:::: MENU ::::
  • slider image 1

    Take my hand, take my whole life too.

  • slider image 2

    I never want to live without you

  • slider image 3

    I am who I am because of you.

শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৬

  • ১২:৪৩:০০ PM






কর্ণেল মিথঃ শেষ রাতের খুন – ১


- এস এম হারুন অর রশিদ


হঠাৎ চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে গেলো।কত বাজে দেখতে দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকালাম। ঘরের মৃদু আলোয় দেয়াল ঘড়ির কাটাটা প্রায় তিনটা ছুই ছুই দেখতে পাচ্ছি।কিন্তু এত রাতে চেঁচামেচি করে কারা?না এখন ফজরের নামাজ শুরু হয়েছে যে লোকজন রাস্তা দিয়ে কথা বলতে বলতে যাবে,না এটা কোন বাজার এলাকা! বরং শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে একটা নির্জন পাঁচতালা বাসার চারতলায় থাকি আমি। আর শহর থেকে এই দূরে এসে থাকাটার একমাত্র কারন হলো , আমার সাধের ঘুমের যেন ব্যাঘাত না ঘটে।কিন্তু এই এত রাতে হঠাৎ চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙায় একটু রাগই হলো। চোখটা সামান্য ডলে বালিশের পাশে রাখা ফোনটা হাতে নিলাম। রাস্তার লোক গুলো কে আচ্ছা মত দু'টো কথা শোনানোর প্রবল ইচ্ছে নিয়ে বারান্দায় এসে হাজির হলাম। কিন্তু যা দেখলাম তাতে কথা শুনানো তো দূরে থাক চোখ চড়কগাছে!

বাসার সামনেই প্রায় গজ পঞ্চাশেক দূরে ডান দিকের ল্যাম্পপোস্টটার নীচে মানুষের জটলা। যেন কিছু একটা ঘিরে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু কি সেটা? দেখার কৌতুহল নিয়ে ছাদে গেলাম।যা দেখলাম তাতে স্বাভাবিক ভাবেই একটা শকড খেলাম বৈ কি।তড়িঘড়ি করে গায়ের জামাটা লাগিয়ে নীচে নেমে গেলাম দেখতে ।ভীরের কাছে যেতেই সবাই সামনে থেকে সরে জায়গা করে দিলো।
গত এগারো বছর ধরে আছি এখানে। এ এলাকায় যে ক'জন মানুষের বাস তারা সবাই আমাকে ভাল করে চিনে। ভীরের দিকে তাকিয়ে বললাম,
"কেউ পুলিশে খবর দিয়েছেন? "
কেউ কিছু বলল না।একজন সামনে এগিয়ে এসে বলল,"স্যার,দশ পনের মিনিট আগে আমি পানি ছাড়ার জন্যি বাহির হইছি। হয়া দেখি এই অবস্থা।
ভয়ে আমি চিৎকার মারলি ওরা সব বাড়ায়ে আসে।"
"এখনো কাউরে কিছু কই নাই স্যার। "

আমি পকেট থেকে সেল ফোনটা হাতে নিয়ে বগুড়া সদরের ওসি নাজমুল সাহেব কে ফোন দিলাম। ও পাশ থেকে ঘুম ঘুম কন্ঠে ফোন রিসিভ করেই সালাম দিলো।
"সালামু আলাইকুম স্যার, এত রাতে? কোন সমস্যা স্যার? "
আমি সংক্ষেপে ঘটনাটা খুলে বললাম। ও পাশ থেকে নাজমুল সাহেব ফোন রাখতে রাখতে বললেন, "স্যার, ১০ মিনিটের মধ্যে চলে আসছি স্যার। "
আমি যদিও জানি, বিশ মিনিটের মধ্যে উনি আসবেন না,তবুও বললাম, "ঠিক আছে চলে আসেন।"

ভীরের কাছে ফিরে সবাইকে কিছুটা দূরে সরে থাকতে বললাম।ইতোমধ্যে লোকজনের সংখ্যাও বেড়ে গেছে।এমতাবস্থায় এভিডেন্স নষ্ট হওয়ার একটা ভয় থাকেই। যেহেতু ওসি সাহেব আসতে খানিকটা দেরী হচ্ছে তাই নিজের মত কিছু তথ্য সংগ্রহ করার জন্য উপস্থিত সকলের একটা ফেস ভিডিও এবং কয়েকটা স্থির চিত্র নিলাম।আর সেই সাথে রাস্তায় পরে থাকা লাশের।এতে ঘটনাস্থলে কারা কারা তাৎক্ষনাত উপস্থিত ছিলো তার একটা বিশ্বস্ত রেকর্ড থাকলো এবং লাশের অবস্থার।

লাশটাকে ভাল ভাবে পর্যবেক্ষণ করলাম।যুবক ছেলে।বয়স কত আর হবে,এই ছাব্বিশ সাতাস । গায়ে হাফ হাতা ব্লু টি শার্ট,পরনে ব্লাক জিন্স প্যান্ট। তবে একটা আভিজাত্য আছে চেহারায় এবং পোশাকে, তা দেখলেই বুঝা যায়।হাতে চেনওয়ালা ঘড়ি,পায়ে এপেক্স এর কেডস।বাম পায়ের চেয়ে ডান পায়ের গোড়ালিতে জুতোর ক্ষয় বেশি। জুতোতে ঘাস ও কাদা লেগে আছে,আর একটা ধানের পাতা। বুঝাই যাচ্ছে মৃত্যুর আগে বেশ খানিকটা ধস্তাধস্তি চলেছে অপরাধীর সাথে।তবে অপরাধী একজন হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। সুপরিকল্পিত মার্ডার এটা। (লাশ খুনের স্পট থেকে দূরে ফেলা হয়েছে)

যাই হোক,বেশ কিছুক্ষণ সময় চলে গেছে।ওসি সাহেবের দশ মিনিট অতবাহিত হয়ে আধা ঘন্টা হলো প্রায়।এখনো তার দেখা নেই।এমনকি তার গাড়ির টিকিটিও দেখতে পাচ্ছি না।

আমি নিজের মত করে লাশের একটা সুরতহাল করলাম নিজের প্রয়োজনের জন্যই।এবার ভীরের দিকে লক্ষ্য করে বললাম,লাশটাকে কেউ চিনে কিনা?
সবাই অস্বীকার করলো। অর্থ্যাৎ কেউই চিনে না।এলাকার হলে অবশ্যই চিনতে পারত।কেননা এই আশে পাশের আধা কিলো মিটার এর মধ্যে মাত্র দু'টি বাড়ি আর একটি দোকান ঘর ছাড়া কিছু নেই।সব মিলিয়ে জনা পঞ্চাশেক লোক থাকে এখানে। তার মধ্যে আমার পাঁচ তলা বাসায় থাকেন ছেলে-বুড়ো-বুড়ি-বউ বাচ্চা সহ মোট জনা ত্রিশ লোক। রাস্তার অপজিটে আজাদ সাহেবের বাসায় জনা পনেরো ষোলজন । আর দু'জন তো সবসময় দোকানেই থাকে,রহমান আর ওর বউ। অতএব, এখানকার বা আশে পাশের কেউ হলে নিশ্চয়ই চিনতে পারত। আর ভীরের মধ্যে যারা আছেন তারা সবাই প্রায় এ পাড়ারই, চার পাঁচ জন ছাড়া।

যাই হোক,
দূরে পুলিশের ভ্যানের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।মানে ওসি সাহেব আসছেন। ইতোমধ্যে তার দশ মনিট,পাঁচ মনিট,আধা ঘন্টা কেটে গেছে।অবশেষে তিনি পৌছলেন।
ভীরের পাশে গাড়ি দাড় করিয়ে আমার সামনে এসে ছালাম
জানালো।
"স্যার,বলেন স্যার "
বললাম, "এখনই কিছু বলছি না,তুমি লাশটাকে আগে দেখো।তারপর যা করার করো ।
ও হ্যা শোন,একটা কথা বলে যাই,
মার্ডার টা কিন্তু অন্য কোথাও হয়েছে।পরে এখানে এসে ফেলে দেয়া হয়েছে। শক্ত খোঁজ খবর নিয়ে কি রিপোর্ট পাও তা কাল সকাল দশটায় আমাকে জানিয়ো।।আমার এখন ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমোতে গেলাম ।
"স্যার, স্যার, আপনি কি করে জানলেন যে অন্য কোথাও মার্ডার করে এখানে এনে ফেলা হয়েছে? "
আমি মৃদু হেসে বললাম কালকে সকালে বলবো। এখন তুমি তোমার কাজ কর।দেখ তোমার তদন্তে কি আশে? পারলে পাশের এলাকাটা একটা চেক করে এসো।"


আর কথা না বলে আমি বাসায় চলে এলাম।অপরাধী কে তা শনাক্ত করার আগে ভিকটিমের পরিচয় জানা আবশ্যক।দেখা যাক কি হয়?
রুমে এসেই সিগারেট টা জ্বালিয়ে যে চিন্তাগুলো মাথায় এলো, তা হল,১। ছেলেটা কে? ২। কেন মার্ডার হলো? ৩। কিভাবে হলো? ৪।কে করল?
থাক,এখন আর ভেবে কাজ নেই।সিগারেটের শেষাংসে আরেকটা টান দিয়ে ফেলে দিলাম।এখন দেয়াল ঘড়ি বলছে প্রায় সারে চারটা বেজে গেছে।তা মানে আমার ঘুম আড়াই ঘন্টা ইন্টারাপ্টেড।তাই বেশ বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়ে পুষিয়ে নিতে হবে।



 


শেষ রাতের খুন – ২







---------------------
শেষ রাতে ঘুমানোর পর যখন ঘুম ভাঙলো তখন ঘড়ির কাটায় ঠিক দশটা। জানালার পর্দা ফুরে সকালের সূর্যটা আমার ঘরের দেয়ালে লুকোচুরি খেলছে।এদিকে রাতের ঘটনা প্রায় ভুলেই গেছিলাম । কিন্তু বাহিরের শোরগোল শুনে মনে পড়ে গেলো।হাত বাড়িয়ে টেলিফোন টা হাতে নিয়ে নীচে দাড়োয়ান কে ফোন করলাম।নাজমুল এসেছিলো কিনা জিজ্ঞাসা করতেই দাড়োয়ান জানালো,"স্যার, ও সাহেব ত এক ঘন্টা আগে এসে বসে আছে। আপনে ঘুমায়া আছেন দেইখ্যা ডাকে নাই।"
মনে মনে বললাম, ভাল করেছে। তারপর ওসি কে ভিতরে পাঠাতে বলে আমি ফ্রেশ হতে গেলাম।

ড্রইং রুমে আসতেই দেখি নাজমুল সাহেব সোফায় বসে কি যেন ভাবছেন । এয়ার কন্ডিশনেও দরদর করে ঘাম ঝড়ছে কপাল বেয়ে ।এক হাতের আঙুলের মধ্যে আরেক হাতের আঙুল দিয়ে কচলাচ্ছেন।এটা নিশ্চিত টেনশনের লক্ষন অথবা প্রচন্ড উত্তেজনা প্রকাশ করছে। বুঝতে বাকি থাকলো না,কিছু একটা গরমিল হয়েছে।এবং প্রচন্ড প্রেশারে আছে সে।
আমি ওকে সম্বোধন করে বললাম, "কি খবর নাজমুল, তারপর সব ঠিক ঠাক আছে তো? "
আমাকে দেখেই দাড়িয়ে সালাম জানালেন।
"কর্ণেল মিথ, ঠিক ঠাক কিছুই নেই।একটু ঝামেলায় পরে গেছি। "
বললাম, "কিসের ঝামেলা? এসব খুন খারাবি তো অহরহ ঘটছে নতুন কি! কেস ফাইল করো তারপর তদন্ত করতে করতে অপরাধী খুঁজে না পেলে ফাইল বন্ধ করে দাও।এ আর এমন কি? "

ওকে বসতে বলে আমিও সামনের সোফায় বসলাম।আমার বাসার কাজের লোকটাকে দু কাপ চা আনতে বলে নিজের সিগারেট টা ধরিয়ে বললাম, "তা বল,কিসের ঝামেলা।"
নাজমুল একটু বিচলিত হয়ে বলল,"স্যার, যে ছেলেটা খুন হয়েছে সে বিখ্যাত ব্যবসায়ী রহমান ট্রেডার্সের মালিক আব্দুর রহমানের একমাত্র ছেলে। শহরের জলেশ্বরী তলাতেই বাসা। ঢাকায় একটা সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকুরী করে।গতকাল সে বিকেল আনুমানিক পাঁচটায় শেষ বারের মত বাসায় ফোন দেয়।যখন সে ফোন দিয়েছিলো তখন সে শেরপুর পার হয়েছে বলে জানায়।
স্বাভাবিক ভাবেই আধা ঘন্টা থেকে পৌনে এক ঘন্টার মধ্যে বাসায় ফেরার কথা।"
-হুম তারপর।
নাজমুল সাহেব বলতে শুরু করলেন, "কিন্তু সন্ধ্যা সাতটা বেজে গেলেও সে বাড়িতে না আসায় বাড়ির লোকজন চিন্তায় পড়ে যায়।
ওহ, তার আগে বলে নেই ছেলেটার নাম অয়ন।এক পা খানিকটা খোঁড়া। কিন্তু খুঁড়িয়ে হাটলেও বুঝার উপায় নেই"
আমি বললাম, "হুম ডান পা।"
নাজমুল বলে উঠলেন,"স্যার,আপনি কি করে জানলেন? আপনি তো ওকে চিনেনই না।"
এরই মধ্যে কুদ্দুস মিয়া(আমার কাজের লোক) চা নিয়ে হাজির। টেবিলের উপর দু কাপ চা রেখে চলে গেলো।
নাজমুলের হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়ে বললাম,"নাও চা খাও।
ও হ্যা,কি যেন বলছিলে? কি করে জানলাম সে খোঁড়া! হা হা হা।
শোন নাজমুল, সাতাশ বছরের সার্ভিস লাইফের অভিজ্ঞতা থেকে যেটা সবচেয়ে বেশি শিখেছি তা হলো "পর্যবেক্ষণ" করা। আমাদের আর্মিতে তোমাদের মত এসব কেস ফেস নাই বললেই চলে।অর্থ্যাৎ খুন খারাবির কেস আর্মি দেখে না।কিন্তু তবুও আমরা একজন মানুষের পায়ের নখ থেকে চুল পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে তার অতীত ভবিষ্যৎ বলতে পারি।
আর তাছাড়া জানোই তো,আমার রিটায়ারমেন্টের পর বেশ কিছু পুলিশ কেস সলভ করেছি।"
নাজমুল সাহেব কিছুটা নার্ভাসনেস কাটিয়ে উঠেছে ইতোমধ্যে। বলল,"হ্যা স্যার, আপনার কথা তো অনেক শুনেছি।পত্রিকায় আপনার নামও বেড়িয়েছে বহুবার। তবে প্রেসিডেন্ট রোহানীর স্ত্রী হত্যার কেসটা সমাধান করে সারা দেশ আপনাকে চিনে।"

-হা হা হা।আচ্ছা থাক সেসব।
"কথা হচ্ছিলো আমি কি করে জানলাম, ছেলেটা খোঁড়া, এই তো? "আমি প্রসঙ্গে ফিরে এলাম।
-হ্যা স্যার।
তাহলে শোন,"গতকাল ছেলে টার পায়ের জুতো দেখলাম ডান পায়ের গোড়ালিটা বাম পায়ের চেয়ে বেশি ক্ষয়ে গেছে।আর এপেক্স এর যে জুতো সে পড়ে ছিলো তার দাম বর্তমানে প্রায় আটহাজার টাকার চেয়ে একটু বেশি হবে হয়ত। এত দামি জুতো সাধারণ ঘরের ছেলেদের পড়বার কথা নয়।
আর তখনই বুঝেছি ছেলেটা খোঁড়া এবং কোন অভিজাত ঘরের ছেলে।"

নাজমুল সাহেব খানিকটা উৎফুল্ল হয়ে বলল,"রাইট স্যার।একদম ঠিক বলেছেন। "
আমি মুচকি হেসে বললাম,"তারপর বলো,সন্ধ্যার সময় অয়নের ফোনে কি বাড়ির লোকজন ফোন দিয়েছিলো? "
নাজমুল সাহেব ট্রেকে ফিরে গেলেন।"হ্যা স্যার।সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে অয়নের বাবা অয়নকে ফোন দেয়।প্রথমে একবার রিং হলেও পরের বার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।"
-হুম, তারপর?
-"তারপর স্যার, অয়ন সারা রাত বাসায় ফিরে না এলে আব্দুর রহমান সাহেব সকালে পুলিশ স্টেশনে এসে ডায়রী করে।আমি তখন থানায় ছিলাম না।
থানায় এসে ডায়রী করার কথা শুনেই রহমান সাহেব কে আমি ফোন দেই। তখন সকাল সোয়া আটটার কথা।
রহমান সাহেব দশ মিনিটে থানায় এসে হাজির হোন।তারপর আমি তাকে সাথে করে মর্গে নিয়ে গেলে উনি ছেলের লাশ দেখে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠেন। আমি কোন মত শান্তনা দিয়ে উনাকে দুজন কনষ্টবলের সাথে বাসায় পাঠিয়ে দেই।উনি এমনিতেই বয়স্ক লোক তার উপর হার্টের রোগী। ভাবছি,উনার না আবার কিছু হয়ে যায়!! "

নাজমুল সাহেবকে একটু থামিয়ে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, "লাশের সাথে কি কি পাওয়া গেছে?"
"স্যার, লাশের পকেটে মোবাইল ফোন,হাতে ব্র‍্যান্ডের হাত ঘড়ি,মানিব্যাগ, মানিব্যাগের মধ্যে দু'হাজারের মত টাকাও ছিল। তাছাড়া মানিব্যাগে একটা মেয়ের ছবি ছিলো যা ক্রেডিট কার্ডের পেছনে লুকোনো ছিলো।
মনে হচ্ছে না এটা ছিনতাই বা এ ধরনের কোন কেস।"

প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে মুখে নিয়ে ধরাতে ধরাতে বললাম,"সে আমি জানি।এটা ছিনতাই জাতীয় কেস না।সুপরিকল্পিত হত্যা।শুধু তাই নয়,এতে একাধিক ব্যক্তি জড়িত।"

নাজমুল সাহেব কিছুটা অপ্রতিভ হয়ে জিজ্ঞাসা করল,"কিন্তু স্যার,আপনি এতটা শিওর হচ্ছেন কিভাবে? হতে পারে তাকে হত্যা করে তার ল্যাপটপ টা ছিনিয়ে নিয়েছে।কিংবা নগদ আরো অর্থ ছিলো সেগুলো নিয়েছে।মানিব্যাগ টাতে হাত দেয়ার আগেই কোন সমস্যার কারনে পালিয়ে গেছে? কিংবা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে হত্যা করেছে। "
-"এক্সাকটলি তাই।পূর্ব শত্রুতার কারনে হত্যা করা হয়েছে তাকে।এবং সুপরিকল্পিত ভাবে।"আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম।
ও কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, "কিন্তু কিভাবে? "

আমি সিগারেট টাতে শেষ টান দিয়ে এশট্রে তে ফেলতে ফেলতে বললাম,"আচ্ছা, অয়নের পায়ে যে জুতো ছিলো তাতে সবুজ ঘাসের চিহ্ন ছিলো এবং গেঞ্জির ভেতরে যে ধানের পাতা ছিলো সেটা কি দেখেছো? "
নাজমুল মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো, "না।"
আমি বললাম, "ওর জুতোয় ঘাসের রং,কাদা আর বুকের উপর ধানের পাতা বলে দিচ্ছে ওকে এমন কোন জায়গায় খুন করা হয়েছে যেখানে ধান ক্ষেত আছে।এবং অপরাধীর সাথে বেশ কিছুটা ধস্তাধস্তিও হয়েছে।ফলে জুতোয় ঘাসের রং এবং গেঞ্জির সাথে ধানের পাতা আটকে রয়েছে।
যে রাস্তায় ওর লাশ পাওয়া গেছে তার আশে পাশে কি কোথাও ধানের ক্ষেত আছে? নাই।অতএব ওর খুনটা হয়েছে দূরে কোথাও।

এবার বলো, ২৫/২৬ বছরের স্বাস্থবান একটা যুবকের মৃত দেহ একজন মানুষের পক্ষে টেনে আনা এবং রাস্তার উপর ফেলে রাখা কতটুকু সম্ভব?

নাজমুল মাথা ঝাকিয়ে বলল,"নট পসিবল স্যার।আর তাছাড়া কিছু দুরেই মেইন রোড।সেখান দিয়ে সারা রাত অহরহ মানুষ চলে।মানুষের চোখের সামনে দিয়ে অপরাধী একটা মৃত দেহকে টেনে নিয়ে বোকামি করতে যাবে কেন? "

-"ঠিক ধরেছ।তাহলে নিশ্চয়ই খুনে অংশগ্রহণকারী একজন ছিলো না।অবশ্যই একাধিক ব্যক্তি যোগসাজশে খুনটা করেছে।আর যেহেতু একাধিক ব্যক্তির যোগসাজশ আছে এবং বিষয়টা ছিনতাই জনিত না অতএব এটি একটি প্লানড মার্ডার।
What do you think? "

-"You're absolutely right sir. Thank you sir , অন্তত কেসটার ব্যাপারে একটা তথ্য পাওয়া গেলো।কিন্তু খুনের মোটিভ টা কি হতে পারে তা কিছুতেই মাথায় আসছে না।
অয়নের বাবার সাথে কথা বলে যতটুকু জানলাম অয়ন খুব সাদাসিধে ছেলে ছিলো। কম্পিউটার ছাড়া ও কিছুই বুঝতো না। কোন বাজে ছেলেদের সাথে আড্ডাও দিত না। এবং ফ্রেন্ড বলতেও তেমন কেউ ছিলো না।সারা ক্ষন বাসাতেই থাকতো। "

-"খুনের মোটিভ সম্পর্কে পরে জানা যাবে।এত দ্রুত কেস সলভ করলে তো তোমাদের ডিপার্টমেন্ট এর বদনাম হবে! হা হা হা।একটু ধৈর্য্য ধরো।
আপাতত লাশের পোশমর্টেম টা হতে দাও।এবং ওর ফ্যামিলিতে জিজ্ঞাসাবাদ করো।
আর ও হ্যা,অয়নের মানিব্যাগের মধ্যে যে মেয়েটার ছবি ছিলো, সে মেয়ের সম্পর্কে খোঁজ নিতেও ভুলো না কিন্তু।"

দুপুর প্রায় সাড়ে বারোটা বেজে গেছে।সকালে খাওয়া হয়নি এতক্ষন মনেই ছিলো না।কুদ্দুস মিয়া দু তিনবার সামনে এসে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে আবার চলে গেছে।এতক্ষণে বুঝলাম ও হয়ত আমার খাবারের কথা বলতে এসেছিলো। কিন্তু কথা বলায় ব্যস্ত দেখে কিছু বলেনি।আসলে বয়স তো আর কম হলো না,প্রায় তেষট্টি চলছে।এ সময় একটু আধটু ভুলে থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না।কিন্তু আর্মিতে নিয়িমিত পিটি-প্যারেড,ড্রিল করতে করতে শরীর বুড়ো হয়নি এখনো,যতটা কুদ্দুস মিয়া পঁয়তাল্লিশ বছরে হয়েছে।
যাই হোক, আমি দুবার হাত ঘড়ির দিকে তাকাতেই নাজমুল সাহেব বললেন,"স্যার,এখন উঠি তাহলে।অন্য কোন প্রয়োজন হলে আবার আসবো কিন্তু। "
আমি ওর সেন্সে মুগ্ধ।খুব দ্রুত আমার মনের অভিব্যক্তি বুঝে নিয়েছে।এরকম জ্ঞানী লোকদের সবসময় কদর করি আমি।
হাত বাড়িয়ে বললাম,"বেষ্ট অব লাক। "







শেষ রাতের খুনঃ ৩

নাজমুল সাহেব চলে গেলেন।কিন্তু চলে যাবার পর নাজমুল সাহেবকে ব্রেকফাস্ট করতে বলার সৌজন্যতা টুকু না দেখানোয় নিজেই কিছুটা লজ্জিত হলাম।নিশ্চয়ই নাজমুল সাহেবেরও কিছু খাওয়া হয়নি! ধ্যাৎ!
দিনদিন এত বোকা হয়ে যাচ্ছি ভাবতেই পারিনা।
যাই হোক, কুদ্দুস মিয়া ততক্ষণে আবার সামনে চলে এসেছে।
"স্যার, আপনে তো এখনো কিছু খান নাই। ভাত আবার গরম করে টেবিলে দিছি।চলেন খাবেন। "
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, "কুদ্দুস মিয়া,তোমরা খাইছো তো? "
কুদ্দুস মিয়া এক গাল সরল হাসি মুখে নিয়ে বলল,"না স্যার।আপনে না খাইলে খাই ক্যামনে? আপনে যদি না খাইয়া থাকতে পারেন, আমরা পারবো না ক্যান! "
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, "আশ্চর্য! তাই বলে কি না খেয়ে থাকবা? প্রতিদিন এরকম করো নাকি!এত বেলা পর্যন্ত না খেয়ে থাকো? "

কুদ্দুস মিয়া তার সহজাত সরল হাসি মুখে টেনে বলল,"স্যার,আপনে তো প্রতিদিন সকাল সাতটার মধ্যে নাস্তা করেন। আমরাও তাই করি।আপনেক খাওয়াইয়া তারপর খাই। আমরা আপনার ভৃত্য তবুও আপনি যা খান আমরাও তাই খাই,এটা যে কতবড় মেহেরবান তা আপনেক বুঝাইবের পারবো না।"

আমি ওর কথা শুনে তাজ্জব হয়ে গেলাম । এরা কেউই আমি না খেলে খায় না।
আজ প্রায় ত্রিশ বছর ধরে কুদ্দুস মিয়া আমার বাসায় কাজ করে।আমি ওকে ছোট ভাইয়ের মতই দেখি।দেশে বিদেশে যেখানেই যাই এ বাড়ির সমস্ত দায়িত্ব ওর হাতে দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত থাকি। অনেক বেছে বেছে ওর জন্য পাত্রী দেখে বিয়েও দিয়েছিলাম।তাও প্রায় পচিশ বছর হলো। ওর বউও থাকে সাথে।বাচ্চা কাচ্চা নাই, দুজনের সংসার।বাচ্চা হয়না। অনেকবার বলেও ছিলাম, বাচ্চা কাচ্চা দত্তক নিতে।নেয় নাই।
দুজনের একই কথা,"স্যার, আমাদের ছেলে মেয়ে দিয়ে কি হবে! সৌমিক বাবাজীই আমার ছেলের মত । এ বাড়িতে ঢুকে সৌমিক বাবাজিকে দেড় বছরের পেয়েছিলাম। ও থাকতে আমার ছেলে মেয়ের কি দরকার! "

সত্যিই তাই।কুদ্দুস মিয়া আর ওর বউ মালতি সৌমিককে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে। সৌমিকের বয়স যখন কেবল আট তখন আমার স্ত্রী ইহলোক ত্যাগ করে।আমি তখন কেবল মেজর পদে। বিশেষ ক্ষমতায় ন্যাশনাল সিক্রেট সার্ভিসে বদলি হয়েছি । মিরার মৃত্যুর পর সৌমিকের ভবিষ্যৎ এর দিকে তাকিয়ে আমি আর বিয়ে করিনি ।কিন্তু কাজের চাপে বাহিরে বাহিরে থাকতে হত প্রায়শই । তখন কুদ্দুস আর মালতিই আমার সৌমিককে মানুষ করেছে। সৌমিকের স্কুল থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়া,আদব কায়দা সবকিছু শিখিয়েছে ওরা দুজন। আমি ওদের পূর্ণ ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছিলাম,যদি সৌমিক দুষ্টোমি করে তবে শাসন করার।প্রয়োজনে গায়ে হাত তোলার। কিন্তু কখনো তা প্রয়োজন হয়নি।মা হারা সৌমিক এত ভদ্র, নম্র এবং মেধাবী ছিলো যে যেখানেই যেত প্রশংসা কুড়িয়ে আনতো।নিজের ছেলেকে নিয়ে এত বড় গর্বের আর কি হতে পারে! আর সৌমিকও কুদ্দুস চাচা আর মালতি আন্টির জন্য পাগল।
বছর সাতেক আগে সৌমিক কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্কলার্শিপ নিয়ে যখন আমেরিকায় গেলো সেদিন যেন এ বাড়ি এক মৃত বাড়ির মাতম তুলেছিলো। সৌমিকও তার দায়িত্ব, কর্তব্য কখনো ভুলে নি। আমেরিকা গিয়ে ওখান থেকে প্রতি দুদিন অন্তর অন্তর ফোন করে সবার সাথে কথা বলত।আর চাচা-চাচীর সাথে তার কথা বলাই চাইই চাই । এখন পর্যন্ত সে নিয়মের এতটুকু ব্যত্যয় ঘটেনি। দেশে ফিরলে বাড়ির সবার জন্য এটা সেটা নিয়ে এসে ভর্তি করে।এমন ছেলেকে নিয়ে বাবা হিসেবে স্বাভাবিক ভাবেই আমি গর্বিত,শুধু গর্বিত বললে ভুল হবে,ভীষণ গর্বিত।

কিন্তু কুদ্দুস মিয়া যে আমি না খেলে খায় না এটা শুনে খুব খারাপ লাগতে শুরু করলো। ওকে ধোমক দিয়ে বললাম,"আমি খাই বা না খাই, তোমরা কখনো উপোস থাকবে না।
আর যাও,আমি আসিতেছি।"

#

বিকেল তখন পাচটা। নাজমুল সাহেব ফোন করলেন।আমি তখন বারান্দায় বসে চা খাচ্ছি।
ফোন ধরতেই নাজমুল সাহেব সালাম দিয়ে বললেন,
"স্যার, পোশমর্টেম রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। দুপুরেই অয়নের লাশ ওর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
রিপোর্ট বলছে,অয়নের মৃত্যু ছুড়িকাঘাতে হয়নি বরং তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।এবং খুনি পেশাদার বলে মনে হয় না ।পেটে এবং বুকে যে ছুড়ি মারা হয়েছে তাতে মৃত্যু হবার মত ক্ষত হয়নি।বরং মৃত্যু হবার পরে তাকে ছুড়িকাঘাত করা হয়েছে। কিন্তু কোন ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া যায়নি।গামছা জাতীয় কিছু দিয়ে শ্বাসরোধ করা হয়েছে।"
"আর, উপর থেকে প্রচন্ড প্রেশার আসছে স্যার।স্বয়ং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাহেব এ ব্যাপারে ফোন করেছিলেন।উপর মহল আমার উপরেই তদন্তের ভার দিয়েছে।"

আমি বললাম, "তো,পরিবারের সবাইকে জিজ্ঞাসা বাদ করেছো? তারা কি কাউকে সন্দেহ করে? "

নাজমুল সাহেব কিছুটা হতাশ হয়ে বললেন,"হ্যা স্যার,জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা কাউকেই সন্দেহ করে না।এমনকি অয়নের দু একজন যেসব বন্ধু ছিলো তাদের কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কিন্তু তারাও কিছু বলতে পারছে না । আর স্যার,অয়ন আসার দিন ল্যাপটপ নিয়ে আসেনি। ল্যাপটপ তার ঢাকাতেই আছে। এমতাবস্থায়, তদন্ত আগানো খুব মুশকিল। তারপরেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি খুনের মোটিভটা শনাক্ত করার জন্য।"

আমি চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে বললাম,"ওকে, ক্যারি অন। দেখো কি হয়! কোন প্রয়োজন হলে আমাকে বলো।"

নাজমুল সাহেব ধন্যবাদ দিয়ে ফোন টা রেখে দিলেন।
একটু অবাক হওয়ার মত বিষয়। যার কোন শত্রু নাই,তেমন কোন বন্ধুও নাই,যে সারাক্ষণ কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত থাকে তার আবার শত্রু কে হতে পারে! কোথায় যেন কিছু একটা মিসিং হচ্ছে । কিন্তু কি সেটা? গার্লফ্রেন্ড? পারিবারিক সম্পত্তি? নাকি অন্য কিছু?

গার্লফ্রেন্ড নিয়ে কিছু হলে তার বন্ধুদের কেউ না কেউ কিছু না কিছু জানার কথা।আর পত্রিকা পড়ে যতটুকু জানলাম এবং ব্যক্তিগত ভাবে আব্দুর রহমান সাহেব কে যতটা জানি,তাতে পারিবারিক সম্পত্তি তে তো আর কোন অংশীদার নেই। তার বাপ দাদার সকল সম্পদের একমাত্র ওয়ারিশ সে।
তাহলে? আচ্ছা দেখা যাক।পুলিশ কি তদন্ত করে!

 

সেদিনের পর নাজমুল সাহেবের আর কোন ফোন আসলো না। প্রায় তিন মাস পার হয়ে গেছে ইতোমধ্যে । আমিও দৈনন্দিন ব্যস্ততায় অয়নের ব্যাপারে সব ভুলেই গেছিলাম।তার উপর প্রায় মাস খানেক আমেরিকায় সৌমিকের কাছে ছিলাম। তাই সব কিছু প্রায় ভুলেই গেছি।

আমেরিকায় এবার যাবার একটা বিশেষ উদ্দেশ্যও ছিলো। আমার ছেলে এবং তার প্রকৌশলী বন্ধু জিমি ও ডাক্তার বন্ধু রিচার্ড মিলে এমন একটা নতুন প্রযুক্তি আবিস্কার করেছে যা মানুষের শরীরের যে কোন অংশ বা নমুনা থেকে তার ডিএনএ শনাক্ত করতে সক্ষম তাও মাত্র ৯০ সেকেন্ডে। সৌমিক সেই ডিভাইসে ব্যবহৃত সফটওয়্যার তৈরি করেছে।এতে ডিভাইসটিতে নমুনা রাখা মাত্র তা এর ডাটাবেজে সংরক্ষিত যে কোন ডিএনএ এর সাথে ম্যাচ করে কিনা,তাছাড়া ডিএনএর বয়স ইত্যাদি নির্ণয় করতে সক্ষম। এবং ১০০% সঠিক উত্তর প্রদান করতে পারে।
এই নতুন ডিভাইস আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে।ফলে ছেলের সংবর্ধনায় পিতার নিমন্ত্রণ ছিলো ওর্গানাইজারদের পক্ষ থেকে।
তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো বাংলাদেশকে সেখানে হাইলাইট করতে পারা । প্রথম দশজনের মধ্যে বাংলাদেশি আরেকটা ছেলে ছিলো ইমতিয়াজ। তার উপস্থাপিত সফটওয়্যার যে কোন ওয়েবসাইট এর সিকিউরিটি ভেঙে ফেলতে সক্ষম এবং শুধু তাই নয় এটি এমন একটা হ্যাকিং টুল যা যে কোন ওয়েব সাইটের এড্রেস দেয়ার সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয় ভাবে কাজ করতে পারে।

সফটওয়্যার এর নাম "কিংকোবরা"। আর যে ছেলেটা এটাকে প্রেজেন্ট করলো সে তৎক্ষনাৎ বিলগেটসের অনুমতিতে মাইক্রোসফটের ওয়েব সাইট হ্যাক করে ফেলে ভীষণ সারা ফেলে দিয়েছিলো ।
এটা খুবই উন্নতমানের কোডিং হলেও ঝুঁকি বিবেচনায় এবং সাম্ভাব্য অপব্যবহারের জন্য তাকে দশ নাম্বারে রাখা হয় এবং সফটওয়্যার দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলারে ইউএস গভঃমেন্ট সফটওয়্যার টি কিনে নেয় । এবং বলা হলো,যদিও ডেপেলপারের মেধা অসামান্য তাই তাকে সেরা দশে রাখা হয়েছিলো কিন্তু তার এই সফটওয়্যার আন্তর্জাতিক স্বার্থের জন্য হুমকিসরূপ বিবেচনা করে সফটওয়ার টি কিনে নেয়া হলো এবং এটি ব্যবহার করা হবে না বলে জানানো হয়।তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র তাকে চাকরিরও অফার করে ।

তবে যাই হোক তখন মনে হয়েছিলো বাংলাদেশি একটা ছেলে যে দুনিয়া কাঁপিয়ে দিতে পারে এটা বাংলাদেশের জন্য বড় পাওয়া।

কিন্তু অয়নের মার্ডার কেসের ব্যাপারে তিন মাসে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তা আমি কিছুই জানতাম না,এমনকি জানার চেষ্টাও করিনি।হঠাৎ তিন মাস পর বাংলাদেশ ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স থেকে আমার এক সহকর্মী যে কিনা বর্ত্তমান NSI চীপ, সে ফোন করলো ।

ফোন করেই বলল,"ইজ ইট কর্ণেল.মিথ?
আমি বললাম, ইয়েস। হু ইজ ইট?
ওপাশ থেকে প্রতিউত্তর এলো," আমি কারাগার থেকে পিজিওন(Pigeon) (এটা বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত নাম) বলছি । ওর এরকম ছদ্ম নাম ব্যবহার দেখেই সন্দেহ হলো ।
বললাম,"ইয়েস মি.পিজিওন। হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ? "
-"আই নিড টু মিট ইউ ইমেডিয়েটলি। Would you please give me some times? "
ওর গলার স্বরে নার্ভাসনেস কাজ করছে বুঝতে পারছি।
বললাম,"Its okey but When and how? "
মি.পিজিওন ও পাশ থেকে বলে উঠলেন,"I'm on the way to Bogra. রাত আটটা নাগাদ পৌঁছে যাবো।সমস্যা হবে কি? "
আমি বললাম, Its okey. No problem . I'll be very happy .যখন খুশি চলে আসুন।"
-"থ্যাংক ইউ কর্ণেল।"

ফোনটা রেখে দিলো সে।কিন্তু আমি একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম এটা ভেবে যে,হঠাৎ NSI এর আমাকে প্রয়োজন হলো কেন? আর কেনই বা মসিউর আমার সাথে ছদ্ম নামে কথা বলল? বড় কোন সমস্যা? কিন্তু এন এস আই এর প্রতিটি সদস্য এক একটা ট্যালেন্ট। এই অবসর প্রাপ্ত আর্মি অফিসার তাদের জন্য কি করতে পারে।আমি নিজেও সিক্রেট সার্ভিসে ছিলাম আর জানি কতটা চৌকশ অফিসার রা এখানে আসতে পারে!
যাই হোক,
মসিউর না আসা পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না আসলে ব্যাপারটা কি? আর আমাকেই বা প্রয়োজন কেন??





শেষ রাতের খুন ৪

মসিউর আসছে।যে কিনা আমার কলিগ এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলো একসময় । আর্মি থেকে রিটায়ারমেন্টের পর বেশ কয়বার ও আমার বাসায় এসেছে আড্ডা দেয়ার জন্য। আমিও গিয়েছি ওর ওখানে দশ-বারো বার।আমার ওয়াইফের মৃত্যুর পর মসিউরের ওয়াইফ সুস্মিতা আমাকে তার ছোট বোনের সাথে বিয়েও দিতে চেয়েছিলো, কিন্তু আমি করিনি।পরে শুনেছি সুস্মিতা ভাবীর ছোট বোন রিমির কোন এক পুলিশ অফিসারের সাথে বিয়ে হয়েছে। সেটা অনেক আগের কথা।

যাই হোক,
আজ মসিউর যে নেহায়েত আড্ডা মারার জন্য আসছে না তা বুঝতে পারছি।কোন গোপন বিষয়ে আলোচনা করার জন্যেই এবার তার আসা।কিন্তু কি জন্যে? কি সেই গোপন বিষয় হতে পারে?
সারা বিকেল অনেক চিন্তা ভাবনা করেও ঠিক আন্দাজ করে উঠতে পারলাম না।অবশেষে এ বিষয়ে চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে কুদ্দুস মিয়াকে বললাম,বাজার থেকে ভালো দেখে চিংড়ি মাছ নিয়ে আসতে।পেঁয়াজ দিয়ে চিংড়ি মাছের ভুনা মসিউরের খুব প্রিয়।আর আমার তো বটেই!তাই কথা যতই গোপন হোক চিংড়ি মাছের ভুনা খাবার টেবিলে থাকবে না, তা কি করে হয়!

 

কুদ্দুস মিয়াকে বাজারে পাঠিয়ে আমিও হাটাহাটি করার জন্য রাস্তায় বেরুলাম। সন্ধ্যে সাতটা বাজে কেবল কিন্তু রাস্তাঘাটে লোকজন নেই বললেই চলে।দু'একজন আমার মত পৌঢ় সন্ধ্যাকালীন হাটাহাটি করছে কিংবা পাশের চায়ের দোকানে বসে খোশগল্পে মেতে আছে দু একজন।।আমিও এদিক ওদিক ঘুরে চায়ের দোকানটাতে এলাম।যদিও বাহিরে আমি চা খুব কম খাই। কিন্তু আজ কেন জানি বাহিরেই চা খেতে ইচ্ছে হচ্ছে । দোকানের কাছে এগিয়ে যেতেই বেঞ্চে বসা মধ্য বয়সী দু'জন সালাম দিয়ে জায়গা ছেড়ে দিল। আমি মুচকি হেসে বললাম, "ঠিক আছে বসেন আপনারা।"
দোকানদার রহমান মিয়া আমাকে দেখেই বলল,"স্যার, চা দেব? "
আমি বললাম,"দাও দেখি।অনেকদিন তো বাহিরে চা খাওয়া হয়ই না।"
-ঠিক আছে স্যার। বসেন দিচ্ছি।
আমি পাশের ফাঁকা একটা বেঞ্চে বসে পড়লাম। মধ্যবয়সী যে দু'জন খোশগল্পে মেতে ছিল আমি আসায় তারা হঠাৎই তাদের গল্প থামিয়ে দিল।তাদের একজন অবশ্য এ এলাকারই বাসিন্দা।অন্যজন কে ঠিক চিনিনা।হয়ত বেড়াতে এসেছে,বন্ধু কিংবা আত্মীয় হবে আরকি।আমাকে দেখে পরিচিত জন বলল ,"স্যার,ভাল আছেন? "
-"হ্যা, ভাল আছি। আপনারা? "
-"জ্বি স্যার,ভাল আছি। বসেন স্যার।আমরা উঠি।"
-না না উঠবেন কেন! বসেন।
দুজনে আর কিছু না বলে বসে থাকল।
আমিও কিছু না বলে রহমান কে জিজ্ঞাসা বললাম, "কি খবর রহমান, তোমার ব্যবসা বানিজ্য কেমন? "
রহমান ঠোটটা ইষৎ কুঁচকিয়ে বলল,"আর বইলেন না স্যার,ওই মার্ডারডার পর লোকে কেউ এদিকে আসতেই চায় না।আর দেখতিছেন তো,সন্ধ্যা নাই হতিই রাস্তা শুশান হয়া গেছে! "
-হুম।
তারপর চায়ের কাপটা এগিয়ে দিতে দিতে বলল,"আচ্ছা স্যার,ওই ঘটনার কি হইলো? খুনি ধরা পড়িছে?দারোগা সাহেব তো তিন চারবার আইছিল আমার ইখেনে । আইস্যা এমন ভাবে জিজ্ঞাসা করে যেনি মার্ডারডা আমিই করিছি। বলেন তো স্যার,আমি কি করব! "
আমি হেসে বললাম, "তদন্তের প্রয়োজনে আসছিল হয়ত। টেনশন করো না।"
- না স্যার। আমার কিসের টেনশন। আমি তো দোকানদার মাত্র। আচ্ছা স্যার,শুনলেম গোয়েন্দা পুলিশ নাকি নামছে? "

আমি বললাম, " তা তো বলতে পারছি না। আমি তো আর পুলিশের কেউ না। "
-"আপনে পুলিশ না হইলে কি হবি,আপনে তো মিলিটারির লোক।আর পুলিশরা তো আপনেক দেখলিই স্যালুট দেয়।আপনে না জানলি আর কে জানবি?আর জানেন তো স্যার,পুলিশ তো খালি কাধে একটা বন্দুক লিয়ে যায় আর আসে। কাজের কাজ কিচ্ছু হয় না।সিনেমায় দেখেন না স্যার,মারামারি শেষ না হলি পুলিশ আসে না। যদি একটু আগেই আসে তালিই কিন্তু মারামারি হয় না,লাশও পড়ে না। কিন্তু ওরা তো তা করবি না। আসে মারামারির শেষে।"
আমি ওর কথায় না হেসে পারলাম না।হাসতে হাসতে বললাম, "সিনেমা আর বাস্তব একজিনিস না রহমান মিয়া।"
কিন্তু রহমান মিয়া বোধহয় আমার কথা মেনে নিতে পারল না। ভ্রু কুঁচকিয়ে বলল,"কি জানি স্যার! "

চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে কাপটা এগিয়ে দিলাম।পকেট থেকে টাকা বের করে দিতে দিতে বললাম, "রহমান, তোমার চা খেয়ে ভালই লাগলো। আজ উঠি।"
-"আচ্ছা স্যার।আইসেন। "
আমি হু বলে চলে আসলাম। আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম তেমন কেউ নেই।শুধু রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট গুলো ঠায় দাড়িয়ে আছে আর ল্যাম্পের আলোতে ছোট ছোট পোকাগুলো ছুটোছুটি করছে।এ যেন আলোক ছুয়ে মৃত্যুর প্রতিযোগিতা। কার আগে কে মরতে পারে তার প্রতিযোগিতা ।
#
আমি হাটতে হাটতে বাসার গেটের সামনে চলে এসেছি প্রায়। দাড়োয়ান এগিয়ে এসে গেট খুলে দিল।আমি জিজ্ঞাসা করলাম কেউ এসেছে কিনা।
দাড়োয়ান না সূচক মাথা নাড়িয়ে বলল, "না স্যার এখনো কেউ আসে নাই।"
বুঝলাম মসিউর এখনো পৌছে নি।অগত্যা বাসায় ঢুকে ওর পারসোনাল নাম্বারে একটা ফোন দেয়া সমীচীন মনে করে যেই না ভেতরের দিকে পা বাড়িয়েছি এমনি গেটে একটা গাড়ির হর্ণ বাজলো।পেছন ফিরে তাকাতেই দেখি কালো রঙের পাজারো দাড়িয়ে আছে গেটের বাহিরে। দাড়োয়ান গেট খুলে গাড়িটা ভেতরে আসতে দিলো।

হাতে একটা হ্যান্ড ব্যাগ, ফরমাল ড্রেস আপ গাড়ি থেকে নেমেই হাত বাড়িয়ে দিলো মসিউর ,"হ্যালো কর্ণেল,হাউ ডু ইউ ডু? "
আমি হেন্ডশেক করতে করতে বললাম, "হ্যালো, আরে আমি তোমাকেই এক্সপেক্ট করছিলাম । আমি ভাল আছি,তোমার কি অবস্থা? "
-"ইটস নট গুড কর্ণেল।" কিছুটা ফ্যাকাসে মুখ করে বলল।
-"ওকে,ওকে। লেটস হ্যাভ সাম রেষ্ট ফার্স্ট।উই হ্যাভ সো মাচ টাইম টু টক এবাউট দ্যাট। চল, আগে ভিতরে যাই।"
দাড়োয়ানকে বললাম,গাড়ি থেকে লাগেজ বের করতে। মসিউর আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,"আই ডোন্ট হ্যাভ এনি আদার লাগেজ। এটাই নিয়ে যাও।"
হাতের ব্যাগটা দাড়োয়ানকে এগিয়ে দিতে দিতে মসিউর বলল। দাড়োয়ান ওর হ্যান্ড ব্যাগটা নিয়ে আমাদের অনুসরণ করছে।

আমি মসিউরকে সাথে নিয়ে উপরে উঠে এলাম।ওর চেহারায় দীর্ঘ ভ্রমনের ক্লান্তির সুস্পষ্ট ছাপ আর কপালে চিন্তার ভাঁজ। ঘরে ঢুকেই ব্যস্ত তস্ত্র হয়ে মসিউর আমাকে বলল,"কর্ণেল,উই আর ইন ট্রাবল।আই নিড ইউর হেল্প । "
আমি ওকে বললাম, "রিল্যাক্স। কেবল তো এলে,আগে একটু রেস্ট নাও তারপর শুনছি সবকিছু। "
-"না ভাই,রেষ্ট নেয়ার মত অবস্থায় আমি নেই। ইটস আ ভেরী সিরিয়াস ম্যাটার টু ডিসকাস উইথ ইউ।"
আমি বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে।সব শুনছি।তার আগে তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো।ইউ নিড সাম রেষ্ট।
মসিউর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,"ওয়েল। পরেই আলাপ করছি কিন্তু রিমেম্বার ইটস আ ভেরী ইম্পর্টেন্ট ইস্যু। "
আমি মুচকি হেসে ওকে বললাম, "আই নো দ্যাট। ইম্পর্টেন্ট না হলে তুমি এভাবে আসতে না। গো এন্ড টেক আ বাথ দ্যান উই উইল হ্যাভ সাম ডিনার।তারপর তোমার সব কিছু শুনব। "
এতক্ষন মসিউর দাঁড়িয়েই ছিল।এরই মধ্যে কুদ্দুস মিয়া বাজার থেকে চলে এসেছে। আমি কুদ্দুস মিয়াকে ডেকে মসিউরের ঘর দেখিয়ে দিতে বললাম।
কুদ্দুস মসিউরকে সাথে নিয়ে উপরে গেল।।

#
বহুদিন পর মশিউরকে পেয়ে ভালই লাগছে। মিলিটারিতে থাকার সময়কার হাজারো স্মৃতি আছে দুজনের।সেই ট্রেইনিং এর সময় ওর সাথে প্রথম পরিচয়।তারপর দীর্ঘ ত্রিশ বছর বলতে গেলে একই সাথে চাকুরী করেছি।হেসেছি,খেলেছি,সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিয়েছি।সত্যি বলতে কি, মিলিটারি জীবনে আমার প্রকৃত বন্ধু বলি আর ভাই বলি সে একজনঈ ছিল,মশিউর।একবার তো একটা টিম অপারেশনে আমার জীবনও বাঁচিয়েছিল ও। হয়ত সেদিন মশিউর না থাকলে আমি পৃথিবীটা আর দেখতে পেতাম না।হয়ত সেদিনই আমার জীবন প্রদীপ নিভে যেত মাত্র একটা গুলিতে ! সত্যিই ওর কাছে আমি প্রচন্ড ঋণী।
যাই হোক, অত্যন্ত মেধাবী, বিচক্ষণ আর চৌকশ অফিসার হিসেবে সকল ডিপার্টমেন্ট এর কাছে ও সুপরিচিত ছিল ।আর ওর যোগ্যতা, মেধা আর দক্ষতার জন্যই আজ সে দেশের সবচেয়ে দায়িত্বশীল পজিশনে আছে। আর সেখানেও তার অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু হঠাৎঈ মশিউরের এমনকি হলো যে,আমার মত একজন রিটায়ার্ড শখের গোয়েন্দার শরনাপন্ন হতে হলো!!
যাই হোক,কিছুক্ষণ পর মসিউর ফ্রেশ হয়ে নীচে এলো।ওর চেহারায় সতেজতা ফিরে এলেও চোখে মুখে চিন্তার সুস্পষ্ট ছাপ এখনো আছে।
-এসো মশিউর, কেমন ফিল করছ?
-মাচ বেটার, কর্ণেল।
পাশের সোফায় বসতে বসতে মশিউর উত্তর দিলো।
-"তারপর, ভাবী কেমন আছেন? আর ছেলে মেয়ের কি খবর বল তো। কতদিন দেখিনা ওদের। " পরিবেশটাকে হালকা করে মশিউরের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মনটাকে ডাইভার্ট করার চেষ্টা করলাম।কিন্তু কোন লাভ হলো না বোধহয়।
-"হ্যা কর্ণেল সবাই ভাল আছে।কিন্তু আমিই চিন্তায় আছি।হয়ত তুমি আমার বিষয়টাকে সিরিয়াসলি নাও নি এখনো । কিন্তু আমি জানি, এটা তুমিই করতে পারবে।আর তুমি ছাড়া অন্য কাউকে ভরসা করতে আমি পারিনা। তাই তোমার সাথে ডিসকাস করতে ঢাকা থেকে এখানে ছুটে আসা।"
খানিকটা হতাশা আর খানিকটা আশা নিয়ে মশিউর বলে চলল।
-"ওকে,আই হ্যাভ টেকেন সিরিয়াসলি। এন্ড আই নো,ইউ হ্যাভ ভেরী সিরিয়াস সামথিং টু টক এবাউট। কিন্তু আমি কি তোমার কোন কাজে আসতে পারব! বুঝই তো,বয়স হয়ে গেছে।"
- কর্ণেল, ইটস আ টপ সিক্রেট । আর এটা শুধুমাত্র আমার ব্যক্তিগত কোন বিষয় না,ইটস এবাউট আওয়ার কান্ট্রি । এন্ড ইটস সো মাচ কনফিডেনসিয়াল । আমার মনে হয়, এ বিষয়ে এই মুহুর্তে আলোচনা আর না করি। খুব গোপনে এ বিষয়ে কথা বলা দরকার।"

-কি! দেশের বিষয়ে?
আমি আশ্চর্য না হয়ে পারলাম না। আমি জানতাম মশিউর কোন সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা বলতে আসছে কিন্তু সেটার সাথে যে দেশ জড়িত তা আন্দাজ করতে পারিনি।বিশেষ করে আমি

রাত প্রায় দশটা বাজে।
ডাইনিং টেবলে রাতের খাবার রেডি করে কুদ্দুস মিয়া আমাদের ডাকতে এলো।
-" স্যার, টেবিলে খাবার দিছি।"
-ও আচ্ছা যাও। আসছি।



(চলবে...)




বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬

  • ১১:২৭:০০ AM
একজনের মস্তিস্ক থেকে অন্যজনের মস্তিস্কে স্মৃতি/ডেটা ট্রান্সফার, এটা সম্ভব!
---------------------------
যদি একশ জনকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে,সবচেয়ে কঠিন কাজ কোনটি, কায়িক শ্রম নাকি পড়াশোনা?
তবে আমার বিশ্বাস একশত জনই বলবে,"পড়ালেখা"।
কারণ, আপনি আপনার যে কোন কাজ অন্যকে দ্বারা করিয়ে নিতে পারেন।কিন্তু পড়াশোনা?
ইটস ইম্পসিবল।
আপনার পড়াশোনা অন্য কেউ করে দিতে পারবে না।আপনারটা আপনাকেই করতে হবে। এটা সবাই জানে ।
আর এই বিষয়টা নিয়েই এখন আমার যত মাথা ব্যাথা। আচ্ছা,এমন কি হতে পারে না যে,একজন পড়ালেখা করে তার মেমরি তে যা সঞ্চয় করেছে তা অন্য জনকে ট্রান্সফার করে দিতে পারবে!! Like computer's data transferring.
হলে বেশ ভালই হত বটে। আমার মনে হয় দূর ভবিষ্যতে এটাও করা সম্ভব হবে।আর সম্ভব হবে এ জন্যই যে-
ধরুন, আমাদের মস্তিস্কের একটা অংশ যা স্মৃতি সংরক্ষণ করে তা কম্পিউটারের একটা হার্ডডিস্ক/ মাইক্রো চিপের মত।অসংখ্য নিউরন দ্বারা গঠিত এই অংশ। যা কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক এর মতই কাজ করে।আমরা আমাদের ইনপুট অর্গানিজম চোখ,কান,নাক,মুখ(জিহ্বা  যা স্বাদ মনে গ্রহন করে) দেখি,শুনি,গন্ধ নেই, স্বাদ নেই কিংবা পড়ি তাই এটা সংরক্ষণ করে। তারপর বছরের পর বছর তা স্মৃতিতে ধরে রাখে। আবার মস্তিষ্ক কম্পিউটার হার্ডডিস্ক এর মতই ক্রাশ করে। আর তখন মানুষ তার স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলে।কিংবা বহু পুরোনো স্মৃতি ধীরে ধীরে মলিন হয়ে যায়। যদি মানুষের মস্তিস্ক এবং কম্পিউটারের মেমরির মধ্যে এতই সামঞ্জস্য তবে কম্পিউটার থেকে যেমন ডেটা ট্রান্সফার করা যায়,মস্তিস্ক থেকে কেন নয়!!
হয়ত আমার কথাগুলো পাগলের প্রলাপ মনে হতে পারে।আর হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারন ইতোপূর্বেও যারা স্থান-কালের উর্ধ্বে কিছু বলেছে তাদের কথা গুলোকেও প্রলাপ বলে হেয় করা হয়েছে। কিন্তু যখন তার কথা বা তত্ত্ব প্রমাণিত হয়েছে তখন তারই ফলাফল আমরা সাদরে গ্রহন করেছি,আর করবোও তাই।
আমার বিশ্বাস দূর ভবিষ্যতে একজনের স্মৃতি অন্যজনকে ট্রান্সফার করা সম্ভবপর হবে।শুধু তাই নয়,এর দ্বারা আমরা বহু পুরোনো তথ্য পূর্বপুরুষের কাছ থেকে নিয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে রাখতে পারব।
নীলকান্ত®
Writer information NILKANTO