নিঃস্বার্থ প্রেম বলে পৃথিবীতে কোন প্রেম নেই।এমনকি প্রেমের ক্লাসিফিকেশনেও নিস্বার্থ প্রেমের অস্তিত্ব নেই।তার মানে হলো,নারী বা পুরুষের প্রেম,খোদার প্রতি বান্দার প্রেম, প্রকৃতির প্রতি মানুষের প্রেম সকল প্রেমেই কোন না কোন স্বার্থ জড়িয়ে আছে।
কিভাবে?
আচ্ছা,তার জন্য শুধু দু' একটা প্রেমের ব্যাখ্যায় যাচ্ছি তাহলেই বাকি সব তথাকথিত নিঃস্বার্থ প্রেমের মাঝে স্বার্থপরতা খুঁজে পেতে কষ্ট হবে না।।
প্রথমত,প্রকৃতি ও মানুষের প্রেমের মধ্যে নজিরবিহীন নিঃস্বার্থ প্রেম দেখা যায়(আপাতদৃষ্টিতে।) । কিন্তু আসলেই কি মানুষ ও প্রকৃতির প্রেমে কোন স্বার্থ জড়িয়ে নেই? অবশ্যই আছে। মানুষ প্রকৃতির সাথে প্রেম করে। ভালবেসে প্রকৃতির পরিচর্যা করে।গাছ লাগায়,বায়ু দূষন,শব্দ দূষন রোধে আইন পাশ করে।মিটিং করে,মিছিল করে, সবই করে।আর যেগুলো করতে পারেনা তাও করার চেষ্টা চালিয়ে যায়।প্রকৃতির প্রতি মানুষের এ প্রেম,"প্রেম নেহি তো কিয়া হ্যায়!" কিন্তু ইডা কি নিঃস্বার্থ প্রেম? অসম্ভব।
মানুষ প্রকৃতিকে ভালবাসে নিজের সুখের জন্য,সৌন্দর্যের জন্য আর বেঁচে থাকার জন্য । প্রকৃতির উপকরণ মানুষের কাজে না আসলে এ প্রেম কখনোই আসতো না।
তারপর আসি খোদার প্রতি মানুষের প্রেম । আরে ভাই,এইডা তো জলের মত ক্লিয়ার! খোদার প্রতি মানুষের ভক্তি বা প্রেম হলো স্বার্থপরতার চরম উদাহরন। খোদাকে ভাল না বাসলে কপালে স্বর্গ জুটবে না,পরকালে শাস্তি পেতে হবে এরূপ ভয়ই হলো খোদার প্রতি মানুষের ভক্তি দেখানোর অন্যতম কারন।তবে মূল কারন হলো, "ডিমান্ড"।
মানে,ও খোদা তুমি আমায় স্বর্গ দাও,দুনিয়ায় ভাল একটা বউ দাও,চাকুরী দাও,রোগ-বালাই হতে মুক্তি দাও,এটা দাও,সেটা দাও, ওটাও দাও । যা আছে সব দাও।
এই চাওয়া গুলো না থাকলে মানুষ কখনো খোদার কথা মনেই করত না।প্রেম তো দূরের কথা। প্রেম বা ভক্তির সাথে যখন বিনিময় যুক্ত থাকে তবে তা,"স্বার্থপরতা নেহি তো অর কিয়া হ্যায়!! "
অতএব, মানুষের প্রেম সর্বদা স্বার্থপর। নিঃস্বার্থপরতা শুধু মাত্র একটা কল্পিত শব্দ ছাড়া কিছুই না!
এবার আসি,নারী পুরুষের নিঃস্বার্থ প্রেমে।নারী ও পুরুষের প্রেম কতটা নিঃস্বার্থ তা বুঝার পূর্বে বুঝতে হবে,
★
কোন নারী বা পুরুষ পরস্পরের প্রেমে পড়ে কোন কোন কারনে?
★
প্রথম দর্শনে প্রেম হয় কি কি দর্শন করে?
★
অতঃপর, প্রেমের চুড়ান্ত লক্ষ্যই বা আসলে কিসে লুকিয়ে থাকে?
↓
উত্তর একটাই, "জৈবিক ও মানসিক শান্তি পাওয়ার ইচ্ছা।"
যখন কোন পুরুষ ও নারী পরস্পরকে দেখে বা পরস্পরের সাথে মিশে এটা অনুভব করে যে,"আমি তার সাথে থাকলে জৈবিক ও মানুষিকভাবে শান্তি পাব" একমাত্র তখনই দুজনার মধ্যে প্রেম জন্মাতে পারে।
আর এর প্রধান লক্ষ্যটা থাকে জৈবিক প্রশান্তি লাভের আশা। জৈবিক প্রশান্তি লাভ না করলে মানুষিক প্রশান্তিই উবে যাবে।তখন ভালবাসা বলেন আর প্রেম বলেন,যাই বলেন বা কেন তা থাকেনা।আবার জৈবিক চাহিদা পূরন হলেও যদি মানুষিক সুখ না পাওয়া যায় সেখানে প্রেম থাকে না । অর্থ্যাৎ "তুমি আমাকে সুখ দাও,বিনিময়ে আমি তোমাকে সুখি করবো" এরকম একটা পরোক্ষ্য বিনিময় চুক্তি জড়িয়ে থাকে নারী -পুরুষের প্রেমে।
সুতরাং প্রেম শব্দটা নিঃস্বার্থ হতে পারে না।
তাই প্রেমে পড়লে যা বলা হয়,
"দেখ,আমি তোমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসি। আমার ভালবাসায় কোন স্বার্থপরতা নেই।"
এটা শুধু কথার কথা। আসলে যে কথাটা বলা হয়না তা হলো, "আমি তোমাকে ভালবাসি কারন আমি স্বার্থপর। "
#নীলকান্ত