:::: MENU ::::
  • slider image 1

    Take my hand, take my whole life too.

  • slider image 2

    I never want to live without you

  • slider image 3

    I am who I am because of you.

শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

  • ১২:৩০:০০ PM
১#
আমার এক পুরোনো ছাত্রী।ও যখন ইন্টারমিডিয়েট পড়ত তখন পড়াতাম।গত তিনদিন আগে হঠাৎ করে রাস্তায় দেখা।
বলল,"স্যার,কেমন আছেন? "
আমি তো পুরাই হব্ব তব্ব লেগে গেছি।কিরে এত বড় মেয়ে আমাকে স্যার বলে! কে এইটা!
বললাম,ভালো আছি।
বলেই পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছি।মেয়েটি আবার বলল,
"স্যার,আমাকে চিনতে পারেন নি? "
কি বিপদ! এখন কি বলি? বললাম, তোমার নামটা ঠিক মনে হচ্ছে না! কি যেন নাম তোমার?
বলল, সেতু।স্যার,আপনার কাছে দুই বছর পড়লাম আর ভুলে গেছেন?
আমি বললাম, না ভুলি নাই,আসলে নামটা মনে পড়ছিল না।তা তুমি কি কর এখন?
-অনার্স ২য় বর্ষে এখন।
কোথায় আছো?
-রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আচ্ছা,তাই না কি? তো ভালো তো।ভেরী গুড।
তোমার বাসা তো আশে পাশেই না?
-হ্যা স্যার। স্যার, একটা কথা বলব?
হ্যা বল।কি বলবা?
- স্যার, আপনি একদিন আমাদের বাসায় আসেন না, প্লিজ।আপনাকে তো কোনদিন বাসায় নিতে পারিনি।অন্তত একদিন আসেন প্লিজ।
আমি বললাম, দেখো, আসলে কারো বাসায় যেতে আমার ভালো লাগে না।আচ্ছা, তারপরেও চেষ্টা করব।
নিজের কাছে নিজেকে যেন ৪০ বছরের চশমা পড়া টিচার টিচার মনে হচ্ছিল তখন।অত্যন্ত গম্ভীর। জ্ঞানী জ্ঞানী। হা হা হা।।
এবার আমার সেই ছাত্রী আরেকটা আবদার করে বসলো,স্যার, আপনার ফোন নাম্বারটা দেয়া যাবে?আপনার আগের নাম্বারে অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু ঢোকেনি।আপনার রিসেন্ট নাম্বারটা দেন প্লিজ।
আমি বললাম, নাম্বার দিয়ে কি করবা?
[এদিকে নিজের কাছে কিছুটা অস্বস্তিও লাগছে।যতই সে আমার ছাত্রী হোক কিন্তু এই লোকজনের মধ্যে কে কি ভাবছে,কে জানে? আর আমি একেতো কেবল অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ি তার পরে আবার অবিবাহিত। এটা আশে পাশের সবাই খুব ভালো করেই জানে। এ এলাকায় কথা বাড়ানোর আল্লাহ দিলে লোকেরও অভাব নাই।]
যাই হোক মেয়েটি বলল, স্যার,আপনাকে আমার বাসায় আসতেই হবে।আর এই জন্যে নাম্বার নিচ্ছি।যেন আপনি ভুলে যেতে না পারেন।
[এই মেয়ে কি বলে! আমি ভুলে যাব? অবশ্য যেতেও পারি।]
আমি কথা বাড়ালাম না।একে তো ছাত্রী তার উপর পাবলিক প্লেস।এই জায়গা যত দ্রুত ত্যাগ করা যায় ততই ভালো। এরকম অস্বস্তি তে থাকতে হবে না।
নাম্বারটা দিয়ে দিলাম।তারপর আমার জরুরী কাজ আছে বলে চলে আসছি।পেছন থেকে মেয়েটি  মানে সেতু, চিৎকার করে বলছে,"স্যার, আসবেন কিন্তু।আমি ফোন দেব কিন্তু "।
আমি একবার ছোট্ট করে পেছনে তাকিয়ে মাথা ঝাকিয়ে চলে এলাম।
মনে মনে ভাবলাম,"এই মেয়েকে আমি আবার কবে পড়ালাম? মনে তো পড়ছে না। আর সেতু, সেতু সেতু......উমম।
সেতু কে??"
#২
দুইদিন পরের কথা।মানে গত রাতের।হঠাৎ একটা রবি নাম্বার থেকে ফোন এলো।আমি কেবল ঘুমিয়েছি।রাতও সম্ভবত অনেক হয়েছে।বালিশের পাশে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ঘুম ঘুম চোখে ফোন রিসিভ করলাম।
-হ্যালো.....
ও পাশে নীরবতা।
-হ্যালো, কে?
এবার একটু ধমকের শুরে বলে উঠলাম।এবার ওপাশ থেকে খসখস একটা শব্দ এলো।তারপর,
#হ্যালো, স্যার।সরি স্যার।হঠাৎ করে ফোন চলে গেছে।
আমি বললাম, "কে আপনি? "
#স্যার আমি সেতু।
-ওহ আচ্ছা, তা সেতু, কি খবর? এত রাতে ফোন দিছো যে! ঘুমাও নি?
#না স্যার ঘুমাই নি।আর ফোনটা এমনিতেই চলে গেছে।চাপ লেগে।আপনাকে বিরক্ত করার জন্য সরি।
আমি একটু স্বাভাবিক ভদ্রতা দেখিয়ে বললাম, no problem , its all right. ঠিক আছে ঘুমাও তাহলে।
বলেই ফোনটা রাখতে যাচ্ছি।ওমনি ওপাশ থেকে সেতু বলল, স্যার, আপনার কি খুব ঘুম পাচ্ছে? স্যার,
আমি কি আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি?
আমি বললাম, সেতু, ঠিক আছে কাল সকালে।
#না স্যার, এখনি।প্লিজ দুই মিনিট।
-আচ্ছা বলো।
তারপর ও পাশ থেকে একটানা ১ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড পর্যন্ত মোটামুটি দুইশ কথা বলে ফেলল প্রায় এক নিশ্বাসে।
ওর কথা শুনে আমি তো পুরাই বেকুব হয়ে গেলাম।না হ্যা বলার শক্তি আছে না না বলার শক্তি!
মাথায় জ্যাম লেগে গেলো।
কি বলল এসব? 
আমি তো মনের ভুলেও কোনদিন ভাবিনি এসব।আর আজ কিনা, এই মেয়েটি নিজের মুখে সব বলে দিল??
আমি কিছুক্ষন চুপ চাপ থেকে বললাম, ঠিক আছে, সকালে এ বিষয়ে কথা বলব।
।।
#৩
পরেরদিন কোন এক কারনে বেশ সকালেই একবার ঘুম ভেঙে গেলো।সাধারনত এত সকালে আমার ঘুম ভাঙার রেকর্ড নাই বললেই চলে।প্রতিদিন গভীর রাতে ঘুমোতে যাওয়া আর বেলা করে ঘুম থেকে উঠা একরকম রুটিন হয়ে গেছে।
কিন্তু সেদিন এই সকাল সকাল ঘুম ভাঙার কারনটা ঠিক বুঝলাম না।তবে ঘুম ভাঙলেও বিছানা ছেড়ে উঠার মত ইচ্ছে নেই।তাই শুয়ে শুয়ে গান শুনছি।সকালে রবীন্দ্রসংগীত আমার খুব প্রিয়।বিশেষ করে হেমন্তের কন্ঠে।গান শুনছি।এমন সময় মোবাইল টা বেজে উঠলো।আমি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি সেতুর ফোন।
আরে,আমি তো সব ভুলেই গেছিলাম।বিশেষত গত রাতের আচমকা হৃৎকম্প।কিন্তু আবারো মেয়েটার ফোনে সব মনে পড়ে গেলো।ভাবছি,ফোন ধরব কি না!
একবার রিং বেজে থেমে গেলো।আবার রিং হচ্ছে.......
ক্রিং ক্রিং ক্রিং.....
[আসলে পুরোনো টেলিফোনের রিং গুলো আমার খুব ভালো লাগত আর সেই সুবাদে ফোনে সাধারন্ত এই ক্রিং ক্রিং টোন টা দেয়া থাকে।]
এবার একটু বিরক্ত হয়েই ফোনটা রিসিভ করলাম।ও পাশ থেকে একটা ভীত সন্ত্রস্ত সালাম।
-অলাইকুম আসসালাম।হ্যা বলো,সেতু।
#স্যার,কেমন আছেন?
-ভালো আছি।তা কিছু বলবে?
[আমি ভেবেছিলাম, হয়ত মেয়েটি আর রাতের কথা পাড়বে না।কিন্তু নাহ! আমার ধারনায় ভুল ছিল।]
ও পাশ থেকে সেতু বলে চলল,
#স্যার, আমি যা বলেছি সব সত্য।আমি আবেগ থেকে না,সব কিছু ভেবেই বলেছি।প্লিজ স্যার কিছু বলেন।
[আমার মেজাজটা সাত সকালে চরমে উঠার উপক্রম।তারপরেও নিজেকে সংযত করে অত্যান্ত ঠান্ডা ভাবে বললাম,
"সেতু, ভেবেছি এবার তোমার আম্মুর সাথে একটু কথা বলা দরকার।"
এবার কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে আই-গাই করতে করতে ফোন টা কেটে দিল।বুঝলাম ভয় পেয়ে গেছে।পাছে আমি সব ওর মাকে বলে দেই কিনা!
আমি আর ফোন ব্যাক করলাম না।বরং মনে মনে ভাবছি, কি করা যায়?আর সেই সাথে আশা ভঙ্গের কি চিত্র এই মুহূর্তে সেতুর মুখে ফুটে উঠেছে তা যেন স্পষ্টত দেখতে পেলাম।কিন্তু আমি জানি,ও এখনো আবেগের দুনিয়ায় রঙিন চশমার অন্তরালের পৃথিবী দেখেছে কিন্তু বাস্তবতার কষাঘাতে জর্জরিত জীবনের চিত্র উপলব্ধি করেনি।তাই জীবনের পোড় খাওয়া,ছেড়া-ফাটা মানুষ হিসেবে ওকে বুঝানোর একটা ছোট্ট দায়িত্ব আমার উপর যেন রয়েই গেল।দেখি,কোন একদিন ওর বাসায় যাবার দাওয়াতটা কবুল করা যায় কিনা!!!
#নীলকান্ত©
ফ্রমঃ  ছোট গল্প "সেতু"।(১ ২ ও ৩)
www.facebook.com/swopnonil
 
Writer information NILKANTO