী ধরে ভালোবাসার বর্ষনে সিক্ত হয়েছিলো আমাদের প্রতিটি ক্ষণ, শতাব্দীর উষ্ণতায় জন্মেছিলো স্বপ্নের চারাগাছ। মান-অভিমানের আলিঙ্গনে লতানো সবুজ কুঁড়ি।
এই তো, মাত্র পনেরশত বছর আগের কথা।

আজ পনেরশত বছর পর তুমি আমি গৃহহারা। স্বপ্নের চারাগাছ গুলো গ্রীষ্মের দাবদাহে শুকিয়ে গেছে,মান-অভিমানের লতানো সবুজ কুঁড়িতে আজ ঝড়ে পরে নীরবতা।
বড় কষ্টে আছি আমি।খুব মিস করছি তোমাকে।
হয়ত,আরো চল্লিশ হাজার শতাব্দী এভাবেই থাকতে হবে তোমাকে আমাকে।
তবে কি ভুলে যাবে আমায়??
ভুলে যাবে গত দশ হাজার ২০শতাব্দী??

#নীলকান্ত
  • ১০:২৪:০০ PM

 আত্মাভিমান 


বড্ড কষ্ট হয় যখন, বর্তমান আমি কোন অতীতের উপর রিপ্লেসড।আর অতি অল্প মাত্রার কম্পনেও যখন অতীতের টেকটেনিক প্লেট স্থান লাভ করে বর্তমানের উপরে। কিংবা, ট্র‍্যাশক্যানে ফেলে দেয়া অতীতকে খুঁজে খুঁজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া হয় ঝকঝকে বর্তমানে! সত্যি কষ্টকর!

যে পরিস্কার আকাশে শুভ্র স্বপ্নের ভেলা ভেসে চলে মৃদু হাওয়ায়, ঠিক সেই আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা তুমুল বারি বর্ষায়। যে উতপ্ত সূর্য, কাকফাটা রোদ্রুর সহ পশ্চিমা দিগন্তে অস্ত যায়,পূর্ণিমার রুপালি জোসনায় স্বপ্নের জাল বুনতে, সেই রুপোলি জোসনা ঢেকে যায় অমবস্যার ঘুটঘুটে অন্ধকারে।
আর এভাবেই সব শেষ হয়ে যায়।সব কিছু।একটা স্বপ্ন,একটা ঘর,একটা হৃদয় কিংবা একটা জীবন।।

রাতের আঁধারে যেন হৃদয়ে আঁধার না নামে!
রাতের আঁধার কাটলে দিনের আলো ফুটে উঠে ঠিকই কিন্তু হৃদয়ে যদি আঁধার নামে তারপর আর কোন আলোই সেই আঁধার দূর করতে পারে না।

রবিবার, ১০ মে, ২০১৫

  • ৪:২৫:০০ AM
ধূর্ত শিয়ালের দিনের আলোতে কোন ঠাই নাই,
রাতের আধারেই তার যত হুক্কা-হুয়া!
যখন বাতি নিভে যায়,
অঘোর ঘুমে স্বপ্ন দেখি তুমি,আমি আমরা।
রাতের নিস্তব্ধতা তখন থর থর করে কেঁপে উঠে,
ঘুম পাড়ানি মা তার শিশুকে ঘুম পাড়ায়,
শিয়ালের ভয় দেখিয়ে ;
"আমার সোনা ঘুমায় রে,ময়না ঘুমায়,লক্ষী ঘুমায়। "
"ওই যে, আইলো, আইলো -
শিয়াল আইলো।
ও শিয়াল,ধর! "
কিন্তু আর কতদিন,
এভাবে রাতের আধারে লুকিয়ে থাকা?
শিয়ালের ভয়ে রাতের আঁধারে চুপসে থাকা,
আর কতকাল?
আমি সেদিনের কথা ভাবতে চাই না,
যেদিন প্রতিবাদের তীক্ষ্ণ শব্দগুলো লিখা রবে
জাদুঘরের সফেদ দেয়ালে,
কাঁচ ঘেরা বাক্সের আড়ালে!
আমি প্রবাহিত রক্তের প্রতিটি কণিকায়-
তেজোদৃপ্ত প্রতিবাদ চাই।
প্রতিটি ধমনী টানটান করা হুংকার,আর-
কোষে কোষে সত্যের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ।
আমি চাই,
এবার রাতের আধার ফুঁড়ে
প্রতিবাদের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পরুক আকাশে।
দিনের আলো ফুটে উঠুক
ঘুটঘুটে অমবস্যার রাতের আধারে!
আমি চাই,
ছয়মাসের বাচ্চা শিশুর কান্নার আওয়াজ
সাইরেনের মত প্রকম্পিত করুক,
রাতের নিস্তব্ধতা।
প্রতিটি ঘরে জ্বেলে উঠুক,
সত্যের;প্রতিবাদের ;নিয়ন বাতি,
জেগে উঠি আমি,তুমি -আমরা।।
#নীলকান্ত
১০/০৫/২০১৫
04 hundreds :14 hours

মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০১৫

  • ৬:৪৬:০০ AM
প্রিয়া,
খুব ইচ্ছে করছিলো, বাঁশি বাজাই।গলা ছেড়ে ডেকে উঠি তোমাকে। বিরহী হৃদয়ের অব্যক্ত আর্তনাদ গুলি ভাসিয়ে দেই বাতাসের তরঙ্গে।
সুরের মূর্ছনায় তোমার তন্দ্রালু আখি পাতে স্বপ্নের বুনে দেই জাল।
কিন্তু ইট-পাথরের চার দেয়ালের মাঝে আমার বাঁশির সুর তোমার কান অবধি কি পৌছবে?
জানিনা।
শহুরে দালান কোঠায় হয়ত প্রতিধ্বনিত হয়ে সে আর্তনাদ  ফিরে ফিরে আসবে আমারই কাছে।স্বপ্নলোক থেকে আছড়ে পড়বে হৃদয় পোড়া কয়লা গুলি।অথবা বাতাসের বিপরীতায়ন স্বপ্নপোড়া ছাইগুলোতে ঢেকে যাবে সুর।
রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে মর্মভেদী আর্ত-চিৎকারে আকাশের তারাগুলো খসে পড়বে এক এক করে।চাঁদের বুড়িটা তার চড়কা ছেড়ে উঁকি মেরে দেখবে হৃদয়ের বিরহের চিতা জ্বলছে দাউ দাউ করে!
শুধু তুমিই দেখবে না,শুনবে না কোন কিছু।জানালার ফাঁক গলে শেষ প্রহরের হিমেল হাওয়া লাগতেই আলতো করে টেনে নেবে গায়ের কাঁথা।
তারপর আবারো সেই অঘোর ঘুম।পবিত্র-নিস্পাপ চেহারা,টোল পড়া গালে মৃদু হাসি।
আর আমি?
বাঁশির সুর খুঁজে যাব হন্যে হয়ে। যে সুর তোমার কানে পৌঁছাতে পারে! ইট-পাথরের দেয়াল ভেদ করে তোমার ঘুম ভাঙাতে পারে, তেমন সুর।
#নীলকান্ত
৫/৫/১৫ ০২:০৩ এএম
  • ৬:৪২:০০ AM
আই মিস ইউ (পত্র-২)
প্রেয়সী,
হৃদয়ের স্পন্দন অনুভব না করলে হৃদয়ের অনুভূতি বোঝা যায় কিনা জানিনা।আর।, আমার মতে সেই স্পন্দন অনুভব করতে হলে দুটি হৃদয়ের উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়া চাই দুজনার মাঝে।
কিন্তু দেখো,
তুমি বলেছো, প্রতিদিন তোমাকে একটা পত্র লিখা চাইই চাই।কিন্তু মোবাইলের কী-প্যাডে কি আর হৃদয়ের অনুভূতি লিখা যায়? যায় না।
হয়ত কাগজ-কলমে লিখলে কিছুটা বোঝানো যেত। কিংবা বুঝে নিতাম বর্ণের প্রতিটি টানে।হয়ত দু'ফোটা বিরহী চোখের জলে অনুভূতি লেপ্টে থাকত প্রতিটি লাইনে।
কিন্তু , মোবাইল ইন্টারনেট আর এসএমএস এর যুগে তোমার কিংবা আমার  সে অনুভূতি গুমরে মরে মোবাইল স্ক্রীনে।না তুমি অনুভব কর,না করতে পারি আমি।ব্যকুল হৃদয়ে না পাওয়ার আর্তনাদ বেদনার বালুচরে এসে জমা হয়।তারপর কোন ঝড় বাতাস কিংবা উত্তাল ঢেউয়ে মিশে যায় সব অথবা একাকার হয়ে যায় গুমোট আধারের বুকে। শুধু পড়ে থাকে সেই সব দিনগুলি , সেই সব সুখের অনুভূতি যা তুমি আমি দু'জনে মিলে কোন এক সন্ধ্যায় অনুভব করেছি একান্তভাবে!
আজও সেরকম এক সন্ধ্যা এসেছিলো।ছাদে দাড়াতেই বুক জুড়িয়েছিল একটানা বয়ে যাওয়া সেই রকম বাতাসে।অনুভূতির পাতা হাতড়ে খুঁজে পেয়েছিলাম, তোমার আমার সেইসব কিছুক্ষন। শুধু তুমি ছিলে না আজ,সেদিনের মত।তাই কেউ আজ আধারের ভয়ে মুখ গুজেনি বুকের ভেতর। বড্ড একা ছিল সেই ক্ষণ। 
অবশেষে অনুভূতিকে তোমার কাছে পৌছে দেয়ার প্রানান্তর চেষ্টা। কি জানি, তুমি সেই অনুভূতি অনুভব করতে পারলে কি না! যদি না পারো তবে,আধার ঘরে খোলা জানালায় দাড়িয়ে এক বুক বাতাস নাও,হয়ত সে বাতাসে আমার অনুভূতির গন্ধ পাবে।আর ঘুমরে মরা অনুভুতি গুলো খুঁজে পাবে তার ঠিকানা!
শেষ অবধি, তুমি তাকে আর সে তোমাকে খুঁজে পেলে জানিও।অপেক্ষায় রইলাম।
ইতি
#নীলকান্ত

শুক্রবার, ১ মে, ২০১৫

  • ১১:০৫:০০ PM
বঙ্গ মাতা,
পুঁজ জমা তোর শরীরে আজ
নোংরা রাজনীতির বিষফোঁড়া!
ভেবে দেখ একবার,
তীব্র টাটানি আর দূর্গন্ধে ক্যামনে থাকে
তোর আবাল ছেলেরা।
হরতাল, অবরোধ আর
জ্বলতে থাকা শরীরে গন্ধ পেট্রোলের,
বদ্ধ ব্যালট বাক্সে বন্দী
পঁচাগলা লাশ অধিকারের।
অতঃপর
সত্যের উপর মিথ্যার প্রলেপ দেয়া
অবিরল কথার কাদা ছুড়াছুঁড়ি।
হরতালে অধিকারের পেটে লাথি মারা,
ঝলসানো চামড়ার তোর সন্তানের আহাজারি,
বধির মা তুই,
শুনিস না কিছু তা;
বোবা হয়ে গেছিস,তাই
বলিস না কোন কথা।
তারপরেও
বড় সৌভাগ্যবতী মা তুই।
জন্ম দিয়েছিস কিছু আজন্ম পাপ,
চুপিসারে।
ব্যাথায় কুকড়ে উঠিস,তবু
চোখ মুছিস লুকিয়ে
রাজনীতির ঘুটঘুটে অন্ধকারে!!
#নীলকান্ত
Writer information NILKANTO